পলিথিনের বর্জ্যে ঢাকা জামাল খান খাল

জামাল খান খালে জমে আছে পলিথিনের বর্জ্য। ছবি: অরুণ বিকাশ দে

অপচনশীল প্লাস্টিক আর পলিথিন বর্জ্যে ঢেকে গেছে চট্টগ্রামের জামাল খান খাল। স্থানীয়দের অভিযোগ, খালের পাড়ের উঁচু আবাসিক ভবনগুলোর বাসিন্দারা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে গৃহস্থালি আবর্জনা জানালা দিয়ে খালে ফেলে দেন। এতে খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, একক-ব্যবহারের প্লাস্টিকের উৎপাদন এবং বিপণন আইনে নিষিদ্ধ হলেও তা কার্যকর করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন সক্রিয় নয়।

জামাল খান এলাকার বাসিন্দা উৎপল বড়ুয়া বলেন, 'সরকার ঘোষণা করেছে পহেলা নভেম্বর থেকে কাঁচা বাজারে পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ হবে। কিন্তু এই ঘোষণা বাস্তবায়নে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সক্রিয় ভূমিকা নেই। মানুষ কাঁচাবাজার থেকে পলিথিন ব্যাগে শাক-সবজি ও মাছ কিনে আনে এবং সেই ব্যাগসহ সবজি ও মাছের বর্জ্য খালে ফেলে দেয়।'

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার বারবার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া না দেওয়ায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে সরকার ২০০২ সালে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বাজারজাতকরণ এবং বিক্রয় নিষিদ্ধ করে একটি আইন প্রণয়ন করে।

ছবি: অরুণ বিকাশ দে

তবে জামাল খাল সংলগ্ন বিভিন্ন কাঁচাবাজার বাজার ঘুরে দেখা যায়, একক ব্যবহারের পলিথিন ব্যাগে ক্রেতাদের বিভিন্ন পণ্য দিচ্ছেন বিক্রেতারা।

জানতে চাইলে আসকার দীঘির পাড়ের অস্থায়ী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. ইসমাইল বলেন, তার কাছে সবজি প্যাক করার জন্য পলিথিন ব্যাগের বিকল্প নেই। গ্রাহকরা ব্যাগ আনে না এবং তারা চায় আমরাই সবজি প্যাক করে দিই। এক্ষেত্রে আমাদের কী করার আছে?' 

কেন কাঁচাবাজারে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার চলছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অধ্যাপক সেকানদার খান বলেন, 'শুধু আইন করে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। বাজারে পলিথিন ব্যাগের পর্যাপ্ত বিকল্প থাকতে হবে।'

'বর্তমানে বিকল্প অনেক ব্যাগ থাকলেও পলিথিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকছে না। সরকারকে উদ্যোক্তাদের মূলধন এবং নীতি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে বিকল্পগুলোকে উত্সাহিত করতে হবে।'

যোগাযোগ করা হলে, চুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিত সম্প্রতি বলেছেন, 'যদিও পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ কার্যকর থাকলেও এই আইনের কোনো প্রয়োগ দেখি না। মুদি দোকান ও কাঁচা বাজারে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করা হয়।'

২০২২ সালে চুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, চট্টগ্রামে প্রতিদিন তিন হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয় যার মধ্যে ২৪৯ টন (৮.৩ শতাংশ) প্লাস্টিক এবং পলিথিন বর্জ্য।

অধ্যাপক স্বপনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা দিনে ১০৯ টন প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য সংগ্রহ করতে পারেন। বাকি ১৪০ টন এই ধরনের অসংশোধিত বর্জ্য খাল-নালায় পড়ে পানির অবাধ প্রবাহে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

স্থানীয়রা জানায়, জামাল খান খাল অনেক দিন পরিষ্কার না করায় খালে পলিথিনের বর্জ্য জমে আছে।

বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা বলেন, 'আমরা পলিথিন ও অন্যান্য বর্জ্য অপসারণের জন্য খালে কাজ করছি। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে তাই আমরা সব ক্ষেত্রে এক সময়ে সব খালে কাজ করতে পারছি না।'

 

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

13h ago