কুষ্টিয়ায় সেতু থেকে ফেলে চা দোকানিকে হত্যার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় এক চা দোকানিকে জিকে খালের ব্রিজের ওপর থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা রাতের এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।
সেদিন ভেড়ামারা থানার এসআই সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যদের একটি দল চাঁদগাম ইউনিয়নের চণ্ডিপুরে অভিযানে যায়। সেখানে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পের চার নম্বর ব্রিজের পাশের চায়ের দোকানদার রফিকুল ইসলাম দুদুকে ব্রিজের ওপর ডেকে আনেন পুলিশ সদস্যরা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পুলিশ সদস্যরা রফিকুলকে মারধর করলে শুরু হয় ধ্বস্তাধস্তি। একপর্যায়ে এক পুলিশ সদস্য ধাক্কা দিয়ে রফিকুলকে ব্রিজ থেকে ক্যানালে ফেলে দেন। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। পরে তিন পুলিশ সদস্যকে এলাকাবাসী পাশেই আরেকটি দোকানে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
চাঁদগাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাফিজ তপন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ব্রিজের পাশেই আমার অফিস। এশার নামাজের কিছুক্ষণ আগে সেখানে গিয়ে বসি। এ সময় অন্যান্য মেম্বাররাও ছিলেন। মিনিট দশেক পরেই খবর আসে দুদুকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমি ঘটনাস্থলে যেতে চাইলে মেম্বাররা বললেন আপনি বসেন আমরা দেখছি। পাঁচ মিনিট পরেই ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়। লোকজন চেঁচামেচি করে বলছিল, দুদুকে মেরে ফেলেছে পুলিশ। অফিস থেকে বের হয়ে কিছুদূর যেতেই দেখি তিন পুলিশকে ধরে আনছে উত্তেজিত এলাকাবাসী। দুইজনের ইউনিফর্ম ছিল না, একজনের ইউনিফর্ম জ্যাকেটের নিচে ছিল।
পুলিশের এই সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ পুরনো বলে দাবি করেন চেয়ারম্যান আব্দুল হাফিজ। তিনি বলেন, এই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আগেও দুদুর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ছিল। এবারও তেমন কিছু হতে পারে। তবে দুদুর নামে থানায় কোনো অভিযোগ নেই। তিনি এলাকাবাসীর কাছে ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এজন্যই এলাকাবাসী বেশি ক্ষুব্ধ।
ভুক্তভোগীর ছেলে সৈকত আলী বলেন, ভেড়ামারা থানার পুলিশরা আমার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে, অন্যায়ভাবে, নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আমার বাবা ভালো মানুষ ছিলেন, আপনারা সবার কাছে শুনে দেখতে পারেন।
স্ত্রী সাজেদা খাতুন বলেন, 'আমার সন্তানদের যারা এতিম করল, আমি তাদের ফাঁসি চাই। আমার সুস্থ স্বামী বাড়ি থেকে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরল কেন? আমি জানতে চাই।'
অভিযোগের বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, 'পুলিশ সদস্যরা একটা মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়েছিলেন। সেখানে রফিকুলকে গ্রেপ্তার দূরে থাক, ছুঁয়েও দেখেনি পুলিশ। উনি নিজেই দোকান থেকে বের হয়ে লাফ দিয়ে ব্রিজের নিচে পড়েছেন।'
অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, 'একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। আমরা নিজেরাও বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিচ্ছি। তদন্তে পর বিস্তারিত জানানো যাবে।'
Comments