গণমাধ্যমের ওপর হামলা-হুমকি বৈষম্যবিরোধী চেতনার পরিপন্থী: টিআইবি

টিআইবি

সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ, নির্বিচারে মামলা, ব্যক্তিগত ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে হেনস্তার উদ্দেশ্যে স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতা বৈষম্যহীন 'নতুন বাংলাদেশ'র অভীষ্টের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনবে না উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা এই উদ্বেগ প্রকাশ করে।

'গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কি ফাঁকা বুলি' প্রশ্ন তুলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের জন্য ভয়হীন পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। একইসঙ্গে, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার চর্চা নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে স্বার্থান্বেষী মহলের হামলা-ঘেরাও, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে মামলা ও হেনস্তার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের শাসনামলে মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১৪ বছরে ৪২ ধাপ নেমেছিল বাংলাদেশ। এ সময়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসংক্রান্ত সব মানদণ্ডেই বাংলাদেশের ক্রমাবনতি হয়েছে। ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন প্রাণহানি ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে এই অবস্থান থেকে উত্তরণের অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও এ প্রতিশ্রুতি বারবার দেওয়া হয়েছে—গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হবে না, ক্ষমতার প্রভাবের বাইরে থেকে দেশে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, স্বার্থান্বেষী বিভিন্ন মহল দেশের কোনো কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, হামলা, ঘেরাওয়ের হুমকিসহ নানাবিধ আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। দৃশ্যত, অতিক্ষমতায়িত কোনো কোনো মহলের স্বার্থের বাইরে গেলেই গণমাধ্যমকে আক্রমণ ও সাংবাদিক হেনস্তা, গণমাধ্যমকে দখল বা খেয়াল-খুশিমতো পরিচালনার প্রচেষ্টা চলছে। যা আসলে মুক্ত গণমাধ্যমের সম্ভাবনার জন্য অশনিসংকেত।'

গণমাধ্যমের ওপর এরূপ আঘাত 'নতুন বাংলাদেশ'র অভীষ্টের জন্য মোটেই সুখকর বা ইতিবাচক নয় উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'নির্বিচার হুমকি, হামলা, ঘেরাও, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ক্ষোভের বশীভূত হয়ে যথেচ্ছ মামলা বা ঢালাওভাবে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা প্রকারান্তরে জনবিরোধী কর্তৃত্বদের পরিচায়ক। টিআইবি মনে করে, পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের মতো গণমাধ্যমকে নিজের পোষ্যের মতো ব্যবহারের চেষ্টা ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত "নতুন বাংলাদেশ"র মুক্তচিন্তা ও বৈষম্যবিরোধী চেতনার পরিপন্থী। টিআইবি মনে করিয়ে দিতে চায়, ভিন্নমত ও মুক্ত গণমাধ্যমের ঢালাও নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তাহীনতা মূলত কর্তৃত্ববাদের পুনরাগমনের পথ সৃষ্টি করবে। আমরা বিশ্বাস করি, অবিলম্বে দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ভয়হীন উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে সুস্পষ্ট ও কঠোর পদক্ষেপ নেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অন্যথায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফাঁকা বুলিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।'

ড. জামান আরও বলেন, 'টিআইবি বিশ্বাস করে, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ থাকলে বা যারা সরাসরি কর্তৃত্ববাদের দোসরের ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। কিন্তু পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের সরকারের সহযোগী "ট্যাগ" দিয়ে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যথেচ্ছ মামলা, তথ্য অধিদপ্তরের দেওয়া স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল, হুমকি, বরখাস্ত করার মতো ঘটনা দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার স্বপক্ষে কোনো ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে না। বরং, "ভিন্নমতের কারণেই স্বৈরাচারের দোসর" অভিযোগ তোলার পেছনে স্বার্থান্বেষীদের দুরভিসন্ধি কাজ করছে। টিআইবি স্পষ্টভাবে বলতে চায়, শুধুমাত্র সাংবাদিকতার জন্য কোনো সাংবাদিককে কখনোই শাস্তি দেওয়ার সুযোগ নেই। পতিত সরকারের দোসর অভিযোগে "উইচ হান্টিং" করে সাংবাদিক হয়রানির চলমান চর্চা অবিলম্বে বন্ধের উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই আমরা। একইসঙ্গে, সাংবাদিকতার ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার চর্চা নিশ্চিতের জন্য গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাই।'

Comments

The Daily Star  | English
 Al Bakhera killings Al Bakhera killings

Killings in Chandpur: Water transport workers go on strike

Water transport workers has started an indefinite strike from midnight

20m ago