ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছেন, এবার গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করুন

'৩৬ জুলাই: নির্ভীকদের অভিবাদন' শীর্ষক চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করতে পেরে আমরা গর্বিত বোধ করছি। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা ছাত্র-জনতার প্রতি বিশেষ সম্মান জানাচ্ছি, যারা আমাদের ফ্যাসিবাদের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিয়েছেন। আমরা আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ সব শহীদদের অভিবাদন জানাই, যারা শোষণের অবসান ঘটাতে প্রাণ দিয়েছেন। যারা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, যাদের অঙ্গহানি হয়েছে, বুলেটের আঘাতে আহত হয়েছেন, মানসিক আঘাত পেয়েছেন এবং যারা পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব ও নিকটজনদের হারিয়েছেন, সবার সঙ্গে আমরা সহমর্মিতা-একাত্মতা প্রকাশ করছি।

এই প্রদর্শনীটি ডেইলি স্টার সেন্টারে আগামী ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। ডেইলি স্টার কীভাবে ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থানের সংবাদ প্রকাশ করেছে, সেসময় আমাদের সম্পাদকীয় নীতি, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন লেখা প্রকাশ পেয়েছে, সেগুলো এই প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হবে। এই প্রদর্শনীতে আমরা দেখাব কীভাবে আমাদের সাংবাদিকরা, বিশেষত আলোকচিত্রীরা জীবনঝুঁকি নিয়ে দেশ ও বিশ্বের পাঠকের কাছে শিক্ষার্থী ও স্বাধীনতাকামী মানুষের আত্মত্যাগ, সাহসিকতা ও বীরত্বের গল্পগুলো তুলে ধরেছেন। আমরা গর্বের সঙ্গে বলছি, আন্দোলনের পুরো সময়টা শিক্ষার্থী ও জনমানুষের পাশেই ছিলাম এবং সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যে সহিংসতা হয়েছে, আমাদের সক্ষমতা ও প্রতিভার পূর্ণ ব্যবহার করে তার সুষ্ঠু ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি।

এই প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হবে 'জুলাইয়ের ৩৬ দিনের' ঘটনাপ্রবাহ আমরা কতটা আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিবেশন করেছি। যত দিন যাচ্ছিল শাসকগোষ্ঠী আরও নিষ্ঠুর ও নির্মম হয়ে উঠছিল। আমরা ঘটনার গভীরে গিয়ে তুলে ধরেছি সেসব বর্বরতার চিত্র।

জনসমর্থন নিয়ে ছাত্ররা ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছেন। উন্মোচন করেছেন স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, অধিকার ও সম্ভাবনার নতুন দ্বার। আমাদের সামনে উন্মুক্ত হয়েছে নতুন বাস্তবতা ও সম্ভাবনা। নতুন বাংলাদেশ সত্য-সাহস, বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের আশা ও বিশ্বাস, নতুন প্রজন্ম সফলভাবে গণতন্ত্র গড়ে তুলবে এবং একটি অধিকারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে যেখানে বৈষম্য, অবিচার ও ক্ষমতার অপব্যবহার আর থাকবে না। বিষয়টি কিছুটা ভাববাদী মনে হতে পারে। কিন্তু তা বাস্তবায়নে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা সবাই একমত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ছাত্র-জনতার বিপ্লবের এই অর্জনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে। তারা তাদের ইচ্ছা সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং চরমপন্থা অবলম্বন করে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে, যা বিপ্লবের অর্জনকে ম্লান করে দিতে পারে। এসব বিশৃঙ্খলা, অস্থিরতা ও বিভাজন সৃষ্টির প্রচেষ্টার ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকার, ছাত্রনেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও উদ্বেগ প্রকাশ করছি। ঘৃণা ও মিথ্যা বয়ান ছড়িয়ে তারা সহিংসতাকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং এর মাধ্যমে ছাত্র-জনতার বৈপ্লবিক শক্তির বিপরীতমুখী অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছে। এই গোষ্ঠীগুলো নতুন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার আকাশ কালো মেঘে ঢেকে দিচ্ছে।

আমরা মনে করি সাম্প্রতিক সময়ে ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোকে লক্ষ্য করে যে আক্রমণগুলো হয়েছে, তা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চলমান প্রক্রিয়ার অংশ। দেশের শীর্ষ দুই পত্রিকাকে শত্রু হিসেবে উপস্থাপন করতে চরম মিথ্যা বয়ান, মতবাদ চাপানোর প্রচেষ্টা, উগ্রবাদী আচরণের প্রবণতা এবং কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগের তীর ছোড়া হচ্ছে, তা যেমন শুধু ছাত্রদের বিপ্লবের মাধ্যমে সৃষ্ট ঐক্য ও উদ্দীপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তেমনি সামগ্রিক অগ্রযাত্রাকে আরও বাধাগ্রস্ত করবে।

