জাকেরের ৯১, উইন্ডিজকে ২৮৭ রানের লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ

ফাইল ছবি: এএফপি

আগের দিন থেকেই দৃঢ়তা দেখানো জাকের আলি অনিক টানা তৃতীয় টেস্টে পেলেন ফিফটি। একপ্রান্ত আগলে রেখে সেটাকে ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসে রূপ দিলেন তিনি। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাহারি শট খেলে সুবাস জাগালেন সেঞ্চুরিরও। তবে ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দেওয়ায় কিছুটা দূরে থামতে হলো তাকে। জাকেরের ব্যাটে চড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৮৭ রানের লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার জ্যামাইকা টেস্টের চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনে টাইগারদের দ্বিতীয় ইনিংস থেমেছে ২৬৮ রানে। প্রথম ইনিংসে পাওয়া ১৮ রানের লিডের সুবাদে তাদের মোট লিড ২৮৬ রান। ছয়ে নামা জাকের খেলেন ৯১ রানের স্মরণীয় ইনিংস। বড় শটের প্রয়াসে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন তিনি। এর আগে ১০৬ বলে আটটি চার ও পাঁচটি ছক্কা মারেন তিনি। হাফসেঞ্চুরি স্পর্শের পর উত্তাল ব্যাটে মাত্র ২৬ বলে ৪১ রানে আনেন জাকের। এদিন বাংলাদেশের যোগ করা ৭৫ রানের ৬২ রানই তার।

কিংস্টনের স্যাবাইনা পার্কে হওয়া টেস্টে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড স্বাগতিকদেরই। ২০০৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২১২ রানের লক্ষ্যে নেমে জিতেছিল তৎকালীন ব্রায়ান লারার নেতৃত্বাধীন দল। এই ম্যাচ জিততে হলে সেই কীর্তি ছাড়িয়ে যেতে হবে এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

ক্যারিবিয়ানদের মাটিতে অতীতে দুটি টেস্ট জেতার সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের। ২০০৯ সালে ২-০ ব্যবধানে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করেছিল টাইগাররা। তবে ১৫ বছর আগের সেই উইন্ডিজ দল ছিল প্রথম সারির তারকাদের ছাড়া সাজানো। এবার জিতলে দীর্ঘ অপেক্ষা শেষের পাশাপাশি সিরিজে সমতা টানবে বাংলাদেশ।

তৃতীয় দিনের ৫ উইকেটে ১৯৩ রান নিয়ে নেমে দিনের তৃতীয় ওভারে বাংলাদেশের পুঁজি দুইশ ছাড়ায়। আলজারি জোসেফের ডেলিভারিতে ফ্লিক করেন জাকের। বল চলে যায় মিডউইকেট দিয়ে সীমানার বাইরে। আলজারির পরের ওভারে রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রিপ্লেতে দেখা যায়, বাউন্সার পুল করতে চাওয়া জাকেরের হেলমেটে লেগে জমা পড়ে বোলারেরই হাতে। অর্থাৎ বলে কোনো স্পর্শ ছিল না ব্যাটের। টিকে যায় মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত।

নির্ধারিত আকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় ৪৯তম ওভারের পর বদলে ফেলা হয় বল। সেই বল দিয়েই দিনের প্রথম উইকেট আদায় করে নেয় ক্যারিবিয়ানরা। তাইজুল ইসলামকে লাগাতার শর্ট ডেলিভারিতে পরীক্ষা নিচ্ছিলেন আলজারি। ৫০তম ওভারের তৃতীয় বলটিও ছিল একই ধরনের। মাথা বরাবর আসতে থাকা ডেলিভারি ঠিকঠাক সামলাতে পারেননি তাইজুল। তার গ্লাভসে লেগে হেলমেটের গ্রিল ছুঁয়ে বল জমা পড়ে প্রথম স্লিপে থাকা কাভেম হজের হাতে।

