শেষ সময়ের গোলে পাকিস্তানের সঙ্গে ড্র করে আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ
রক্ষণভাগের ভুলে প্রথমার্ধে গোল হজম করে বসল বাংলাদেশ। এরপর পাকিস্তানের জমাট রক্ষণ ও নিজেদের ফরোয়ার্ডদের ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায় বারবার ব্যর্থ হতে লাগল তাদের আক্রমণ। অবশেষে উল্লাসের মুহূর্ত এলো দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে। স্বস্তির ড্রয়ের পাশাপাশি নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
রোববার নেপালের কাঠমুন্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে 'এ' গ্রুপে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ম্যাচ শেষ হয়েছে ১-১ সমতায়। ৩১তম মিনিটে জাহমিনা মালিকের লক্ষ্যভেদে এগিয়ে যায় পাকিস্তানিরা। আর শামসুন্নাহার জুনিয়রের কল্যাণে বাংলাদেশিরা সমতাসূচক গোল পায় খেলার শেষ বাঁশি বাজার চার মিনিট আগে।
সাফের শিরোপাধারী বাংলাদেশ গত আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ২০২২ সালের সেই গৌরবময় অর্জনের পথে পাকিস্তানকে গ্রুপ পর্বে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন সাবিনা খাতুন-ঋতুপর্ণা চাকমা-মনিকা চাকমারা। তবে এবার তাদের বিপক্ষে হার এড়াতে ঘাম ছুটে গেছে পিটার বাটলারের শিষ্যদের।
৩ পয়েন্ট নিয়ে 'এ' গ্রুপে শীর্ষে রয়েছে ইতোমধ্যে সেমিতে ওঠা ভারত। তারা পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছিল ৫-২ গোলে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অর্জন সমান ১ পয়েন্ট করে। আগামী বুধবার এই গ্রুপের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও ভারত। ওই ম্যাচ ড্র করলেও সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত হবে মেয়েদের। এমনকি ২ গোলের বেশি ব্যবধানে না হারলেও বাংলাদেশ পেয়ে যাবে সাফের শেষ চারের টিকিট।
পাল্টা আক্রমণনির্ভর কৌশল বেছে নেওয়া পাকিস্তানের গোলমুখে বাংলাদেশ হানা দেয় বারবার। তারা ১৬টি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখে সাতটি। কিন্তু একবারই কেবল বল অতিক্রম করে গোললাইন। অন্যদিকে, বাংলাদেশের গোলপোস্টে পাকিস্তানের নেওয়া চারটি শটের দুটি ছিল লক্ষ্যে।
দৈহিক গড়ন ও উচ্চতায় বাংলাদেশের ফুটবলারদের চেয়ে এগিয়ে পাকিস্তানের ফুটবলাররা। তাছাড়া, পাকিস্তান দলে আছেন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে বেড়ে ওঠা কয়েকজন খেলোয়াড়। তাদেরকে নিয়ে রক্ষণে দৃঢ়তা বজায় রেখে খেলতে থাকে পাকিস্তান। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আরও রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে তারা। তবে হাল না ছাড়া বাংলাদেশ শেষমেশ গোল ঠিকই আদায় করে নেয়।
৩১তম মিনিটে রামিন ফারিদের উঁচু করে বাড়ানো বল বিপদমুক্ত করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেলেন ডিফেন্ডার শিউলি আজিম। বল পেয়ে যান তার পাশে থাকা ফরোয়ার্ড জাহমিনা। ততক্ষণে গোলপোস্ট ছেড়ে এগিয়ে এসেছিলেন গোলরক্ষক রূপনা চাকমা। তাকে ফাঁকি দিয়ে নিশানা ভেদ করে পাকিস্তানকে এগিয়ে দেন জাহমিনা। বাংলাদেশ যদিও সমতায় ফিরতে পারত বিরতির আগেই। কিন্তু হতাশায় পুড়তে হয় তাদের। ৪৩তম মিনিটে মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণার ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া বাঁ পায়ের শট বাধা পায় পোস্টে।
প্রথমার্ধে ঘটে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও। ঋতুপর্ণার ক্রসে শামসুন্নাহার জুনিয়র হেড করতে যাওয়ার সময় সংঘর্ষ হয় পাকিস্তানের গোলরক্ষক নিশা আশরাফ ও অধিনায়ক মারিয়া খানের সঙ্গে। এতে খেলা বন্ধ থেকে কিছুক্ষণ। পরে মাথায় ব্যান্ডেজ করে মাঠে ফেরেন শামসুন্নাহার জুনিয়র ও মারিয়া।
৭৭তম মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে পাকিস্তান। অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে জাহমিনার রক্ষণচেরা পাস নিয়ন্ত্রণে নেন মিডফিল্ডার আমিন হানিফ। কিন্তু তিনি শট নেওয়ার আগেই দ্রুত পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে বল লুফে নেন রূপনা। হাঁফ ছেড়ে বাঁচা বাংলাদেশ অবশেষে গোল পায় দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা ছয় মিনিটের দ্বিতীয় মিনিটে। গতিতে সানাহ মেহেদীকে পেরিয়ে বাঁ দিক থেকে গোলমুখে ক্রস করেন ঋতুপর্ণা। জটলার মধ্যে হেড করে জাল কাঁপিয়ে বাংলাদেশকে হার থেকে বাঁচান ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার জুনিয়র।
Comments