আসুন আমরা নতুন এই বাংলাদেশে আমাদের চিন্তাধারা প্রকাশ করি, ভিন্নমত নিয়ে গঠনমূলক বিতর্ক করি এবং আমাদের নিজ নিজ দর্শন, আদর্শ, ও তথ্যভিত্তিক ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করি, যেন সবাই মিলে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে পারি। এই লক্ষ্য নিয়েই দ্য ডেইলি স্টারে আমরা কাজ করছি এবং এটাই আমাদের সাংবাদিকতার সংজ্ঞা।

এই মুহূর্তে আমরা সমালোচনার মুখে আছি। দাবি করা হচ্ছে, আমরা পক্ষপাতদুষ্ট। আমরা এ ধরনের সমালোচনা ও সমালোচকদের স্বাগত জানাই। আমরা প্রকৃতপক্ষেই তাদের কথা শুনতে চাই এবং তাদের কাছ থেকে জানতে চাই। আমাদের মনে রাখতে হবে, সমালোচনা যদি তথ্য, যথাযথ বিশ্লেষণ ও সঠিক ব্যাখ্যার ভিত্তিতে হয়, তবে তা সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন এবং জাতিকে আলোকিত করে। আর যদি তা না হয়, তাহলে জনগণ ভুল পথে পরিচালিত হয়, পাঠক-শ্রোতারা ভুল তথ্য পায়, সমাজে বিভেদ সৃষ্টি হয় এবং ঘৃণা ও সহিংসতা ছড়ায়।

কোনো প্রতিবেদন বা সম্পাদকীয় থেকে অংশবিশেষ নিয়ে কখনো গঠনমূলক সমালোচনা বা জ্ঞানগর্ভ বিতর্ক হয় না। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা পাঠকদের সামনে আরও বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন তুলে ধরতে সর্বদা উন্মুক্ত ও আগ্রহী।

এমন একটি প্রচারণা ছড়ানো হচ্ছে যে, আমরা শেখ হাসিনার শাসনামলকে সমর্থন যুগিয়েছি। গত ১৫ বছরে ডেইলি স্টার ও এর সম্পাদক-প্রকাশক যে নিপীড়ন সহ্য করেছেন, তার একটি খণ্ডিত চিত্র এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

২০১৬ সালে একটি টিভি অনুষ্ঠানে এই পত্রিকার সম্পাদক স্বেচ্ছায় বলেছিলেন যে ২০০৭ সালে এক-এগারোর সময় নিরপেক্ষভাবে যাচাই না করেই ডিজিএফআইর দেওয়া কিছু প্রতিবেদন দ্য ডেইলি স্টার প্রকাশ করেছিল। আমরা এ ধরনের  ১১টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু অন্য প্রায় সব পত্রিকাই এর চেয়ে অনেক বেশি প্রকাশ করেছিল। একটি পত্রিকা তো এ ধরনের ২৯টি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছিল।

এই সরল মন্তব্যকে উল্টো দ্য ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ওই অনুষ্ঠান সম্প্রচারের কয়েক মিনিটের মধ্যেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন—যা এখনকার মিথ্যা প্রচারণার সঙ্গে মিলে যায়। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, '...ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম মিথ্যা গল্পের উসকানি আমার মাকে গ্রেপ্তার করিয়েছে এবং ১১ মাস তিনি জেলে কাটিয়েছেন। আমি বিচার চাই, আমি চাই মাহফুজ আনাম আটক হোক এবং তার রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিচার হোক।'

তার এই স্ট্যাটাসের মাধ্যমে আইনি হয়রানি ও শেখ হাসিনা সরকারের নিপীড়ন আরও বাড়ে। ডেইলি স্টার সম্পাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের ১৬টি মামলা দায়ের করা হয়, যার প্রতিটির শাস্তি আজীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারত। পাশাপাশি মানহানির ৬৮টি মামলা করা হয়, যার ক্ষতিপূরণের দাবি হাজারো কোটি টাকারও বেশি। এক্ষেত্রে কিছু টিভি চ্যানেল ও তাদের আয়োজিত টক শোগুলোর ভূমিকা ছিল লক্ষণীয়। তাদের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছিল যে, তা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার চর্চার পরিবর্তে নাৎসি জার্মানির গোয়েবেলসের প্রচারণা পদ্ধতির অংশবিশেষ।

