জামায়াত নেতাদের ইঙ্গিত করে রিজভীর প্রশ্ন—একাত্তরে কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন?

মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা
সিলেটের হুমায়ুন রশীদ চত্বরে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছবি: স্টার

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভূমিকা জানতে চেয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, 'আপনারা কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন? কোন সেক্টর কমান্ডারের অধীনে যুদ্ধ করেছেন?'

সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের হুমায়ুন রশীদ চত্বরে 'আমরা বিএনপি পরিবার' আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন রুহুল কবির রিজভী।

রিজভী বলেন, 'একটি রাজনৈতিক দল বলেছে দেশপ্রেমিক তারা এবং সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী দেশপ্রেমিক নিঃসন্দেহে। কারণ তাদের পূর্বসূরিরা এই বাংলাদেশ নির্মাণে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। তার অন্যতম মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানেও সেনাবাহিনী উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে।'

এ পর্যায়ে জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, 'আমি ইসলামপন্থী সেই রাজনৈতিক দলকে বলতে চাই, একাত্তরে আপনাদের রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিলো? কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন, কোন সেক্টর কমান্ডারের আন্ডারে যুদ্ধ করেছেন? বাংলাদেশে কেউ দেশপ্রেমিক নেই, শুধু একটি রাজনৈতিক দল দেশপ্রেমিক– এই ধরণের বিভ্রান্তি তৈরি করলে মানুষ হাসবে, মানুষ হাসি ছাড়া আর কিছু দেবে না।'

রিজভী বলেন, 'এই জাতির ঘাড়ে একটি জগদ্দল পাথর চেপে বসেছিল। শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতাকে নিরাপদ করার জন্য, কণ্টকমুক্ত থাকার জন্য, যে স্বাধীনতার জন্য ৩০ লক্ষ মানুষ অকাতরে জীবন দিয়েছে, দুই লক্ষ নারী নির্যাতিত হয়েছে, সেই স্বাধীনতাকে কলঙ্কিত করেছে।'

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, 'সিলেটের কৃতি সন্তান ইলিয়াস আলী আজ নেই কেন? শেখ হাসিনার জন্য। কারণ তিনি দেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। টিপাইমুখ বাঁধ অভিমুখে লংমার্চ করেছিলেন। এজন্য তাকে নিরুদ্দেশ করে দেওয়া হয়েছে। কত যুবদল-ছাত্রদলের ছেলে ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন, গুমের শিকার হয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। এই ভয়ংকর মানবতাহীন কাজ করেছেন সাড়ে ১৫ বছর শেখ হাসিনা।'

তিনি আরও বলেন, 'সাড়ে ১৫ বছর গণতান্ত্রিক শক্তির আন্দোলনের পটভূমিতে জুলাই এবং আগস্টে ছাত্র-জনতারা নেমে এসেছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এখন আমরা খবরের কাগজে দেখতে পারছি জুলাই-আগস্টের হত্যার বিচার এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। ড. ইউনূসের প্রতি আমাদের সবার শ্রদ্ধা আছে, কিন্তু এই সরকার তো সর্বজনীন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের পক্ষের সরকার।'

রিজভী বলেন, 'শুধু জুলাই-আগস্টে যারা নিহত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, শুধু সেইসব অপরাধের বিচার হবে? ইলিয়াস আলীর বিচার হবে না? চৌধুরী আলমের বিচার হবে না? সাড়ে ১৫ বছর যারা ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন তাদের বিচার করবেন না? যারা ক্রসফায়ার দিয়েছেন, শীতলক্ষ্যা নদীতে সাতটি লাশ ভাসিয়ে দিয়েছেন, সেই সমস্ত দুর্বৃত্ত র‌্যাবের অফিসারদের বিচার হবে না? যে অপরাধ করেছে শেখ হাসিনা, যে কসাইয়ের ভূমিকা পালন করেছে, তার বিচার হবে না?'

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আত্মদানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, 'তাদের যেমন বিচার হবে, তেমনি গণতন্ত্রকে উদ্ধারের জন্য যারা অকাতরে জীবন দিয়েছেন, নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন, তাদের কেন বিচার হবে না? হওয়া উচিত। এইভাবে বিভাজন রেখা টানলে তা দুঃখজনক।'

বিদ্যালয়ের সংশোধিক পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে কোন অধ্যায় না থাকায় রিজভী অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, 'ইতিহাসের বইয়ে তারা প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এখানে এই জাতির বিবেকবানদের জন্য যে অধ্যায় করা হয়েছে, তাতে আমরা দ্বিমত করছি না। সেখানে শেরে বাংলা, মাওলানা ভাসানী, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে মুক্তিযুদ্ধের অধ্যায় রাখা হলো না কেন?'

রিজভী আরও বলেন, 'জিয়াউর রহমান তো শুধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে থেমে যাননি। যুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের অধ্যায় থাকবে না কেন? প্রবাসী সরকার হয়েছিল। সেটা থাকবে। সেটার সাথে মুক্তিযুদ্ধের একটা অধ্যায় থাকতে হবে। যতটুকু হয়েছে তার জন্য ধন্যবাদ জানাইভ কিন্তু অসম্পূর্ণ থাকবে কেন?'

রিজভী বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ একটি বড় ঘটনা। শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধিকারের আন্দোলন করেছেন। তাতে স্বাধীনতার জন্য একটি মাঠ প্রস্তুত হয়েছে, কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাযুদ্ধে কোন বিশেষ ঘোষণা বা প্রস্তুতির কথা বলেননি। সেই আহ্বান তার নেই। প্রকৃত সত্য হচ্ছে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন জিয়াউর রহমান এবং যুদ্ধ হয়েছে নয় মাস। সেই অধ্যায়টি রাখা হয়নি।'

যুব এশিয়া কাপ বিজয়ী ক্রিকেটার ইকবাল হোসেন ইমনের পরিবারকে শুভেচ্ছা উপহার প্রদান উপলক্ষে হুমায়ুন রশীদ চত্বরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English
US airstrike on Iran

Strikes on Iran mark Trump's biggest, and riskiest, foreign policy gamble

The dramatic US strike, including the targeting of Iran’s most heavily fortified nuclear installation deep underground, marks the biggest foreign policy gamble of Trump’s two presidencies and one fraught with risks and unknowns.

1h ago