অবৈধ ইটভাটা: চলছে ভাঙা-গড়ার খেলা, ইট বিক্রি বন্ধের হুমকি

প্রশাসন একদিকে যেমন অভিযান চালিয়ে সারা দেশে অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দিচ্ছে, অন্যদিকে আবার নতুন করে তৈরিও করা হচ্ছে। এমনকি, এসব অভিযানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ইট বিক্রি বন্ধ রাখার হুমকিও দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

মঙ্গলবার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত লালমনিরহাটের পাটগ্রামে এক্সকাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে কৃষি জমির ওপর অবৈধভাবে গড়ে ওঠা 'পিজিএমসি ব্রিকস' নামে একটি ইটভাটা।

কয়েক বছর আগে গড়ে ওঠা এই ইটভাটার বিরুদ্ধে বহুবার অভিযোগ করেছেন কৃষক। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তখন কেবল জরিমানা করা হলেও এদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সেটি ভেঙে দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিল্লুর রহমান।

জিল্লুর রহমান জানান, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ধারা চার ও চার (ক) লঙ্ঘন করায় অবৈধ ইটভাটাটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী, সব অবৈধ ইটভাটা অপসারণ করা হবে।

এসব অবৈধ ইটভাটা পুনরায় চালুর জন্য আন্দোলন শুরু করেছেন ভাটা মালিকরা, দিচ্ছেন ইট বিক্রি বন্ধের হুমকিও।

শরীয়তপুরে লাইসেন্সহীন ইটভাটা চালু ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা বন্ধ করতে বিক্ষোভ করেছেন 'ইটভাটা মালিক ও শ্রমিক'রা।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান এবং সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। তারা ইটভাটার লাইসেন্স নবায়ন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র চেয়েছেন।

বিকেলে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী সমিতির সভাপতি ফিরোজ হায়দার খান সাত দফা দাবি জানিয়ে বলেন, তাদের এসব দাবি না মানলে আগামী ২৫ মার্চ থেকে পরবর্তী ১৫ দিন সারা দেশে ইট বিক্রি বন্ধ রাখা হবে।

তাদের এই আল্টিমেটামের পরও তাদের দাবি মানা না হলে আগামী বছর থেকে দেশের সব ইটভাটায় উৎপাদন বন্ধ রাখার হুমকি দেন তারা।

এছাড়া, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংগঠনটি প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছে।

ফিরোজ হায়দার খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই শিল্পে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। সব মিলিয়ে প্রায় দুই কোটি মানুষের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয় এই খাত থেকে। ইটভাটার মালিকদের প্রায় আট হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ রয়েছে। ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেলে এই ঋণের টাকা পরিশোধ করবে কীভাবে? সেই সঙ্গে সরকারও হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে।'

শরীয়তপুরের ইটভাটার মালিকরাও তুলেছেন প্রায় অভিন্ন দাবি। তারাও শরীয়তপুরের লাইসেন্সবিহীন ইটভাটাগুলো সচল করতে এবং নবায়নকৃত ইটভাটার লাইসেন্সসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে দেওয়ার দাবি জানান।

শরীয়তপুর ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল খান দাবি করেন, 'আমরা ইট পোড়াতে শতভাগ পরিবেশবান্ধব জিকজ্যাক পদ্ধতি ব্যবহার করছি এবং জেলা প্রশাসক আমাদের পুরস্কৃতও করেছেন। সরকার এখন ব্লক ইট (মেশিনে তৈরি ইট) তৈরির নির্দেশনা দিয়েছে এবং আমরা এটিকে স্বাগত জানাই।'

'কিন্তু আমরা কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ইটভাটা করেছি। প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, আমাদের অন্তত চার-পাঁচ বছর সময় দেওয়া হোক, যাতে এই ঋণ শোধ করতে পারি।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের ভাটা যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত ২০ হাজার শ্রমিক না খেয়ে মারা যাবে।'

অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া ইটভাটাগুলোও পুনরায় চালু করা হচ্ছে। বরিশাল বিভাগে দেখা গেছে এমনই চিত্র। যদিও পরিবেশ অধিদপ্তরের ভাষ্য, 'লোকবলের অভাবে' তারা যথাযথভাবে তদারকি করতে পারছে না।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় অফিস সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে গত ১০ মার্চ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৫৭ ইটভাটা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে জরিমানা আদায় করা হয়েছে দেড় কোটি টাকার বেশি।

অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বিভাগের ঝালকাঠি, বরিশাল ও ভোলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া ইটভাটাগুলোর অন্তত অর্ধেকেরও বেশি আবারও ইট প্রস্তুত শুরু করেছে।

অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক মো. মুজাহিদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বিষয়ে আমরা তথ্য পেয়েছি, কিন্তু বাজেট ও লোকবলের অভাব আমাদের বড় বাধা। এসব ইটভাটা একবার ভেঙে ফেলা হলেও নিয়মিত তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না।'

তিনি জানান, নদী তীরবর্তী প্রতিটি ইটভাটা ভাঙতে অন্তত দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। বিপুল সংখ্যক ইটভাটা ভাঙার বাজেট তারা পান না।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় অফিস সূত্র জানায়, এই বিভাগে মোট ৪৯৬টি ইটভাটার মধ্যে ১৯১টিই অবৈধ। এর মধ্যে ১০৭টিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৫৭টি ভেঙে ফেলা হয়েছিল।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার কলমী ইউনিয়নে স্কুলের পাশে ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা একটি ইটভাটায় সম্প্রতি ইট পোড়াতে দেখা গেছে। অথচ গত ১৮ ডিসেম্বর এই ভাটার চিমনি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।

পরিবেশ অধিদপ্তর ভোলার উপপরিচালক মো. তোতা মিয়া বলেন, 'বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। গুড়িয়ে দেওয়ার পর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আবারও তারা ইট পোড়াতে শুরু করেছে।'

Comments

The Daily Star  | English
govt employees punishment rule

Govt employees can now be punished for infractions within 14 working days

Law ministry issues ordinance amending the Public Service Act, 2018

2h ago