নগরে এলো ঝিলিমিলি বেলুন

ঝিলিমিলি বেলুন
ছবি: শেখ সিরাজুম রশীদ

আজকাল পথে বের হলেই যে জিনিসটায় চোখ আটকে যাচ্ছে তা হলো রং-বেরঙের স্বচ্ছ বেলুনের ঝাঁক। শুধু কি পথে? ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম খুললেও কারো না কারো হাতে এক গোছা বেলুনের দেখা মিলছে। রিলস থেকে শুরু করে ইউটিউব শর্টস, কোথায় নেই এই বেলুন!

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝিলিমিলি বেলুন হিসেবে পরিচিত পাওয়া বেলুনগুলো দেখতে দারুণ। সাধারণত স্বচ্ছ বেলুনের ওপর নানা ধরনের উজ্জ্বল রঙের নকশা করা থাকে। কোনোটায় থাকে ইমোটিকন, কোনোটায় রঙিন হৃদয়ের প্রতীক, কোনটিতে ফুলের বাগান, তো কোনটিতে প্রিয় কোনো কার্টুন চরিত্রের মুখ।

সাধারণ গ্যাস বেলুনের চেয়ে দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় দ্রুতই সবার দৃষ্টি কেড়েছে নতুন এই বেলুন।

ঝিলিমিলি বেলুন
ছবি: স্টার/ প্রবীর দাশ

শিশুদের তো পছন্দ হচ্ছেই, দেদারসে কিনছেন কিশোরী-তরুণীরা। প্রিয়জনের সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়েছেন এমন অনেকের হাতেও দেখা যাচ্ছে ঝিলিমিলি বেলুন।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের সামনে বেলুন বিক্রি করছিলেন মো. ইমন। তার কাছে জানতে চাইলাম এই বেলুনের নাম আসলেই ঝিলিমিলি বেলুন কি না! ইমনও বললেন, 'সবাই তো ঝিলিমিলি বেলুন বলেই ডাকে!'

আমার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই ৫-৬টি বেলুন বিক্রি করে ফেললেন ইমন। প্রতিটির দাম ৭০ থেকে ১০০ টাকা। সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হওয়া শিশুরাই বাবা-মায়ের কাছে বেলুনের আবদার করছে বলে দেখতে পেলাম।

দিনে কতটি বেলুন বিক্রি করেন জানতে চাইলে ইমন বলেন, অন্তত ১০০টি। দিন শেষে দুই হাজার টাকার বেশি লাভ থাকে বলেও জানালেন।

ইমন জানালেন, এসব বেলুন চীন থেকে আমদানি হয়। একজন মহাজনের অধীনে কাজ করেন তারা। মহাজনই বেলুন কিনে আনেন। এরপর সবাই মিলে গ্যাস ভরে বিক্রি করতে বের হন।

সাধারণত শিশুমেলা, সংসদ ভবন, টোকিও স্কয়ার, ঢাকা শিশু হাসপাতালের সামনের রাস্তার মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে বেলুন বিক্রি করেন ইমন ও তার মতো অনেকে।

ছোট্ট সৌরভ এসেছিল মায়ের সঙ্গে ডাক্তার দেখাতে। গেট দিয়ে বের হতেই বেলুন হাতে ইমনকে দেখে গালভর্তি করে হাসি দিলো। তারপর মায়ের কাছে আবদার করল বেলুনের। ইমন যখন সৌরভের হাতে বেলুন বেঁধে দিচ্ছিলেন, তখন শিশুটির মুখ দেখে মনে হচ্ছিল বহুদিনের আরাধ্য কিছু বুঝি ঝুলিতে এসেছে। বারবার হাত নিচে এনে বেলুনটা ছুঁয়ে দিচ্ছিল সে।

ঝিলিমিলি বেলুন
ছবি: সংগৃহীত

কেবল শিশুরাই নয়, তরুণীরাও সমান উৎসাহ নিয়ে বেলনু কিনছেন এবং বেলুন হাতে নিয়ে ছবি তুলছেন বলে জানালেন ইমন।

কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে পড়ুয়া ফারজানা সাথীর সঙ্গে। হাতে ঝিলিমিলি বেলুন নিয়ে বন্ধুর ক্যামেরায় পোজ দিচ্ছিলেন তিনি।

ফারজানা বলেন, 'এই বেলুনগুলো এত ভালো লাগে যে আমার বন্ধুর কাছে আবদার করেছি কিনে দিতে। কেনার পর ছবিও তুলে দিচ্ছে। ছবি ভালো হলে ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার দেবো ঠিক করেছি।'

মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ারের সামনে হাতভর্তি বেলুন নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওয়াসিম মিয়া। মার্কেটে প্রবেশ করা শিশুদের দেখে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। তার কাছ থেকে বাড়িতে থাকা দুই ছেলেমেয়ের জন্য ঝিলিমিলি বেলুন কিনলেন আদাবরের লিয়াকত হোসেন।

তিনি জানালেন, তার নয় বছরের মেয়ে আর চার বছরের ছেলে এই বেলুনের বায়না করছে কয়েকদিন ধরেই। এতদিন কিনে দেননি। এখন মেয়েটার জ্বর। কিছুই খাচ্ছে না। তাই মেয়ের মন ভালো করতে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত বেলুন।

ঢাকায় যেসব স্থানে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে, সেখানে গেলেই এখন পাওয়া যাচ্ছে রং-বেরঙের ঝিলিমিলি বেলুন। অনেকেই শাড়ি পরে, হাতভর্তি বেলুন নিয়ে ছবি তুলছেন, রিলস বানাচ্ছেন। আর সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখাও হচ্ছে বহুবার।

ঝিলিমিলি এই বেলুন যেন নগরের নতুন অতিথি, নতুন আকর্ষণ। যার প্রেমে পড়েছে শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষ। ঝকঝকে রোদের মধ্যে যখন বেলুনের গোছা হাতে কোনো বিক্রেতা হেঁটে যান, তখন তা দেখতেও ভালো লাগে। দূর থেকেও বোঝা যায় এর সৌন্দর্য।

মনে হয় যেন আলোয় উদ্ভাসিত এক তোড়া রঙিন ফুল বা উড়ে যাওয়া এক ঝাঁক প্রজাপতি নিয়ে ছুটছে কেউ।

গ্যাসভর্তি হওয়ার কারণে হাতে বেঁধে রাখতে হয় এই ঝিলিমিলি বেলুন। কারণ একটু অসাবধান হলেই ছুটে চলে যাবে আকাশে, তখন মাটিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

 

Comments

The Daily Star  | English

SWISS Banks: Funds linked to Bangladesh hit 3-year high

Bangladeshi-linked funds parked in Swiss banks surged to 589.5 million Swiss francs, or about Tk 8,800 crore, in 2024, their highest level in three years, according to data released by the Swiss National Bank (SNB) yesterday.

9h ago