রোমানদের ‘উজ্জ্বল আগামীর আশা’ তুলে ধরল তিক্ত বাস্তবতা

Ruman Sana & Diya Siddique

'থাকা ও খাওয়ার বাইরে জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকে আমি স্রেফ ৩ হাজার টাকা মাসিক ভাতা পাই। বিয়ে করার পর তারা আমাকে বাড়ি ভাড়া বাবদ আরও বাড়তি ২ হাজার টাকা দেয়। জাতীয় দলে খেলে কোন ভবিষ্যৎ নেই।'- গত মার্চে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপে আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন রোমান সানা। কেন আর জাতীয় দলে খেলতে চান না সেই ব্যাখ্যা করেছিলেন।

রোমান আর্চারিতে সুযোগ-সুবিধা এবং আর্থিক সচ্ছলতার অভাবের কথা তুলে ধরে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে তিনি নিজের জন্য কোনো ভবিষ্যৎ দেখছেন না।

বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশন (বিএএফ) তার কথা গুরুত্বের সঙ্গে নেয় কি না তা পরিষ্কার নয়। প্রতিক্রিয়ায় ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজিবউদ্দিন আহমেদ চপল বলেছিলেন রুমানের মানসিক সমস্যা রয়েছে এবং তিনি তাকে 'ভালো একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাবেন।'

আমরা যদি দ্রুত সেই দৃশ্য থেকে চলতি জানুয়ারিতে আসি। দেখতে পাই রোমান আর বাংলাদেশে নেই। তিনি তার স্ত্রী শীর্ষ নারী আর্চার দিয়া সিদ্দিকীকে নিয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। এই দম্পতি এখন কাঙ্ক্ষিত সেই 'উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ' খুঁজছেন যা তাদের মাতৃভূমি তাদের দিতে পারেনি।

বৃহস্পতিবার নিউ জার্সি থেকে টেলিফোনে রোমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২৯ ডিসেম্বর আমরা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের খুঁজে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছি।' তারা জানান ২০২১ সালে পাওয়া পাঁচ বছরের ভিসাতেই তারা সেখানে চলে গেছেন।

রোমান ও দিয়া দুজনেই অলিম্পিয়ান। ২০২১ সালে তারা আর্চারি বিশ্বকাপে রৌপ্য পদক জিতেছিলেন - যা এই পর্যায়ে দেশের সর্বোচ্চ অর্জন – এর বাইরেও তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পক্ষে অসংখ্য পদক জিতেছেন।

যদিও সাম্প্রতিক সময়ে রোমানের পারফরম্যান্স নিম্নমুখী ছিল, দিয়ার পারফরম্যান্স অবশ্য উন্নতির পথে ছিল। ২০ বছর বয়সী আর্চার আর্চারিতে আরও অনেক কিছু দিতে পারতেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে দিয়া বাংলাদেশের খেলাধুলার ইতিহাসে আরেকটি 'কী হতো যদি' হিসেবেই থেকে যাবেন।

রোমান ও দিয়ার দেশত্যাগ কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত অক্টোবরে রোমানের অনুপস্থিতিতে জাতীয় দলে আসা শীর্ষস্থানীয় পুরুষ আর্চার হাকিম আহমেদ রুবেল আর্চারি ছেড়ে নিউইয়র্ক চলে যান, ফেডারেশনকেও কোন কিছু জানাননি। সেখানে আরেকজন প্রাক্তন আর্চার আশীম কুমারের সঙ্গে যোগ দেন, যিনি খেলাধুলা ছেড়ে রাইড-শেয়ারিং পরিষেবায় গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

খেলাধুলো ছেড়ে বিদেশে চলে যাওয়া শুধুমাত্র আর্চারিতেই ঘটে না বা এটি কোনো নতুন ঘটনাও নয়, কারণ এটি দীর্ঘদিন ধরেই ঘটে আসছে।

কিছু খেলোয়াড় চুপচাপ চলে গেছেন, যেমন আর্চাররা, আবার কেউ কেউ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার সময় দল থেকে লাপাত্তা হয়ে গেছেন। যেমন ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমসে দৌড়বিদ তৌহিদুল ইসলাম পালিয়ে যান। যা দেশকে বড় ধরনের লজ্জায় ফেলে দেয়।

বাংলাদেশে খেলোয়াড়দের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা নেই, এটি সম্পূর্ণ সত্য নয়। শীর্ষস্থানীয় পুরুষ ক্রিকেটার ও ফুটবলাররা প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন করেন এবং মধ্য-স্তরের খেলোয়াড়রাও সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারেন। নারী ক্রিকেটার ও ফুটবলাররা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম আয় করেন তবে অন্যান্য ডিসিপ্লিনের তুলনায় তারা ভালো অবস্থায় আছেন।

আর্চারি ডিসপ্লিনটি গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের উত্থান ঘটেছে। সুতরাং, যখন এই শাখার সর্বকালের সেরা তারকাদের মনে হয় বিদেশে গিয়ে নতুন করে শুরু করা ভালো, তখন এটি দেশের খেলাধুলার পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে।

কয়েক সপ্তাহ আগে দেশের খেলাধুলার ভক্তরা ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের ফুটবলার হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের হয়ের খেলবেন বলে উদযাপন করেছিলেন।

হামজার প্রতি সমস্ত শ্রদ্ধা রেখে বলতে হয়, তিনি কখনো রোমানের মতো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত তারকা ছিলেন না, যাকে ২০২১ সালে বিশ্ব আর্চারি ফেডারেশন বিশ্বের সেরা তরুণ আর্চার হিসাবে ঘোষণা করেছিল।

কিন্তু হামজার আগমনের উল্লাস রোমান ও অন্যদের হারিয়ে ফেলার আক্ষেপকে মিইয়ে দেবে। এবং সম্ভবত কয়েক বছর পরে ক্রীড়া পরিবার  ভাবতে শুরু করবে, আমাদের আর্চারি কেন পিছিয়ে পড়ল?

Comments

The Daily Star  | English

Dengue cases see sharp rise in early July

Over 1,160 hospitalised in first 3 days, total cases cross 11,000

10h ago