ঝিলপাড় পার্ক: ঢাকার বুকে ছোট্ট অবকাশকেন্দ্র

ঝিলপাড় পার্ক
ছবি: শাদাব শাহরুখ হাই

মানুষের ভিড়ে চিড়েচ্যাপ্টা ঢাকা শহরের বাস করতে গেলে যেন অবধারিতভাবেই মানিয়ে নিতে হয় যানজট আর মানসিক চাপের সঙ্গে। কিন্তু এই শহরেই এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে এখনও মানুষ কিছুক্ষণ বসে, চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে একে অন্যের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়। দক্ষিণ বাড্ডার ঝিলপাড় পার্ক তেমনই একটি জায়গা।

হাতি দেখে চিনে নিন

ঝিলপাড় পার্ক চিনবেন হাতি দেখে। এক্ষেত্রে জঙ্গলে নয়, হাতি হাজির হয়েছে সড়কের ধারে! ঝিলপাড় পার্কের অবস্থান হাতির ভাস্কর্যটির ঠিক পাশেই, গুগল ম্যাপে যে লোকেশনটি 'হাতিচত্বর' হিসেবে চিহ্নিত। ভাস্কর্যটির চারটি হাতিই হাতিরঝিল সংযোগ সড়কমুখী, যেন অনন্তকাল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা যানজটকেই দেখছে। পার্কটি খুঁজে পেতে এই ভাস্কর্যটিকে ল্যান্ডমার্ক হিসেবে ধরতে পারেন আপনি।

প্রাণভরে নিন তাজা বাতাস

পার্কটির অবস্থান গুলশান লেকের ঠিক পাড় ঘেঁষে। ফলে সেখানে সবসময়ই বয়ে যায় মৃদুমন্দ বাতাস। বুকভরে সেই বাতাস নিলে যেন আত্মাও পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠবে। সন্ধ্যায় এই পার্কের কোনো একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে ঠান্ডা বাতাস গায়ে মাখাও কম থেরাপিউটিক নয়। ছোট্ট পার্কটি চারদিকে রাস্তায় ঘেরা ছোট্ট একটি দ্বীপ যেন, তবু সবুজ গাছ আর তার সঙ্গে মেলানো মৃদু লাইটের আলো সেখানে এক অপার্থিব পরিবেশ তৈরি করে। মনে হয় যেন, দুদণ্ড বসে বিশ্রাম নিই।

পথের উল্টোদিকেই চমৎকারে লেক। সেটিকে পার্কের বর্ধিত অংশও বলা যেতে পারে। লেকের পাড়ে বসানো আছে বেঞ্চ, যেখানে বসে আপনি লেকের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। লেকের বুক চিরে চলে যাওয়া নৌকাগুলো যখন পানিতে ঢেউ তৈরি করে, পানি থেকে উঠে আসা শীতল বাতাস তখন শরীরে শিহরণ জাগায়। ব্যস্ত শহরের ঠিক মধ্যেখানে বসে এমন একটি নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে পাওয়াও কিন্তু কম কথা নয়।

খাবারেও আছে বৈচিত্র্য

ঢাকায় এখন স্ট্রিট ফুড দারুণ জনপ্রিয়। আর ঝিলপাড় এক্ষেত্রেও আপনাকে হতাশ করবে না।

কথা হয় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাওন ভূঁইয়া রাহির সঙ্গে।

তিনি বলেন, `আমরা প্রায়ই এখানে আসি। ক্যাম্পাস থেকে বাসায় যাওয়োর পথেই এই পার্কটি পড়ে। এখানে যেসব স্ট্রিট ফুড পাওয়া যায় সেগুলোও আমাদের খুব পছন্দ। তাছাড়া এই জায়গা হয়ে বাসায় যাওয়াটাও বেশ সুবিধাজনক। তা না হলে রিকশায় পুরো এলাকা পাড়ি দিতে হতো।'

রাহির বন্ধু সিফাত আহমেদও তার সঙ্গে একতম পোষণ করলেন।

হালিম, ফুচকা, পানি পুরি, ঝালমুড়ি আর সেদ্ধ ডিমের মতো সাধারণ সব খাবারই মেলে এখানে। তবে খাদ্যরসিকদের জন্য রয়েছে আরও আয়োজন। ঝিলপাড়ে পাবেন কাবাব আর রোল, আছে স্যুপ, নুডলস, দোসার দোকান। এখানেই শেষ নয়, বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে গরম গরম পিজ্জাও পেয়ে যাবেন, যা তৈরি হবে আপনার চোখের সামনেই।

এতেও যদি আপনার মন না ভরে তাহলে আপনার জন্য রয়েছে চিতই পিঠার দোকান। গরম গরম সেই পিঠা মরিচ ভর্তার সঙ্গে এতই সুস্বাদু যে একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছা করবে। সেই পিঠার কথা ভাবতেই আপনার জিভে জল চলে আসবে।

অবশ্য স্ট্রিট ফুড বাদ দিয়ে যদি আপনি রেস্তোরাঁয় বসে আয়েশ করে খাবার খেতে চান, তাহলে সে সুযোগও রয়েছে। ঝিলপাড়ে রয়েছে একটি রেস্তোরাঁ, যেখানে মিলবে থাই, চাইনিজ আর ভারতীয় খাবার। সঙ্গে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের তাজা ফলের রস। যা নিমেষেই আপনার মনকে চাঙ্গা করে তুলবে।

এতকিছু পাওয়া যায় আর আইসক্রিম পাওয়া যাবে না, তাই কী হয়? ঝিলপাড়ে বসে আইসক্রিমের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ কী কেউ হাতছাড়া করতে পারে?

তো, যদি এ সপ্তাহে আপনার হাতিরঝিলের দিকে যাওয়া পড়ে, তাহলে ঝিলপাড় পার্কে একটু ঢুঁ মারতে ভুলবেন না যেন!

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

 

Comments

The Daily Star  | English
August 5 declared as July Mass Uprising Day

Govt declares 3 new days for nat’l observance

The interim government yesterday declared August 5 as “July Mass Uprising Day” to commemorate the student-led protests that toppled the Sheikh Hasina regime that day last year.

1h ago