রেমিট্যান্স আয়

সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব আমিরাত

রেমিট্যান্স, প্রবাসী আয়, কোটা সংস্কার আন্দোলন, কারফিউ, মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ,
ছবি: সংগৃহীত

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের প্রধান উৎস ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরব। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে—এ সময়ে শীর্ষ ৩০ দেশ থেকে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১৫ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার।

গত ডিসেম্বরে এই রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ বেড়ে গেলেও জানুয়ারিতে তা কমতে শুরু করে। সম্ভবত উৎসব-পরবর্তী মন্দা ও অর্থনৈতিক সমন্বয়ের কারণে এমনটি হয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছে দুই দশমিক নয় বিলিয়ন ডলার। গত বছরের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৫৬৫ দশমিক শূন্য চার মিলিয়ন ডলার। জানুয়ারিতে তা কমে হয় ৪০৭ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলার।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্য থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল এক দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। গত ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্য থেকে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৪৮ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ডলার। গত জানুয়ারিতে তা বেড়ে হয় ২৭৩ দশমিক চার মিলিয়ন ডলার।

একই সময়ে সৌদি আরব থেকে এসেছে এক দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। গত ডিসেম্বর এই দেশ থেকে এসেছে ২৯০ মিলিয়ন ডলার, যা জানুয়ারিতে কমে যায় ৩০ শতাংশ।

রেমিট্যান্স আয়ের দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে থাকা আরব আমিরাত থেকে এসেছে দুই দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। এই দেশ থেকে গত ডিসেম্বরে এসেছিল ৩৭০ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন ডলার, যা জানুয়ারিতে কমে হয় ২৪৯ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন ডলার।

শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে এসেছিল ৮৭৬ দশমিক ১৪ মিলিয়ন ডলার ও কুয়েত থেকে ৮৬৭ দশমিক ১৪ মিলিয়ন ডলার। রেমিট্যান্স আয়ের প্রেক্ষাপটে ইতালি, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

গত জানুয়ারিতে ইতালি থেকে এসেছিল ১৩১ মিলিয়ন ডলার। গত সাত মাসের মধ্যে তা সর্বোচ্চ।

দক্ষিণ আফ্রিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে মোট রেমিট্যান্স এসেছে যথাক্রমে ১৭৫ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ডলার, ৯৯ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলার ও ৯৩ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলার।

ঐতিহাসিকভাবে সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশ। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ডিশটিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাম্প্রতিক বছরগুলোয় রেমিট্যান্স আয়ের দিক থেকে আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্র প্রধান উৎস হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ডলার ঘাটতির কারণে ব্যাংকগুলো প্রবাসীদের কাছ থেকে বেশি দামে ডলার কিনে তা আরও বেশি দামে অন্য ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে।'

এই সময়ে বিশেষ করে দুবাই এ ধরনের কাজের মূল কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে বলে জানান তিনি।

'হঠাৎ সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স আসা কমে গেছে। অন্যদিকে, আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে। রেমিট্যান্সের উৎসের এই পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার।'

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী থাকায় এই দেশগুলো বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে থেকে গেছে।'

তার মতে, 'ঈদ, পূজা ও শীতকালে বিয়ের ধুম পড়লে তখন অভিবাসীরা দেশে টাকা পাঠান বলে সেই সময় রেমিট্যান্স আসা বেড়ে যায়।'

রেমিট্যান্স প্রবণতা

বাংলাদেশের অর্থনীতি রেমিট্যান্সের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত কয়েকটি দেশ মূল ভূমিকা পালন করে।

২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবণতা, অভিবাসন নীতি ও শ্রমবাজারের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে দেশের রেমিট্যান্স আয়ের উৎসে পরিবর্তন দেখা গেছে।

আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র ধারাবাহিকভাবে প্রধান রেমিট্যান্স উৎস হিসেবে রয়ে গেছে। বছরের পর বছর ধরে সেসব দেশ থেকে রেমিট্যান্স আসা বাড়ছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স এসেছে দুই দশমিক শূন্য নয় বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা তিন দশমিক শূন্য এক বিলিয়ন ডলার হয়।

সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দুই দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা তিন দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার হয়।

২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স আসা বেড়ে দুই দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

কয়েকটি দেশ থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। আবার কয়েকটি দেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা কমবেশি হয়েছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে কুয়েত থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল এক দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেড়ে হয় এক দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় এক দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার ধরে রেখেছে।

যুক্তরাজ্য ও ইতালিসহ ইউরোপীয় দেশগুলো রেমিট্যান্সের শক্তিশালী উৎস হিসেবে আছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যুক্তরাজ্য থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৮০৮ দশমিক দুই মিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে হয় দুই দশমিক শূন্য আট বিলিয়ন ডলার।

একই সময়ে ইতালি থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, ৫১০ দশমিক শূন্য আট মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে এক দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার।

রেমিট্যান্সের উদীয়মান ও ক্রমহ্রাসমান উৎস

দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া থেকে রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আয় হয়েছে ৮০ দশমিক সাত মিলিয়ন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ১১৬ দশমিক চার মিলিয়ন ডলার।

জাপান থেকে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে। অস্ট্রেলিয়া থেকেও রেমিট্যান্স প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী।

বিপরীতে, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে রেমিট্যান্স আয় কমবেশি হচ্ছে। কাতার থেকে প্রথমে রেমিট্যান্স বাড়লেও পরে তা কমে যায়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ওমান থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৮৯৭ দশমিক দুই মিলিয়ন ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা কমে হয় ৭৬৬ দশমিক তিন মিলিয়ন ডলার।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী এই বিষয়ে বলেন, 'করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে বৈশ্বিক মুদ্রাবাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে ওঠায় রেমিট্যান্স এগ্রিগেটরের সংখ্যা বেড়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'কাতার বা ওমানের মানি চেঞ্জাররা বাংলাদেশে ডলার পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রেমিট্যান্স এগ্রিগেটরের চ্যানেল ব্যবহার করে থাকতে পারে। এর ফলে কাতার ও ওমান থেকে রেমিট্যান্স কমেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেড়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
gold price hike in Bangladesh

Why gold costs more in Bangladesh than in India, Dubai

According to market data, gold now sells for $1,414 per bhori in Bangladesh, compared to $1,189 in India, $1,137 in Dubai

2h ago