‘দালাল প্রথায় আটকে আছে জনপ্রশাসন’

জনপ্রশাসন বিষয়ক আলোচনায় বক্তারা। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, 'আমাদের জনপ্রশাসনে ঘাটতি আছে। সার্বিকভাবে পুরো সিস্টেম ব্রোকার সিস্টেমে (দালাল প্রথায়) আটকে আছে। জুলাই-আগস্টের পর প্রকাশ্য দুর্নীতি কমে গেছে, সেই সঙ্গে কমেছে কাজের গতিও।'

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) উদ্যোগে জনপ্রশাসন বিষয়ক আলোচনায় তিনি বলেন, 'একটি পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার ওপর বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে। এর জন্য বড় আঙ্গিকে সংস্কার প্রয়োজন।'

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, 'সংস্কার শব্দটি প্রচলিত হয়ে গেছে। এই শব্দটির আরও বিশ্লেষণ দরকার। এর ভেতর অনেক দিক আছে। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হলে কার্যত জনপ্রশাসনের শক্ত ভিত্তি তৈরি হবে। স্থানীয় সরকারকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।'

তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক দল ও আমলারা স্থানীয় সরকারকে চাকর প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেছে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো আর স্বায়ত্তশাসিত থাকছে না। এটি এক শ্রেণীর আমলাদের পদায়ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর পদ ধীরে ধীরে প্রশাসন ক্যাডারের অধীনে চলে গেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনতা না দিলে অর্থনীতির চাকা ঘুরবে না। এসব কাজের দায়িত্ব মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। কিন্তু এসব জায়গা দলীয়করণ করা হয়েছে এবং তারা দলীয় চাপ তৈরির অন্যতম বাহন হিসেবে কাজ করে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারে যুক্ত করতে হবে।'

অনুষ্ঠানে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'ব্রিটিশদের আমলাতন্ত্র সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল তাদের রাজত্ব এখানে স্থায়ী করা। তাদের শাসন-শোষণ পরিচালনার হাতিয়ার হিসেবে প্রশাসনকে ব্যবহার করেছিল। তাদের উত্তরাধিকার এখনো আমরা দেখতে পাই। আমাদের দেশে যে উদ্দেশ্য নিয়ে জনপ্রশাসন তৈরি করা হয়েছে, তা এখনো পূরণ করতে পারেনি। জনপ্রশাসন জনগণের জন্য কাজ করবে। ২০০৭-০৮ এ যদি সংস্কার হতো, তাহলে আজকে আমাদের এই অবস্থা হতো না।'

'জেলা পর্যায়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সফরে গেলে যেভাবে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়, তা খুবই অর্থহীন কাজ' উল্লেখ করে চট্টগ্রাম সফরের অভিজ্ঞতা বলেন বদিউল আলম।

তিনি জানান, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, 'আপনারা এসব প্রটোকলে ব্যস্ত থাকলে কাজ (মানুষকে সেবা) কখন করেন?' কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে উত্তর পেয়েছেন, প্রটোকল দেওয়াই তাদের কাজ।

বদিউল আলম বলেন, 'আমি মনে করি (প্রটোকলের নামে) এসব হচ্ছে অকাজ। কর্মকর্তাদের এসব ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে জনগণের জন্য কাজে মনোযোগ দেওয়া উচিত। তরুণরা যে জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, তার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে পারলেই সংস্কারের উদ্যোগ সার্থক হবে।'

'সচিবালয়ে কর্মকর্তারা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে যে সোচ্চার হচ্ছেন, এগুলো জনগণের স্বার্থে নাকি তাদের ব্যক্তি স্বার্থে?'—প্রশ্ন তুলে বদিউল আলম বলেন, 'মনে হচ্ছে ২০০৭-০৮ সালের সিনড্রোমে ফিরে যাচ্ছি। তখন সংস্কারের অনেক মুলা আমাদের সামনে উপস্থাপন হয়েছিল। পরে "সংস্কার" ইস্যুটা গালি হিসেবে অভিহিত হয়েছে।'

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, 'বাংলাদেশ এক ধরণের অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। অন্যভাবে বললে, সম্ভাবনার মধ্যেও আছে। গত ১৫ বছর দেশ কীভাবে চলেছে তার প্রভাব দেশের প্রায় সবাই উপলব্ধি করেছেন। গুম-খুন নিত্যদিনকার ঘটনা ছিল। দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে, মূল্যবোধ ধ্বংস হয়েছে, ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা ছিল না। নানা ধরণের কালো আইন করে কথা বলার স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। ক্ষমতাবান ছাড়া কারোই মানবাধিকার ছিল না, পুরো দেশটা ছিল ক্ষমতাসীনদের। এটা শুধু ১৫ বছরের না, গত ৫৩ বছরে কম-বেশি এমন অবস্থাই ছিল।'

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রেখেছেন সিজিএসর চেয়ার মুনিরা খান, সাবেক সচিব ইব্রাহিম খান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, সাবেক সচিব এ কে এম আব্দুল আওয়াল মজুমদার, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাবেক সচিব সুলতানা আফরোজ, বাংলাদেশ রাইফেলসের সাবেক মহাপরিদর্শক মেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমান, নৈতিক সমাজ বাংলাদেশের সংগঠক মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন, বিজিএমইএয়ের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম)  চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক মাহবুব কামাল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তাহমিদ আল মুদাসসির, লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ইফফাহ আসসারিরাহ প্রমুখ।

Comments

The Daily Star  | English
EC free to hold fair polls

1994 attack on train carrying Hasina: HC acquits all 47 accused

The HC scrapped the trial court judgement, which sentenced nine people to death, life imprisonment to 25, and 10 years' jail sentence to 13 accused

31m ago