সাতে নেমে ধৈর্যের ছাপ রাখা তাইজুল থামেন ৫০ বলে ১৪ রানে। চলমান সিরিজে তৃতীয়বারের মতো ইনিংসে অন্তত ৫০ বল মোকাবিলা করেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে জাকেরের সঙ্গে গড়েন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৯৫ বলে ৩৪ রানের জুটি।

পরের ওভারে বোলিংয়ে পরিবর্তন এনে উইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট আক্রমণে আনেন কেমার রোচকে। তিনি এসেই আরেক সাফল্য উপহার দেন দলকে। আটে নামা অভিজ্ঞ মুমিনুল হক থিতু হতে পারেননি। ড্রাইভ করার চেষ্টায় আউট হন তিনি। স্লিপে ঝাঁপিয়ে পড়ে অসাধারণ ক্যাচ নেন হজ। প্রথম ইনিংসে ৬ বল খেলে রানের খাতা খুলতে না পারা মুমিনুল এবার ৪ বল খেলে করেন শূন্য। দুবারই তার হন্তারক রোচ।

টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ১৩টি সেঞ্চুরির মালিক মুমিনুল। একইসঙ্গে এই সংস্করণে টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ ১৮টি ডাকের বিব্রতকর রেকর্ডও তার। এর আগে আরও একবার এক টেস্টের দুই ইনিংসেই শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের নভেম্বরে, কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ভারতের বিপক্ষে।

দ্রুত ২ উইকেট হারানোর চাপ জেঁকে বসতে দেননি জাকের। টেলএন্ডাররা বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারবেন না বুঝে মেরে খেলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আলজারির শর্ট বলে পুল করে ছক্কা মেরে দারুণ কায়দায় ফিফটি পূর্ণ করেন, ৮০ বলে। পরের ডেলিভারিতে স্লিপের উপর দিয়ে চার মারার পর আরেকটি শর্ট ডেলিভারিতে হুক করে ফের ছক্কা হাঁকান তিনি। সব মিলিয়ে ওই ওভার থেকে ওঠে ১৮ রান। বাংলাদেশের লিড ছাড়িয়ে যায় আড়াইশ।

পরের ওভারে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আরেকটি ছয় মারেন জাকের। বল চলে যায় লংঅনের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে। তবে জাকেরের কাছে ছক্কা হজমের দুই বল পরই রোচ মাতেন উল্লাসে। হাসান মাহমুদও হজের তালুবন্দি হয়ে ফেরেন। ২৭ বলে ৩২ রানের দ্রুতগতির অষ্টম উইকেট জুটিতে তার অবদান ১২ বলে ৩ রান।

রোচের তৃতীয় শিকার হন তাসকিন আহমেদ। ওভারের শুরুর দিকেই তাকে স্ট্রাইক দিতে আপত্তি ছিল না জাকেরের। তবে তাসকিন সুবিধা করতে পারেননি। লাফিয়ে ওঠা বল বেকায়দায় খেলতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে বিদায় নেন তিনি। ৬ বল খেলে রানের খাতা খোলা হয়নি তার।

শেষ উইকেট জুটিতে ২০ বলে আরও ২২ রান যোগ করে বাংলাদেশ। সেখানে জাকেরের অবদান ১৫ বলে ২১ রান। আলজারিকে ডিপমিডউইকেট দিয়ে ছক্কা মারার দুই বল পর আবার পুল করতে গিয়ে আউট হন তিনি। তার ক্যাচ নেন আলিক আথানেজ। নাহিদ রানা অপরাজিত থেকে যান ৫ বলে ১ রানে। ক্যারিবিয়ানদের হয়ে রোচ ও আলজারি যথাক্রমে ৩৬ ও ৭৭ রান খরচায় তিনটি করে উইকেট নেন। দুটি শিকার ধরতে শামার জোসেফের খরচা ৮০ রান।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

1h ago