ইরান, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে যে বার্তা দিলেন সিরিয়ার আল-গোলানি

উমায়াদ মসজিদে বিজয় বার্তা রাখছেন সিরিয়ার বিদ্রোহীদলের নেতা আল-গোলানি। ছবি: এএফপি
উমায়াদ মসজিদে বিজয় বার্তা রাখছেন সিরিয়ার বিদ্রোহীদলের নেতা আল-গোলানি। ছবি: এএফপি

দুই দশক আগে ছিলেন আল-কায়েদার যোদ্ধা। এখন তিনি সিরিয়ার বিদ্রোহী দলের নেতা। তার হাত ধরেই পতন হয়েছে বাশার আল-আসাদের ইস্পাত কঠিন শাসন। তিনি আবু মোহাম্মদ আল-গোলানি।

বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করার পর সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে বিজয় বার্তা দিয়েছেন এই বিজয়ী নেতা।

বিশ্লেষকদের মতে, তার এই বক্তব্যে লুকিয়ে আছে অন্যদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।

আজ সোমবার মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন'র প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে আল-গোলানির বিজয়-বার্তা।

কোনো টিভি স্টেশন নয়, অথবা সদ্য খালি হওয়া প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ বা কোনো মঞ্চও নয়, রাজধানী দামেস্কের ঐতিহ্যবাহী উমাইয়াদ মসজিদে বসে তিনি বিজয় বার্তা দিয়েছেন।

প্রায় এক হাজার ৩০০ বছরের পুরনো এই মসজিদটি সিরীয়দের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানের। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদের তালিকার ওপরের দিকেই থাকে এই ধর্মীয়স্থানটি।

যারা আল-গোলানিকে শক্তিশালী করে তুলেছেন তাদের কথাই এই বার্তায় উল্লেখ করেন তিনি। ঝটিকা অভিযান চালিয়ে তার সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) যোদ্ধারা কীভাবে বাশার আল আসাদকে উৎখাত করল সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেন তিনি। পাশাপাশি অন্যদের দিয়েছেন সুনির্দিষ্ট বার্তা।

সদ্য স্বৈরশাসকমুক্ত সিরীয়দের যা বললেন আল-গোলানি

উমায়াদ মসজিদে নামাজ আদায় করছেন এক বিদ্রোহি সেনা। ছবি: এএফপি
উমায়াদ মসজিদে নামাজ আদায় করছেন এক বিদ্রোহি সেনা। ছবি: এএফপি

তিনি বলেন, 'ভাইয়েরা আমার, যারা দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলেন, অনেক দুর্ভোগ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে গেছেন, তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই বিজয় এসেছে।'

বিশ্লেষকদের মতে, বিজয়বার্তার মাধ্যমে দেশটিতে ধর্ম-পরিচয় সূত্রে বিভেদ-বিভাজন দূর করার ইঙ্গিত দিয়েছেন আল-গোলানি।

আল-গোলানি নিজে সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি সম্প্রদায়ের সদস্য। অপরদিকে, আসাদ ছিলেন আলাওয়াত সম্প্রদায়ের। দেশটিতে খ্রিষ্টান, দ্রুজ, শিয়া, ইসমাইলীসহ আরও অনেক ধর্মাবলম্বী আছেন।

ইরানের প্রতি বার্তা

উমায়াদ মসজিদের বাইরের চত্বর। ছবি: এএফপি
উমায়াদ মসজিদের বাইরের চত্বর। ছবি: এএফপি

আল-গোলানি বলেন, 'এই বিজয়ে এ অঞ্চলের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। এই অঞ্চলের ইতিহাস ছিল অনেক বিপদের ঘটনা ও উৎস, যা আজ সিরিয়া থেকে বিতাড়িত হয়েছে। এতদিন সিরিয়া ছিল ইরানের নানা অভিলাষ পূরণ, গোত্রে গোত্রে সংঘাত ও দুর্নীতি ছড়ানোর ক্রীড়াক্ষেত্র।'

এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ইরানের ক্ষমতাসীনদের স্পষ্ট বার্তা দেন।

সিরিয়ার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে তেহরানের নাক গলানো আর বরদাশত করবেন না আল-গোলানি—বিষয়টি এখন নিশ্চিত। পাশাপাশি, লেবাননে ইরানের মিত্র হিজবুল্লাহকে সিরীয় ভূখণ্ডে অবাধ প্রবেশাধিকার ও সিরিয়ায় হিজবুল্লাহর শাখার প্রতি সমর্থন বন্ধেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

এ ছাড়াও, ইরানের 'অস্ত্রের গুদাম' হিসেবে সিরিয়ার পরিচয়ও মুছে দেওয়ারও অঙ্গীকার করেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে যা জানালেন

সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নেতা আল-গোলানি। ছবি: এএফপি
সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নেতা আল-গোলানি। ছবি: এএফপি

আল-গোলানি জানতেন, তার এই বিজয়বার্তা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ওয়াশিংটন ও তেল আবিব। 'জঙ্গি সংগঠনের' নেতা হিসেবে তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এই দুই দেশ ইতোমধ্যে এক কোটি ডলার পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।

তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আমরা স্বীকার করছি, নতুন সিরিয়ার সঙ্গে আপনাদের স্বার্থ জড়িত।'

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগে তাকেও সরিয়ে দেওয়া হতে পারে, এ কথা মাথায় রেখেই এই বক্তব্য দিয়েছেন সিরিয়ার নতুন নেতা।

তার বক্তব্যে এই অঞ্চলের অন্যান্য ক্ষমতাবানদের প্রতিও বার্তা আছে।

'সিরিয়াকে পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে,' বলেও দাবি করেন তিনি।

মধ্যপ্রাচ্যে 'মাদকের রাজ্য' হিসেবে সিরিয়ার যে কুখ্যাতি আছে, তা বদলানোর অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, 'আসাদের সিরিয়া গোটা বিশ্বে ক্যাপটাগন মাদকের সবচেয়ে বড় উৎসে পরিণত হয়েছিল।'

অ্যামফেটামিন ধরনের মাদক ক্যাপটাগন সিরিয়ার মাধ্যমে চোরাচালান হতো বলে সিএনএন'র প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Awami League govt guilty of gross human rights violations: UN

Coordinated, calculated acts of violence, repression tantamount to crimes against humanity

36m ago