সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা ৩২ ‘ভালো’, তিনবার পরীক্ষার সুযোগ ‘চমৎকার’ সিদ্ধান্ত

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ বছর করাকে তুলনামূলক 'ভালো' সিদ্ধান্ত হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। তবে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারী নিয়োগে এত বেশি বয়স থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন কেউ কেউ।

তারা বলছেন, চাকরিতে প্রবেশে ছেলে ও মেয়েদের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৩৫ ও ৩৭ করার সিদ্ধান্তটি সুচিন্তিত ছিল না। কিন্তু সরকার ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে।

বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার বয়স ৫৯ বছরই থাকছে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, 'উপদেষ্টা পরিষদের এই সিদ্ধান্ত তুলনামূলক ভালো হয়েছে। এ সংক্রান্ত কমিটি যখন সরকারি চাকরিতে প্রবেশে ছেলেদের জন্য ৩৫ বছর এবং মেয়েদের জন্য ৩৭ বছর সুপারিশ করেছিল, তখন অনেকটা আশাহত হয়েছিলাম।'

তিনি বলেন, 'সরকারি চাকরিতে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা এবং এখন ট্রেনিং করাতে গিয়ে দেখছি, বেশি বয়সী প্রার্থীরা প্রতিযোগিতায় তেমন ভালো করতে পারেন না। এর মধ্যেও যারা উত্তীর্ণ হন, তারা ট্রেনিং ও কর্মকালে তরুণ প্রার্থীদের তুলনায় পিছিয়ে থাকেন।'

এক প্রশ্নের জবাবে মোশাররাফ হোসাইন বলেন, 'সবাইকে বিসিএসে টিকতে হবে, সরকারি চাকরি করতে হবে—এমন চিন্তা থাকা উচিত নয়। সরকারের এত বেশি চাকরির সুযোগ তৈরি করাও সম্ভব নয়। সরকার বেসরকারি খাতকে বিভিন্নভাবে সুবিধা তৈরি করে দেবে, যাতে বিপুল সংখ্যক কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। সেইসঙ্গে উদ্যোক্তা তৈরি হয় এমন সুযোগ সৃষ্টি করাও সরকারের দায়িত্ব। এভাবেই ভারসাম্য তৈরি করতে হবে।'

বিসিএস পরীক্ষায় তিনবার অংশগ্রহণের সুযোগকে চমৎকার সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও লেখক ফিরোজ মিয়া

সাবেক এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, 'যে চাকরি প্রার্থী তিনবারের মধ্যে বিসিএসে উত্তীর্ণ না হতে পারে, তার ভিন্ন পরিকল্পনায় যাওয়া উচিত।'

তবে সব চাকরির ক্ষেত্রে এত বেশি বয়স প্রযোজ্য হওয়া উচিত নয় বলেও মত ফিরোজ মিয়ার।

তিনি বলেন, 'যেসব চাকরির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ যোগ্যতা এইচএসসি নির্ধারণ করা আছে, সেই প্রার্থীদের চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ ২৬ থেকে ২৭ বছর পর্যন্ত থাকা উচিত।'

এ ক্ষেত্রে ফিরোজ মিয়ার যুক্তি, 'এইচএসসি যোগ্যতার চাকরিপ্রার্থীরা ১৮-১৯ বছর বয়সেই সেটা অর্জন করে ফেলেন। কারণ, তাদের সেশন জটের ঝামেলা নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'যারা অনার্স বা মাস্টার্স পাস করার পরও ভালো চাকরি পান না, তারা চাকরির শেষ বয়সে গিয়ে কম যোগ্যতার চাকরিতে যোগ দেন। বর্তমানে অনেক দপ্তর-সংস্থায় পিয়ন পদে অনার্স-মাস্টার্স পাস করা ছেলে-মেয়েরা ঢুকছে। এত কম বেতনে চাকরিতে যোগ দিয়ে তারা হতাশায় ভোগেন, ফলে কাজে মনোযোগ থাকে না।'

এক প্রশ্নের জবাবে ফিরোজ মিয়া বলেন, 'সরকার প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চাকরির বয়স ৩২ বছর করার বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তাতে একটা বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। যেমন: বর্তমানে বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে যারা চাকরিপ্রার্থী হিসেবে প্রতিযোগিতা করেন, তাদের জন্য বিশেষ বয়স ছাড় দেওয়া হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেই সুযোগ থাকবে কি না, পরিষ্কার নয়।'

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কারো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সরকারি চাকরির বয়সের বিষয়ে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হয়েছিল ১৯৯২ সালে। সেটাই এখনো বহাল আছে। এতে বিভাগীয় প্রার্থীদের বয়সের কথা উল্লেখ নেই। কারণ, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ-বিধিতে সেটা উল্লেখ আছে।

তিনি বলেন, 'তারপরও যদি এ বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে, সেটা পরিপত্রের মাধ্যমে সমাধান করার সুযোগ আছে।'

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন চাকরির বয়স নতুন করে নির্ধারণের বিষয়ে বলেন, 'বিসিএস পরীক্ষায় তিনবারে সুযোগ সীমিত করার উদ্যোগটি খুবই ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে (অতিরিক্ত সচিব, বিধি) থাকার সময় এ সংক্রান্ত উদ্যোগের কথা একাধিকবার ভাবা হয়েছিল। এখন সেটার বাস্তবায়ন দেখে ভালো লাগছে।'

তার মতে, 'চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো হয়তো সরকারের ভাবনায় ছিল না। তারপরও তরুণদের চাওয়াকে সরকার মূল্যায়ন করেছে। এর মাধ্যমে চাকরিতে প্রবেশের বয়সে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সঙ্গে অসমতা ছিল, এখন সেটা সবার জন্য সমান হতে যাচ্ছে।'

সর্বোচ্চ তিনবার বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগের সিদ্ধান্ত নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বয়সসীমা বাড়ানো সংক্রান্ত কমিটির সিদ্ধান্তে এমন সুপারিশ ছিল না। উপদেষ্টা পরিষদের এই সিদ্ধান্ত তরুণদের ক্ষুব্ধ করে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হতে পারে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Air Force jet crashes into college campus in Uttara; casualties feared

Members of Bangladesh Army and eight engines of Fire Service and Civil Defence are conducting rescue operations

1h ago