ডেইলি স্টারে দেশি-বিদেশি প্রথম সারির ৫০টিরও বেশি বিজ্ঞাপনদাতার বিজ্ঞাপন ছাপানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। যার ফলে রাতারাতি আমাদের রাজস্ব ৪০ শতাংশ কমে যায়। যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসেনি, তারাও বিজ্ঞাপনের সংখ্যা ও কলেবর কমিয়ে দেয়। কারণ তারা কাউকে এমন ভাবনার সুযোগ দিতে চায়নি যে, শেখ হাসিনা পছন্দ করেন না এমন একটি পত্রিকাকে সহায়তা করছে। আমাদের পাশে ছিল ছোট বিজ্ঞাপনদাতারা। তারা আমাদেরকে ফোন করে বলেছিলেন, 'আমি জানি যে আপনার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে আমার ব্যবসার আয় বাড়বে না, কিন্তু আমি এটা করছি যাতে ডেইলি স্টার টিকে থাকে, কারণ দেশে অন্তত একটি নিরপেক্ষ সংবাদপত্র থাকা প্রয়োজন।'

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান ও সংবাদ সম্মেলনের সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রেও আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিজেই সংসদ অধিবেশনে, আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে এবং সংবাদ সম্মেলনে অসংখ্যবার এই পত্রিকার সম্পাদককে সরাসরি অপমান করেছেন সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে। তিনি তাকে 'আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ ও গণতন্ত্রের শত্রু' বলে একাধিকবার অভিহিত করেছেন।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পাশাপাশি এই পত্রিকার সম্পাদককেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বারবার মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। শেখ হাসিনা অসংখ্যবার দাবি করেন, এই দুজন পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের ঋণ স্থগিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিশ্বব্যাংকের সভাপতির কাছে দেনদরবার করেছিলেন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের সময় এবং পরেও শেখ হাসিনা তার পুরোনো অভিযোগ আবার সামনে আনেন এবং এই পত্রিকার সম্পাদককে দেশের শত্রু হিসেবে উপস্থাপন করেন।

২০১৬ সালে ডেইলি স্টারের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ড. ইউনূস প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেওয়ায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন অনেক মন্ত্রী ও নেতা প্রকাশ্যে অনুষ্ঠান থেকে চলে যান এবং এই পত্রিকা ও এর সম্পাদকের বিরুদ্ধে 'বাংলাদেশের শত্রুকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা'র অভিযোগ তুলে নিন্দা করেন।

এই পত্রিকা ও সম্পাদককে অপবাদ দেওয়ার প্রচেষ্টা বিগত সরকারের শেষ দিন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কারণ আমরা একটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যম হিসেবে কখনোই আমাদের 'প্রহরীর ভূমিকা' ও 'ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহির আওতায় আনার' দায়িত্ব থেকে সরে আসিনি। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। মুক্ত পরিবেশে সাংবাদিকতা ও 'ফ্যাসিবাদের অধীনে' সাংবাদিকতার মধ্যে অবস্থানগত কিছু পার্থক্য রয়েছে এবং উভয়কে আলাদা করে বিবেচনা করতে হবে। সর্বক্ষণ ধরপাকড়, হুমকি, মিথ্যা অভিযোগ, আইনি হয়রানি, কারাদণ্ড বা 'গুম' হওয়ার আশঙ্কা থেকে আমরা সবসময়ই এক ধরনের চাপে ছিলাম, যা মুক্ত পরিবেশের সাংবাদিকরা কখনো কল্পনাও করতে পারবেন না।

এসব চাপের মুখে আমরা নত হইনি। কিন্তু আমাদেরকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে আমাদের সহকর্মীদের কথা চিন্তা করে। আইনি-আর্থিকসহ নানা ধরনের 'শাস্তি' সত্ত্বেও শেখ হাসিনার শাসনের ১৫ বছরে ডেইলি স্টার যে অবস্থান নিয়েছিল তা হলো:

আমরা সবসময় গণতন্ত্র এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করেছি। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের তীব্র বিরোধিতা করেছি এবং এই উদ্যোগের সমালোচনা করে একাধিক সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় লিখেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর ২০১১ সালের ২ জুলাই আমরা একটি সম্পাদকীয় ছাপিয়েছিলাম—সম্ভবত একমাত্র পত্রিকা হিসেবে—যার শিরোনাম ছিল 'এটি একটি ভুল'। আমরা পঞ্চদশ সংশোধনী এবং এর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বিধানের বিরোধিতা করেছি। যখন বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আমরা সরকারকে নির্বাচন স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমরা তাদেরকে অনুরোধ করি, যাতে আরও সংলাপের মাধ্যমে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচনে আনতে রাজি করানো যায়।

