প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নকল সিগারেট ব্যবসার টাকা নেন নওফেল

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল

অবৈধভাবে সিগারেট উৎপাদন ও নকল বিদেশি সিগারেট বিপণনে জড়িত একটি কোম্পানি থেকে অন্তত তিন কোটি টাকা বখরা নিয়েছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে, বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো নামের ওই কোম্পানিটির কারখানার জমির অংশীদারদের একজন তিনি।

নওফেলকে দেওয়া তিন কোটি টাকার চেক জমির মালিকানার নথি সংগ্রহ করেছে দ্য ডেইলি স্টার।

প্রায় ছয় মাস আগেই ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে অবৈধ তামাক ব্যবসার সঙ্গে নওফেলের যোগসূত্র উঠে আসে। গত ১ জুন 'কাউন্সিলরের অবৈধ সিগারেট বাণিজ্য' শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে দ্য ডেইলি স্টার। তবে ওই প্রতিবেদনে নওফেলের নাম উল্লেখ করা হয়নি, কারণ তিনি ২০২০ সালে সেই কোম্পানিতে থাকা তার শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছিলেন।

প্রতিবেদন প্রকাশের পাঁচ মাস পরে নওফেলের নিজ শহর চট্টগ্রামে অবস্থিত তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির অনুকূলে তিন কোটি টাকার চেক পান।

গত ১ জুন ওই প্রতিবেদন প্রকাশের আগে, নওফেল ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে দাবি করেন যে তিনি ওই অবৈধ তামাক কোম্পানিতে থাকা তার শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন এবং তিনি কোম্পানি থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পাননি।

এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) এর তথ্য বলছে বাংলাদেশে নকল সিগারেট তৈরি করে এমন ২০টি কোম্পানি রয়েছে এবং নওফেলসহ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর আবদুস সবুর লিটন এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিটনের তামাক ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন নওফেল। লাইসেন্স ছিল লিটনের নামে। ডেইলি স্টার ও এনবিআরের অনুসন্ধানে দেখা যায়, লিটনের কারখানায় ইজি ও অরিসের মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের নকল সিগারেট তৈরি করা হতো।

এই ব্যবসা থেকে যে আয় হতো তার একটি অংশ প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়।

নওফেল প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। তার মা হাসিনা মহিউদ্দিন এবং ছোট ভাই বোরহানুল হাসান চৌধুরী পরিচালনা পর্ষদের সদস্য।

এ বিষয়ে নওফেলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এনবিআরের তদন্ত প্রধান মোহাম্মদ ফখরুল আলম গত মাসের শেষের দিকে ১১১ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নকল সিগারেট তৈরিতে জড়িত ২০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো এবং তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো মিথ্যা ঘোষণায় কাঁচামাল আমদানি করে এবং কিশোরগঞ্জ ও চট্টগ্রামের চকরিয়ায় তাদের কারখানায় নকল সিগারেট তৈরি করে। তাদের তৈরি নকল সিগারেট দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়।

লিটন ও তার ভাই আব্দুল মান্নান খোকন তারা গ্রুপের মালিক।

কোম্পানিটির নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ৪৮.৪৮ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হওয়ার তথ্য দেখানো হলেও এর প্রকৃত অংক ৮০২.১৭ কোটি টাকা বলে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল প্রমাণ পেয়েছে।

তদন্তকারীরা প্রতিষ্ঠানটির নয়টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। তারা বলছেন, কর ফাঁকি দিতেই বিক্রির পরিমাণ কম দেখানো হয়েছে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, 'কয়েকজন ব্যক্তি নকল সিগারেটের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা নকল কাগজপত্র তৈরি করে তাদের কার্যক্রম আড়াল করে।'

(সংক্ষেপিত, বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে)

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

2h ago