আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪ হাজারের কম মানুষের দেশ! 

ছবি: টুইটার

ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন হয়তো দেখেছেন আপনি মনে মনে। প্রতিভার কমতি কিংবা সুযোগের অভাবে তা সত্যি হয়নি। হতাশ হবেন না। নামের পাশে যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার খেতাব লাগাতে চান, চলে যেতে পারেন ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে। যে দেশের জনসংখ্যাই সর্বসাকুল্যে ৩৬৬২ জন, সে দেশে ক্রিকেটার হতে চাওয়া লোকই আর কজন থাকবেন!

মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এমন দেশ কি আসলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে থাকে? হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গত সপ্তাহে পা রেখেছে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ। দেশটি প্রথমবারের মতো খেলেছে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। কোস্টারিকার বিরুদ্ধে ছয় ম্যাচের সিরিজে প্রথম জয়ও পেয়ে গেছে তারা।

যদি ক্রিকেটের নিয়মিত অনুসারী কেউ একজন তাদের সেসব খেলা দেখতে উপস্থিত হতেন, তাহলে কোস্টারিকা ও ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের লড়াই আদতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কিনা, এই দ্বিধায় পড়ে যেতে পারতেন। খেলোয়াড়দের শরীর ঠিকমতো নড়ছে না। কাছে গেলে বুড়িয়ে যাওয়া চামড়া স্পষ্ট হবে। শরীর দেখলে আর যাই হোক, ক্রিকেটার মনে হবে না। শখের বশে ক্লাব ক্রিকেট চলছে ধরে নিবেন যে কেউ।

একটা ম্যাচে তো দুই দল নেমেছিল ৩৫ বছরের বড় ১৮ জন খেলোয়াড় নিয়ে। এমনকি ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের দলে একটি ম্যাচে নয়জন ক্রিকেটারের বয়স ছিল চল্লিশের বেশি। বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বুড়ো দল সেটি ছিল নিঃসন্দেহেই। ফকল্যান্ড যে ১৫ জনের স্কোয়াড নিয়ে গিয়েছিল কোস্টারিকায়, তাদের মধ্যে ১১ জনের বয়স চল্লিশের বেশি। এমনকি পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সের চারজনকে নিয়েও মাঠে নামার নজির রয়েছে ফকল্যান্ডের। 

তাদের মধ্যে দুইজন বয়স বিবেচনায় দুটি বিশ্বরেকর্ড গড়ে ফেলেছেন। সবচেয়ে বেশি বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার রেকর্ড যেদিন গড়েছেন অ্যান্ড্রু ব্রাউনলি, সেদিন তার বয়স ছিল ৬২ বছর ১৪৭ দিন! সবচেয়ে বেশি বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করা ক্রিকেটারও এই ফকল্যান্ডেরই। অ্যালান ডসন এই রেকর্ডের মালিক বনেছেন ৫৬ বছর ৩৪২ দিন বয়স নিয়ে।

কোস্টারিকার বিপক্ষে সিরিজে আরেকজন অধিনায়ক ছিলেন সিসিল অ্যালেক্সান্ডার। যাকে আবার কিছুদিন আগে ইউটিউবে এক সাক্ষাৎকারে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সচিব হিসেবে। একটা মাঠের বন্দোবস্ত হয়েছে, একটি পিচ রয়েছে সেখানে— তিনি শোনাচ্ছিলেন সেই গল্প। ২০২৫ সালে এসে ৪৪ বছর বয়সে তিনিও ব্যাট-বল হাতে নেমে গিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পেতে।

আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা সর্বশেষ দেশ হচ্ছে ফকল্যান্ড। ক্রিকেটবিশ্বে সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশও এটি। মালভিনাস নামেও পরিচিত এই দেশের মোট আয়তন ১২ হাজার ১৭৩ বর্গ কিলোমিটার। দক্ষিণ আমেরিকার যে দেশে পেঙ্গুইনের সংখ্যাই দশ লাখের বেশি, সেখানে ক্রিকেট পৌঁছে গেল কীভাবে, সেটি এক বিস্ময়। ইংল্যান্ডের সঙ্গে সংযোগকে এক্ষেত্রে মেলানো যায়। ব্রিটিশ ওভারসিজ টেরিটরি ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ, স্বায়ত্তশাসিত হলেও প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি দেখভাল করে ব্রিটিশ সরকার।

২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলে (আইসিসি) সহযোগী সদস্য দেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে সহযোগী দেশের মধ্যকার সকল টি-টোয়েন্টি ম্যাচকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া শুরু করেছে আইসিসি। তবে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে ফকল্যান্ডারদের। ২০২৫ সালের মার্চে এসে তাদের সেই অপেক্ষা ফুরিয়েছে।

কিন্তু অপেক্ষায় কজনই আর ছিলেন! নিশ্চয়ই হাতেগোনা কয়েকজন। তাতে অবশ্য কী! ৪ হাজারের কম মানুষের এক দেশ তো ঢুকে গেল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আঙ্গিনায়।

Comments

The Daily Star  | English

Audits expose hidden bad loans at 6 Islamic banks

The reviews, initiated in January with backing from the ADB, expose deep-seated financial mismanagement at those banks

9h ago