আমরা ২০১৪ সালের নির্বাচনের কঠোর সমালোচনা করেছিলাম এবং আমাদের সম্পাদকীয়তে বলেছিলাম, 'এই বিজয় অন্তঃসারশূন্য' এবং যে নির্বাচনে ৩০০ আসনের সংসদে ১৫৩ জনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন, তা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।

২০১৮ সালের নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক করতে না পারায় আমরা আবারও ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করি। ২০২৪ সালের নির্বাচন সম্পূর্ণ একতরফা ছিল এবং একে জনগণের 'ইচ্ছার' প্রতিফলন হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। আমরা এই তিনটি 'বিতর্কিত' ও 'প্রশ্নবিদ্ধ' নির্বাচন নিয়েই প্রশ্ন তুলেছি। এই প্রতিটি নির্বাচনেই আমরা নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলাম।

আমরা সবসময় (আইন প্রয়োগকারী সংস্থার) হেফাজতে মৃত্যু, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং সব ধরনের নির্যাতনের নিন্দা করেছি। আমাদের সম্পাদকীয়গুলোতে সবসময় এসব কাজের বিরোধিতা করা হয়েছে। র‍্যাব তাদের সার্বিক কার্যক্রম ও 'বন্দুকযুদ্ধে'র ক্ষেত্রে বরাবরই দায়মুক্তি পেয়েছে। আমরা সব সময়ই এর সমালোচনা ও এ ধরনের ঘটনাগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে এসেছি।

ডেইলি স্টার সব নিপীড়নমূলক আইনের বিরুদ্ধে নিরলসভাবে লিখে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হলে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের সম্পাদকীয়গুলোতে এর নিন্দা জানানো হয়। যখনই একজন সাংবাদিক বা নাগরিক গ্রেপ্তার হয়েছেন, আমরা প্রতিবারই প্রতিবাদ জানিয়েছি। সম্পাদক পরিষদের মাধ্যমে ডেইলি স্টার প্রতিবাদ জানানোর ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য ধারাবাহিক প্রচারণা চালিয়েছে।

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের দমন-পীড়নমূলক শাসনামলে ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে অপপ্রচার, মিথ্যা অভিযোগ ও ভীতিপ্রদর্শন অব্যাহত ছিল। পক্ষপাতদুষ্ট টক শোগুলো মিথ্যা বয়ানের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল। বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার চর্চার ক্ষেত্রে কখনোই আপস না করায় আমরা এসব নিপীড়নের শিকার হয়েছি। আমরা ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহিতার আওতায় রাখার চেষ্টা করেছি এবং ভীতিপ্রদর্শন সত্ত্বেও আমাদের 'ওয়াচডগ'র ভূমিকা পালন করে গেছি।

বিগত ১৫ বছর ধরে ডেইলি স্টার ধারাবাহিকভাবে অপদস্ত, হয়রানি, ভীতিপ্রদর্শন ও শাস্তির শিকার হওয়ার পর এখন আবারও হয়রানির শিকার হচ্ছে। এবার আমাদেরকে শেখ হাসিনার সরকারের 'দোসর' তকমা দেওয়া হচ্ছে। এটি এমন একটি দাবি, যার বিন্দু-পরিমাণও সত্য নয়।

আমরা আত্মবিশ্বাসী যে অতীতের সব মিথ্যা বয়ানের মতোই এটাও প্রকৃত সত্যের মাধ্যমে খণ্ডিত হবে এবং আমরা আমাদের পাঠক ও পৃষ্ঠপোষকদের কাছে আরও বেশি আস্থা ও শ্রদ্ধার জায়গায় পৌঁছাব। শিক্ষার্থী, জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ, আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করছি এবং করব। এভাবেই আমরা সেই সোনার বাংলা গড়ব, যা আমাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্বপ্ন ছিল।

'নির্ভীকদের অভিবাদন' জানানোর পাশাপাশি আমরা ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে গণতন্ত্র, পরিপূর্ণ স্বাধীনতা, সামাজিক ন্যায়বিচার, সামাজিক সম্প্রীতি, সব সম্প্রদায়ের অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। আমরা এমন একটি দেশ গড়ার অঙ্গীকার করছি, যে দেশ পরিচালিত হবে আইনের শাসনে, কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের কথায় নয়।

Comments

The Daily Star  | English

Indian Media Reporting on Bangladesh: Fake or Fact?"

Why is the Indian media's coverage of Bangladesh markedly different from that of Bangladeshi news outlets?

1h ago