মামলা নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে আইনজীবীদের বাকবিতণ্ডা, এজলাস থেকে নেমে গেলেন বিচারক

চট্টগ্রাম আদালত। ছবি: সংগৃহীত

মামলা দায়ের করা নিয়ে আদালতের এজলাসে আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারকের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর আদালত থেকে নেমে গেছেন মেট্রোপলিটন আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটরা। আজ মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত মেট্রোপলিটন আদালতে কোনো বিচারককে দেখা যায়নি। হয়নি মামলার শুনানি ও বিচারিক কার্যক্রম।

আজ দুপুর ১২টার দিকে মেট্রোপলিটন দ্বিতীয় ম্যাজিস্ট্রেট অলিউল্লাহর আদালতে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ঘটনা ঘটে।

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আশরাফ হোসাইন রাজ্জাক এই সময়ে অলিউল্লাহর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এর পরপরই আদালত থেকে নেমে যান বিচারক অলিউল্লাহ। এর প্রতিবাদে অন্য আদালতের বিচারকরাও এজলাস থেকে নেমে যান৷

ঘটনার সময় আইনজীবীরাও আদালতের ভেতরে স্লোগান দেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

আদালত সূত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গত ১৭ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, গুলিবর্ষণ ও মারধরের ঘটনায় ১২৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করেন সোয়াইবুল হক চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি। বাদীর পক্ষে মামলার আর্জি জমা দেন আইনজীবী রাজ্জাক ও অন্যান্যরা। বিচারক তখন বাদীকে কয়েকজন আসামির নাম এবং ঘটনা সম্পর্কে বলতে বলেন। কয়েকটি নাম বলার পর বাদী আর নাম বলতে না পারায় তখন বিচারক তাকে প্রশ্ন করেন। সেই সময় আইনজীবী রাজ্জাক বিচারকের সঙ্গে নাম বলা নিয়ে তর্কে জড়ান এবং আদালতকে মামলাটিকে সরাসরি থানাকে এফআইআর হিসেবে নিতে আদেশ দিতে বলেন। পরে আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এটি নিয়ে আইনজীবী রাজ্জাক এবং বিচারকের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এক পর্যায়ে আদালত থেকে নেমে যান বিচারক অলিউল্লাহ।

এরপর আইনজীবীরা একত্রিত হয়ে স্লোগান দেন৷ পরে বিচারক অলিউল্লাহকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রবিউল আলমের খাস কামরায় নিয়ে যাওয়া হয়।

দুপুর ১টার দিকে বিচারক অলিউল্লাহর আদালতের সামনে গিয়ে আইনজীবীদের জটলা দেখা গেছে। তবে এই বিষয়ে আদালতের কেউ কোনো মন্তব্য করেননি। আইনজীবীরা এই ঘটনায় 'বিচারক আইনজীবীদের কটূক্তি করেছেন' অভিযোগ এনে তাকে অপসারণের দাবি তুলেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিচারক আসামিদের নাম জানতে চাইলে আসামি দুই-তিনজনের নাম বলে আর কারো নাম বলতে পারেননি। পরে আইনজীবী রাজ্জাক বিচারককে বাধা দিয়ে বলেন, তার মক্কেল আর কোনো নাম বলবে না। আপনি এফআইআরের আদেশ দিন। তখন বিচারক বলেছিলেন, তিনি কী আদেশ দেবেন, সেটার তার নিজস্ব বিষয়। তিনি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে ওই আইনজীবী উত্তপ্ত হয়ে পড়লে আদালত থেকে নেমে যান বিচারক।'

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আইনজীবী রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, 'বিচারক ১২৬ জন আসামির নাম বলতে বলেছিলেন, কারা কী করেছে সেটিও বলতে বলেন। তখন আমরা তাকে বলেছি, আমরা প্রমাণ দিয়েছি আপনি আদেশ দেন। তখন বিচারক বলেছেন, তিনি আদেশ দেবেন না। তখন আমরা বলি আমরা তাহলে উপরের কোর্টে যাব।'

'পরে তিনি পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দিলেন। আমরা যে আদেশ চেয়েছি, সেই আদেশ পাইনি। পরে তিনি আমাদের কটূক্তি করেছেন। তিনি বলেছেন, আমার কোর্টে এ ধরনের আচরণ করবেন না, এই ধরনের মামলা আনবেন না, জোর চালাবেন না বলেই তিনি আদালত থেকে নেমে গেছেন', বলেন তিনি।

রাজ্জাক অভিযোগ করেছেন, আগেও বিচারক অলিউল্লাহ সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন।

'আমরা ওনার অপসারণ চাই', বলেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে বিকেলে আদালতে আইনজীবী নেতাদের সঙ্গে বিচারকদের বসার কথা আছে।

সোয়াইবুলের অভিযোগে চট্টগ্রাম-৮ এর সাবেক সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম, চসিকের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চান্দগাঁও সাবেক কাউন্সিলর এসরারুল হক, সাবেক বিএমএ ও আওয়ামী লীগ নেতা ডাক্তার ফায়সাল ইকবাল চৌধুরী, ডা. বিদুত বড়ুয়াসহ অনেকের নাম আছে।

মামলার আর্জিতে বলা হয়, আসামিরা গত ১৭ জুলাই নগরীর মুরাদপুরে রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ এবং এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। এতে বাদীসহ আরও অনেকে আঘাত পান এবং চমেক হাসপাতালে যান। পরবর্তীতে গুলিবিদ্ধ নয়জন মারা যান এবং আহত অনেকে ভিড়ের কারণে চমেকে চিকিৎসা নিতে পারেননি। পরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা নেন। গত ৬ অক্টোবর চমেকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার পায়ের গুলি বের করা হয়।

তবে ১৭ জুলাই চট্টগ্রামের কোনো স্থানে বড় কোনো সংঘর্ষের সংবাদ পাওয়া যায়নি। যদিও ১৬ জুলাই বিকেলে মুরাদপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। ১৮ জুলাই বিকেলে বহদ্দারহাটে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মী এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন দুইজন।

অভিযোগের বিষয়ে সোয়াইবুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আপনি আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন। অনেক আগের ঘটনা আমার মনে নেই। আমি গুলি খেয়েছিলাম। পরে অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হয়েছে।'

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দীন চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, ওই ঘটনার পর বিকেলে আমরা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেনের সঙ্গে বসেছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, ওই বিচারককে (অলিউল্লাহ) সাময়িকভাবে ছুটিতে পাঠানো হবে।

তবে, বিষয়টি নিয়ে আদালতের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Comments

The Daily Star  | English
Attack on Bangladesh mission in Agartala

India must protect Bangladesh's diplomatic missions

Hostile rhetoric, mobilisations by Hindutva groups fuelling unrest

18h ago