আজারবাইজানের উড়োজাহাজটি কেন কাজাখস্তানে গিয়ে বিধ্বস্ত হলো?

বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটি। ছবি: রয়টার্স

আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে রাশিয়ার গ্রোজনি শহরের উদ্দেশে রওয়া দেওয়া একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটি বুধবার কাজাখস্তানে ভূপাতিত হয়। কাস্পিয়ান সাগরের উপকূলে হওয়া এ দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন।

ফ্লাইট পর্যবেক্ষক ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, উড়োজাহাজটি বাকু থেকে রওনা দিয়ে তার নির্ধারিত পথেই চলছিল। কিন্তু মাঝপথ পার হওয়ার পর এর জিপিএস বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রায় দুই ঘণ্টা পর কাস্পিয়ান সাগরের অপর পাশে আবার দেখা মেলে উড়োজাহাজটির।

উড়োজাহাজটির যাত্রাপথের দিকে তাকালে প্রথমেই যে প্রশ্নটি মাথায় আসে তা হচ্ছে, কেন এতদূরে গিয়ে, কাস্পিয়ানের অপর প্রান্তে বিধ্বস্ত হলো উড়োজাহাজটি?

ফ্লাইটরাডার২৪-এর মতে, যাত্রীবাহী ফ্লাইটের বাকু থেকে গ্রোজনি পৌঁছাতে গড়ে এক ঘণ্টা নয় মিনিট সময় লাগে। বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির বাকু থেকে রওনা দিয়ে কাজাখস্তানের আকতাওয়ে পৌঁছাতে সময় লেগেছে দুই ঘণ্টা ৩৯ মিনিট।

আজারবাইজান এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বুধবার সকালে বাকু থেকে রওনা দিয়ে গ্রোজনির কাছে গিয়ে ঘন কুয়াশার মুখোমুখি হলে উড়োজাহাজটি গতিপথ বদলাতে বাধ্য হয়।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা একজন যাত্রী এক রুশ টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, পাইলট ঘন কুয়াশার মাঝেই গ্রোজনিতে দুবার অবতরণের চেষ্টা করেছিলেন। তৃতীয়বার অবতরণের চেষ্টা করলে 'একটি বিস্ফোরণের শব্দ হয়। উড়োজাহাজটির বহিরাবরণ উড়ে যেতে শুরু করে।'

ছবি: ফ্লাইটরাডার২৪ থেকে নেওয়া

এরপর উড়োজাহাজটি মোড় ঘুরিয়ে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দূরে কাজাখস্তানের আকতাও বিমানবন্দরের দিকে রওনা হয়। রানওয়ের তিন কিলোমিটারের মধ্যে এসে এটি দ্রুতগতিতে মাটিতে আছড়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে উড়োজাহাজে আগুন ধরে যায়।

আজারবাইজান এয়ারলাইনস ও রুশ বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, কুয়াশার মাঝে একপাল পাখির মুখোমুখি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল উড়োজাহাজটি।

কিন্তু এই দাবি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে অনেকেই।

উড়োজাহাজটি চলাচল বিশেষজ্ঞ রিচার্ড আবুলাফিয়া বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, সাধারণত পাখির আঘাতের পর নিকটতম বিমানবন্দরে অবতরণের চেষ্টা করা হয়।

'এক্ষেত্রে আপনি উড়োজাহাজের নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন, কিন্তু আপনার এতটা পথচ্যুত হওয়ার কথা না,' যোগ করেন তিনি।

আরেক বিশেষজ্ঞ জাস্টিন ক্রাম্প বিবিসিকে বলেন, প্লেনের ভেতরে ও বাইরে ক্ষয়ক্ষতির ধরন দেখে মনে হচ্ছে রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে ছোড়া কোনো ক্ষেপণাস্ত্র এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

হামলার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা

গ্রোজনি রুশ প্রদেশ চেচনিয়ার রাজধানী। সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দুর্ঘটনার আগে আগে চেচনিয়াসহ দক্ষিণ রাশিয়ার অঞ্চলগুলোতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন।

সাধারণত ড্রোন হামলার সময় একটি অঞ্চলের সব বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুর্ঘটনার দিন গ্রোজনির সবচেয়ে কাছের রুশ বিমানবন্দরটিও বন্ধ ছিল।

ইউক্রেনের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ডিফেন্স কাউন্সিলের সদস্য আন্দ্রেই কভালেঙ্কো সিএনএনকে বলেন, 'রাশিয়ার উচিত ছিল গ্রোজনির আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু তারা সেটা করেনি। এ কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।'

রুশ ও আজারবাইজানের কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে একইরকম ভাষ্য দিলেও কাজাখস্তানের পক্ষ থেকে এখনো দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে কোনো দাবি তোলা হয়নি।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল কাজাখস্তানের সিনেট-প্রধান আশিমবায়েভ মাউলেন বলেছেন, দুর্ঘটনার কারণ এখনো জানা যায়নি।

'আজারবাইজান, রাশিয়া বা কাজাখস্তান—তিন দেশের কেউই তথ্য গোপন করতে চাইবে না। সব তথ্য জনসাধারণের সামনে উন্মুক্ত করা হবে,' বলেন তিনি।

ছবি: রয়টার্স

আজারবাইজান এয়ারলাইনসের সুর বদল

প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার জন্য পাখির আঘাতকে দায়ী করলেও আজ শুক্রবার আজারবাইজান এয়ারলাইনস রাশিয়ার সাতটি শহরে তাদের উড়োজাহাজ পরিবহন স্থগিত করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

উড়োজাহাজটি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পর এবং ফ্লাইট চলাচলের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায়' এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনাকবলিত উড়োজাহাজটির বেশিরভাগ যাত্রীই আজারবাইজানের (৪২)। তবে সেখানে রাশিয়া (১৬), কাজাখস্তান (৬) ও কিরগিজস্তানের (৩) নাগরিকও ছিলেন।

আজারবাইজান, কাজাখস্তান ও রাশিয়া—তিন দেশই এই দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করছে।

Comments

The Daily Star  | English

A rush to heal exposed banking wounds

In October, a video on social media showed the manager of Social Islami Bank’s Agargaon branch breaking down in tears after enduring harsh verbal abuse from frustrated customers seeking to withdraw cash.

1h ago