রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ প্রশ্নে বিএনপির সঙ্গে ছাত্রনেতাদের মতানৈক্য

ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে পদ থেকে অপসারণ করার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার 'রাজনৈতিক ঐকমত্যের' অপেক্ষায় রয়েছে। তবে রষ্ট্রপতি ইস্যুতে যেকোনো 'হঠকারী' পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিএনপি। তারা মনে করে, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা হলে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে যা এই মুহূর্তে অপ্রয়োজনীয়।

তবে বিএনপির এই অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীতে আছে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনটির নেতারা এই ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সৌহার্দ্য বজায় রাখলেও তারা তাদের অবস্থানের পক্ষে সমর্থন জোগাড় করার জন্য অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৫ বছরের শাসনের শেষ নিদর্শন হিসেবে টিকে আছেন রাষ্ট্রপতি। তাকে অপসারণের মাধ্যমে বিজয় সম্পূর্ণ করতে হবে। এর পক্ষে সমর্থন আদায়ে তারা জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই দলগুলোও রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবিতে একমত হয়েছেন।

অন্যদিকে বিএনপি এর বিরোধিতা করে বলছে, তারা সাংবিধানিক শূন্যতা চায় না। এটা দেশকে সম্ভাব্য সংকটের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

দলের নেতারা বলেছেন, তারা এমন কোনো মন্তব্য করবেন না যাতে ছাত্র আন্দোলনকারীদের অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে। তবে রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়া হলে তা কীভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে তার ব্যাখ্যাও দেওয়া হবে দলের পক্ষ থেকে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমাদের অবস্থান অনমনীয় নয়।

তিনি বলেন, অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিএনপি একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে চায় যে, নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কোনো সংকট তৈরি করা উচিত হবে না।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তার অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।

শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পার্ঘ্য অর্পণের পর সাংবাদিক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই মুহূর্তে, সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি করতে পারে এমন কোনো হঠকারী পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এর সমন্বিত নাগরিক প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটির একটি প্রতিনিধি দল শনিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির অপসারণের বিষয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে।

ওই বৈঠক প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, আমাদের ফোরাম আছে, সেই ফোরামের মিটিং হবে; সেখানে আলোচনা করে আমাদের অবস্থান আমরা পরিষ্কার করব।

ফখরুল বলেন, আমরা এর আগেও বলেছি, আমরা গণঅভ্যুত্থানের যে ফলাফল, সেই ফলাফলের ফসলকে ঘরে তোলার জন্য- বাংলাদেশে বিপ্লবকে যদি আপনার সুসংহত করতে হয়, তাহলে যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। আমরা বারবার বলছি, নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করে অতি দ্রুত একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। একমাত্র এটাই সংকট নিরসন করতে পারে।

বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি নেতারা ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করেন, যেখানে তারা জাতীয় ঐক্যের ওপর জোর দেন। তারা আপাতত রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বিরুদ্ধে, বৈঠক থেকে সেই বার্তাই দেওয়া হয়।

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা রাষ্ট্রপতির অপসারণকে কেন্দ্র করে কোনো নতুন জটিলতা চাই না, যেহেতু আমরা একটি সংকটময় সময় পার করছি। কোনো নতুন জটিলতা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে। তাই, বিএনপি যা বলেছে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও সেটাই।

সেদিন বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও মোহাম্মদ শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গেও বৈঠক করে একই বার্তা দিয়েছে। জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করে এমন কোনো পদক্ষেপ তারাও চান না।

তিনি বলেন, আমরা বিএনপির অবস্থানের সঙ্গে অনেকটাই একমত। আমরা একটি সুস্পষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ চাই।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেছেন, 'আমরাও মনে করি সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। আমরা বিএনপির সঙ্গে একমত পোষণ করি।'

তবে এ ব্যাপারে দলীয় পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি বলেও জানান তিনি।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বলেন, রাষ্ট্রপতি যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করেন, তাহলে তাকে অপসারণের কোনো উদ্যোগ বিদ্যমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলবে এবং তা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে। আমরা এই মুহূর্তে এই ধরনের কোনো জটিলতা চাই না।

তিনি অবশ্য বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের আনুষ্ঠানিক অবস্থান নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

গত ২৩ অক্টোবর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের তিন নেতা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন। তারা রাষ্ট্রপতির অপসারণের ফলে সম্ভাব্য সাংবিধানিক সংকটের বিষয়ের কথা তুলে ধরেন।

Comments

The Daily Star  | English

BNP not in favour of banning any political party: Fakhrul

'Who are we to ban a political party? The people will decide,' says the BNP leader

40m ago