শুধু প্রবাসীরাই ক্রেতা, বাড়েনি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের রপ্তানি বাজার

প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহলে/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

বাংলাদেশ থেকে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি হচ্ছে। তবে বাজার খুব বেশি বিকশিত হতে পারেনি। এখনো এসব পণ্যের মূল ক্রেতা শুধু বাংলাদেশি প্রবাসীরাই।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, খাদ্যাভাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রপ্তানি বাজারে বৈচিত্র্য আনা ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। তারা এই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) তথ্য অনুসারে, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের বড় বাজার আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, কানাডা, ওমান, কাতার ও নেদারল্যান্ডস।

সেসব দেশে প্রবাসী বাংলাদেশি, ভারতীয় ও পাকিস্তানিরা মশলা, শুকনো খাবার, স্ন্যাকস, মুড়ি, ফলের রস, নুডলস, পরোটা, ক্যান্ডি, গুঁড়া মশলা ও সরিষার তেলের মতো পণ্য কিনে থাকেন।

সংগঠনটির ভাষ্য, গত পাঁচ অর্থবছরে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানির ৭৫ শতাংশই ১৩ দেশে সীমাবদ্ধ।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১০০ দেশে ৩৪১ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন ডলারের খাদ্যপণ্য রপ্তানি করেছে। আগের অর্থবছরে ছিল ৩৮৩ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার।

এই তালিকায় আছে—আরব আমিরাত (২৫ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ), সৌদি আরব (১৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ), যুক্তরাজ্য (ছয় দশমিক ৮৮ শতাংশ), যুক্তরাষ্ট্র (ছয় দশমিক ৩৬ শতাংশ) ও মালয়েশিয়া (চার দশমিক ৩৪ শতাংশ)।

দেশের অন্যতম শীর্ষ খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ১৪০-১৪৫ দেশে মসলা, জুস, মুড়ি, স্ন্যাকস ও কনফেকশনারি পণ্য রপ্তানি করে।

প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস মৃধা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের রপ্তানি করা পণ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ ছোট দোকানে বিক্রি হয়। বাকি ২০ শতাংশ সুপারস্টোরে বিক্রি হয়।'

'বাংলাদেশ সম্প্রতি সুগন্ধি চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। চিনি ও আটার দাম বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।'

তিনি ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামে কম পরিবহন খরচ ও একই খাদ্যাভাসের কারণে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় বাজার বাড়ানোর বিষয়ে আশাবাদী।

ইলিয়াস মৃধা আরও বলেন, 'আমরা সেদিকে মনোযোগ দিচ্ছি। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে বাজার বাড়ানোর বিষয়ে ইতিবাচক উন্নতি হবে বলে আশা করছি।'

বম্বে সুইটস অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও কর্পোরেট বিষয়ক মহাব্যবস্থাপক খুরশিদ আহমেদ ফরহাদ দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজার সম্প্রসারণে সক্ষমতা ও আন্তরিকতার প্রসঙ্গ তুলে ধরে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশ এমন কোনো পণ্য উত্পাদন করে না যা বিশ্বে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। অথবা এমন কোনো পণ্য নেই যা বাংলাদেশকে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতার সুবিধা দিতে পারে।'

তিনি বলেন, 'ইউরোপের একটি সুপার মার্কেটে এক বছর আগে ঘুরে আসার পর এখন যদি যান তাহলে দেখবেন প্যাকেজিংয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে।'

'ওটা দেখে শিখে সেই প্রযুক্তি বাংলাদেশে এনে পণ্য বানিয়ে ওই বাজারে পাঠাতে পাঠাতে দেখা যাবে ওই প্যাকেজিং পুরোনো হয়ে গেছে। ওরা এসব ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে।'

বোম্বে সুইটস ৪১ দেশে ৫০ ধরনের খাদ্যপণ্য পাঠায়। রপ্তানির মূল পণ্য চিপস। মধ্যপ্রাচ্যের বাজারের জন্য আছে 'বোম্বে মিক্স' বা 'চানাচুর'।

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার পারভেজ সাইফুল ইসলাম তীব্র প্রতিযোগিতামূলক খাদ্য বাজার সম্পর্কে একই মত দেন। তিনি জানান, তাদের প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে আছে মশলা, সরিষার তেল, চানাচুর ও স্ন্যাকস।

তিনি বলেন, 'এসব পণ্য বাংলাদেশিদের মধ্যে জনপ্রিয় হলেও অন্যদের মধ্যে চাহিদা কম।'

'একসময় আমাদের মোট রপ্তানির ২৩ থেকে ২৫ শতাংশ ছিল সুগন্ধি চাল। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা থাকায় ব্যবসায় প্রভাব পড়েছে।'

সরকারকে সুগন্ধি চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'এটি দামি পণ্য হওয়ায় জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়।'

এসিআই ফুডস অ্যান্ড কমোডিটি ব্র্যান্ডসের প্রধান ব্যবসায়ী ফারিয়া ইয়াসমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বাজেটে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এটি পণ্যের দাম ও মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।'

প্রণোদনার অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান তিনি।

বাপার সাধারণ সম্পাদক ইকতাদুল হকের মতে, নতুন বাজার তৈরি হলেও সেগুলো এখনো শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য হয়ে উঠতে পারেনি। রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্যের বাজার বাড়াতে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands disclosure of power sector contracts

Disclose AL govt’s power, energy deals

The BNP yesterday demanded public disclosure of all the power and energy sector agreements made by the ousted Awami League government.

8h ago