রুশ ভূখণ্ডে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলায় বাড়ল পরমাণু যুদ্ধের আশংকা

রাশিয়ায় দূরপাল্লার মার্কিন এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ায় দূরপাল্লার মার্কিন এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছ থেকে পাওয়া অনুমতির ফায়দা নিয়ে রুশ ভূখণ্ডে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এই হামলায় বেড়েছে পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা।  

গতকাল মঙ্গলবার এই হামলার বিষয়টি উঠে এসেছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে।

হামলার বিস্তারিত

রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক প্রদেশের এক সামরিক ঘাঁটিতে ছয়টি মিসাইল ছোঁড়ে ইউক্রেন। তবে এর মধ্যে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র আকাশে থাকা অবস্থায় ধ্বংসের দাবি করেছে মস্কো। তারা জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রের ভাঙা অংশ ঘাঁটিতে আঘাত করলে সেখানে আগুন ধরে যায়। তবে দ্রুত আগুন নেভানো হয়েছে। এই হামলায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বা কেউ হতাহতও হননি।

ভূখণ্ড ছাড় দেওয়া বা অন্যান্য ছাড়ের প্রস্তাব আবারও উড়িয়ে দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
ভূখণ্ড ছাড় দেওয়া বা অন্যান্য ছাড়ের প্রস্তাব আবারও উড়িয়ে দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: জেলেনস্কির ফেসবুক পেজ

অপরদিকে ইউক্রেনের দাবি, তারা রাশিয়ার প্রায় ১১০ কিমি অভ্যন্তরে অবস্থিত অস্ত্রাগারে হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী কোন অস্ত্র ব্যবহার করে এই হামলা হয়েছে তা না জানালেও ইউক্রেন সরকারের এক সূত্র ও এক মার্কিন কর্মকর্তা এটিএসিএমএস ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়া আটটি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে দুইটি প্রতিহত করতে পেরেছে। তার ভাষ্য, গোলাবারুদের সংরক্ষাণাগারে এই হামলা চালানো হয়।

বাইডেন এ সপ্তাহেই এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় হামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছেন। এটিএসিএমএসই ইউক্রেনকে দেওয়া সবচেয়ে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ জানিয়েছেন, 'পশ্চিম এই যুদ্ধের মাত্রা বাড়াতে চায়, যার স্পষ্ট ইঙ্গিত এটিএসিএমএস ব্যবহারের অনুমতি।'

লাভরভ
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। এএফপি ফাইল ফটো

মস্কো বলছে, এ ধরনের অস্ত্র সরাসরি মার্কিন সমর্থন ছাড়া পরিচালনা করা সম্ভন নয়। যার ফলে, এর ব্যবহারে ওয়াশিংটনও এখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল। রাশিয়ার জন্য পাল্টা জবাব দেওয়া এখন দায়িত্বে পরিণত হয়েছে।  

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সহস্রতম দিনে এলো এই হামলা।

এমন সময় এই হামলা হলো, যখন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনে এই যুদ্ধে ইউক্রেনের পশ্চিমের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়া অব্যাহত থাকা বেশ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।  

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি তারা ৪২টি ইউক্রেনীয় ড্রোনও ধ্বংস করেছে। রাত ৯টা থেকে ১১টা বেজে ৫৫ মিনিটের মধ্যে দেশটির দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলের অন্তত আট এলাকায় এই ড্রোনগুলো ধ্বংস করা হয়। ৩২টি ড্রোন ধ্বংস হয় শুধু ব্রিয়ানস্ক এলাকাতেই।

