রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান প্রয়োজন

উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গারা খাদ্য সহায়তা গ্রহণ করছেন। ছবি: এএফপি (৬ মার্চ, ২০২৫)
উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গারা খাদ্য সহায়তা গ্রহণ করছেন। ছবি: এএফপি (৬ মার্চ, ২০২৫)

যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক দাতাদের তহবিল সংকোচনের মাঝে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় লড়াই করছে বাংলাদেশ। এমন সময় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফরের গুরুত্ব কোনোভাবেই ছোট করে দেখা যায় না।

এই সফর বাংলাদেশের জন্য আরও তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ গত বছর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দেশটি একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের মূল লক্ষ্য বাংলাদেশের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা। যার ফলে আমরা আশা করি তার এই সফর এই সংকটের প্রতি গোটা বিশ্বের মনোযোগ আবারও ফিরিয়ে আনবে এবং এই দেশে বসবাসরত দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে আন্তর্জাতিক দাতাদের উদ্দীপ্ত করবে।

জাতিসংঘের মহাসচিবের আজ শুক্রবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন এবং তাদের সঙ্গে ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। গুতেরেসের এই উদ্যোগ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি তার সহমর্মিতা ও সমর্থনের প্রতিফলন। এক মাস আগে তিনি প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠিয়ে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন এবং এই সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রতি জাতিসংঘের সংহতি পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন, যা আমাদের উৎসাহিত করেছে। তাই আমরা আশা করি, তিনি বিশ্বকে একটি শক্তিশালী বার্তা দেবেন যে, বৈশ্বিক সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশ এই বিশাল দায়িত্ব একা বহন করতে পারবে না।

উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গারা খাদ্য সহায়তা গ্রহণ করছেন। ছবি: এএফপি (৬ মার্চ, ২০২৫)
উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গারা খাদ্য সহায়তা গ্রহণ করছেন। ছবি: এএফপি (৬ মার্চ, ২০২৫)

গত কয়েক বছরে বিশ্বের নানা সংকট রোহিঙ্গা ইস্যুকে ছাপিয়ে গেছে, যার ফলে শরণার্থীদের জন্য তহবিল উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এতে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত এই জনগোষ্ঠীর জন্য মৌলিক সেবার যোগান দেওয়াই বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক তহবিল সংকোচন এই সংকটকে আরও গভীর করেছে, যার প্রভাব ইতোমধ্যে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের শিবিরগুলোতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এর পাশাপাশি, মিয়ানমারে নতুন করে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর গত বছরের আগস্ট থেকে নতুন করে আরও প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে, যা ইতোমধ্যে এখানে বসবাসরত ১২ লাখ শরণার্থীর সংখ্যা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সম্প্রতি রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (আরএমএমআরইউ) এক গবেষণায় শিবিরগুলোর দুরবস্থার চিত্র উঠে এসেছে। ওই গবেষণা প্রতিবেদনে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি, মিয়ানমারের চলমান সংঘাত ও অস্থিতিশীলতা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে।

এই প্রেক্ষাপটে, আমরা আশা করি গুতেরেসের সফর রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধানের পথ সুগম করবে, যাতে তারা নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে। একই সঙ্গে, আমরা তার প্রতি আহ্বান জানাবো যেন তিনি নিজে এবং তার দপ্তর রোহিঙ্গাদের জন্য ক্রমশ কমে আসা মানবিক সহায়তা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

3h ago