রাশিয়ার নতুন পরমাণু অস্ত্র নীতিমালা

চলমান পরিস্থিতিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি সংশোধিত পরমাণু নীতিমালায় সাক্ষর করেছেন। এই নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যদি এমন কোনো রাষ্ট্র প্রথাগত হামলা চালায়, যাদেরকে পরমাণু শক্তিসম্পন্ন অপর কোনো রাষ্ট্র সমর্থন করছে, তাহলে এই হামলাকে ওই দুই রাষ্ট্রের সম্মিলিত হামলা হিসাবে বিবেচনা করা হবে এবং পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে এই হামলার জবাব দেওয়া যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদনের প্রতিক্রিয়ায় এই সংশোধিত নীতি জারি করা হয়েছে কী না, এ প্রশ্নের জবাবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, এটি একটি 'সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত' এবং 'বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে' পুতিন এই নীতিমালা হালনাগাদ করতে চেয়েছেন।

মন্ত্রীসভার বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: রয়টার্স
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রয়টার্স ফাইল ফটো

এপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

এই নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যালিসটিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও অন্যান্য উড়ুক্কু যানের মাধ্যমে বড় আকারে আকাশপথে হামলা এলে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে জবাব দেওয়া যাবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে 'পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ বা সমর্থন' নিয়ে কোনো পরমাণু শক্তিবিহীন রাষ্ট্র হামলা চালালে এটাকে 'রুশ প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সম্মিলিত হামলা' হিসাবে বিবেচনা করা হবে।

তবে এ ধরনের হামলার জবাবে নিশ্চিতভাবে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করা হবে কী না, তা নির্দিষ্ট করা না হলেও, সার্বিকভাবে এ অঞ্চলে পরমাণু যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশ্লেষকরা।

ওয়াশিংটন মস্কোর নতুন নীতিকে তেমন গুরুত্ব দিতে রাজি নয়। তাদের মতে, এই নীতি 'রাশিয়ার গতানুগতিক দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রচার-প্রচারণার সর্বশেষ নিদর্শন'।

এই উদ্যোগের প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, 'এতে স্পষ্ট বোঝা গেলো পুতিনের শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোনো আগ্রহ নেই। বিশেষত, এই দিনেই তাদেরকে নতুন পরমাণু অস্ত্র কৌশল উপস্থাপন করতে হল। কেন? তারা তো কোন শান্তি কৌশলের ঘোষণা দেয়নি। এমন কিছু কি আপনারা শুনেছেন? পুতিন যুদ্ধ চান।'

পেন্টাগন বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইউক্রেনের কাছে আরও ১০০ মিলিয়ন ডলারের মার্কিন সামরিক উপকরণ ও সেবা বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। ডেনমার্ক জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনের অস্ত্র শিল্পের উন্নয়নে ১৩৮ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেবে।

ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের উপযোগিতা

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে ইউক্রেন কুরস্ক অঞ্চলে অধিকৃত রুশ ভূখণ্ড সুরক্ষিত রাখতে পারবে। তবে এতে ৩৩ মাসব্যাপী যুদ্ধে আকাশ-পাতাল তফাৎ দেখা দিবে না। বিশ্লেষকদের মতে, বাইডেনের অনুমতি এসেছে 'অনেক দেরিতে'।

এই ক্ষেপণাস্ত্র সর্বোচ্চ ৩০০ কিমি দূরত্বে আঘাত হানতে পারে। অপরদিকে এই যুদ্ধে মস্কোর বহুল ব্যবহৃত হাইপারসনিক কিনঝাল মিসাইল উর্ধ্বে ২ হাজার কিমি দূরত্বে আঘাত হানতে পারে বলে জানা যায়।

ট্রাম্পের সমালোচনা

কিয়েভের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিকবার দ্রুত এই যুদ্ধের অবসানের দাবি জানান তিনি।

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট
টাকসন অ্যারিজোনায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, দুই মাস পর ক্ষমতা গ্রহণ করেই শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নেবেন ট্রাম্প, যা যুদ্ধের প্রথম কয়েক মাসের পর আর একবারও হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh foreign adviser visit to China 2025

Foreign adviser’s China tour: 10 extra years for repaying Chinese loans

Beijing has assured Dhaka it will look into the request to lower the interest rate to ease Bangladesh’s foreign debt repayment pressure

11h ago