ফারুকের ‘ইগোর’ কারণেই কি বরখাস্ত হচ্ছেন হাথুরুসিংহে?

Faruque Ahmed & Chandika Hathurusingha

এমনটা বলাই যেতে পারে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদ কৌশলেই সরিয়ে দিয়েছেন জাতীয় দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি সেটা বাস্তবায়ন করতে মূলত কিছু উপায় খুঁজেছেন ও সুযোগের অপেক্ষা করেছেন।

মঙ্গলবার মিরপুরে সংবাদ সম্মেলনে ফারুক হাথুরুসিংহেকে সাসপেন্ড করার দুটি শৃঙ্খলা-ভঙ্গের কারণ উল্লেখ করেন ফারুক। একটি ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে একজন ক্রিকেটারকে হেনস্থা করা, দ্বিতীয়টি বোর্ডকে না জানিয়ে বরাদ্দের বাইরে ছুটি কাটানো।

ফারুক সাসপেনশনের যে কারণ জানিয়েছেন তাতে বিভ্রান্তির কমতি ছিলো না। হাথুরুসিংহেকে তিনি একদিকে কারণ দর্শানোর জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন, যেটাকে তিনি বলছেন আন্তর্জাতিক নর্ম। আবার বলছেন এই সাসপেনশনের পর দ্রুতই তাকে স্থায়ী বরখাস্ত করা হবে। একই সঙ্গে নতুন কোচ হিসেবে ফিল সিমন্সের নামও জানিয়ে দেন তিনি।  অর্থাৎ হাথুরুসিংহেকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েই সব করেছে বিসিবি। সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তাহলে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেওয়ার অর্থটা আসলে কি? এটা কি আদতে কোন অর্থ বহন করে?

ফারুক বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এসব সিদ্ধান্ত জানানোর আগে সকালেই জাতীয় দলের অনুশীলনে ছিলেন হাথুরুসিংহে। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন এমন অপমানের পরিবেশ তৈরি করলেন?

হাথুরুহিংহেকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে দলের পারফরম্যান্সের কোন সম্পর্ক না থাকার কথাও জানিয়েছেন ফারুক। ভারত সফরে দল খারাপ করলেও এটার দায় কোচকে দিচ্ছেন না তিনি।

যে কারণে হাথুরুসিংহেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে তার একটি এক বছর পুরনো। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে একজন ক্রিকেটারকে কোচ শারীরিকভাবে হেনস্থা করেছেন বলে প্রমাণ পেয়েছেন ফারুক। তিনি 'আক্রান্ত' ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলেছেন, একজন চাক্ষুষের সঙ্গেও কথা বলেছেন বলে জানান। তবে অভিযুক্ত কোচের সঙ্গে একবারও কথা বলেননি,  'আমি তার সঙ্গে কথা বলিনি। বিসিবির প্রধান নির্বাহী (নিজামউদ্দিন চৌধুরী) আমার পক্ষ থেকে তার সঙ্গে কথা বলে শো-কজ লেটার ধরিয়ে দিয়েছেন।'

ফারুক জানান, তিনি নিজে তদন্ত করেছেন। আগের বোর্ড প্রধানের সময়কার তদন্ত কমিটির রিপোর্টেও এই ঘটনা ছিলো। মজার কথা হলো, সেই তদন্ত কমিটির সদস্যরা বর্তমান বোর্ডেও আছেন। তখন তাদের রিপোর্টে যদি এটা থেকে থাকে থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেননি কেন তারা?

সেই তদন্তেও ঘটনাটি কীভাবে ছিলো, কতটা প্রমাণিত ছিলো তা স্পষ্ট করেননি বর্তমান বিসিবি সভাপতি। একটি গণমাধ্যমকে বোর্ড প্রধান জানান, ওই ক্রিকেটারকে হাথুরুসিংহে চড় মারেননি, তবে জার্সি টেনে ধরেছিলেন। সেটার সত্যতা সম্পর্কে কতটা নিশ্চিত হওয়া গেছে তা স্পষ্ট নয়। কারণ কোন তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি।

আরেকটি অভিযোগও সাম্প্রতিক নয়। হাথুরুসিংহে তার দুই বছরের দায়িত্বের সময় বরাদ্দের বাইরে ছুটি কাটিয়েছেন বিসিবিকে না জানিয়ে। এটাও শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে দেখছেন ফারুক। ২০২৩ বিশ্বকাপের ঘটনা ও ছুটির ইস্যুই কারণ হয়ে থাকলে প্রশ্ন আসবে পাকিস্তান সফরের সময়েই কেন এই সিদ্ধান্ত আসেনি? এই দুই কারণ তো তখনো ছিলো।

পাকিস্তান সফরের পর ভারত সফরেও কেন তাকে কোচ রাখা হয়েছিলো? তাহলে কি বলা যায় পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে জিতে যাওয়াতেই কি তখন হাথুরুসিংহেকে সরানোর সুযোগ আসেনি? প্রশ্ন উঠতে পারে, সুযোগের অপেক্ষাতেই কি ছিলেন ফারুক?

বর্তমান সভাপতি ফারুকের সঙ্গে হাথুরুসিংহের বিরোধ বেশ পুরনো। এবং এই বিরোধ গোপন কিছুও নয়। ২০১৫ সালে ফারুক প্রধান নির্বাচক থাকার সময় দল নির্বাচন নিয়ে তৈরি হয় দ্বন্দ্ব। দ্বি-স্তর বিশিষ্ট নির্বাচক কমিটি করার প্রতিবাদে তখন পদত্যাগ করেছিলেন ফারুক। এরপর বোর্ডের বাইরে থেকে হাথুরুসিংহের কঠোর সমালোচনা করে গেছেন তিনি।

দ্বিতীয় দফায় এই লঙ্কান কোচ বাংলাদেশে এলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কড়া সমালোচনা করেন ফারুক। এবার রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে তিনি যখন বিসিবির ক্ষমতায় আসছেন তখনই আবার মুখ খুলেন। নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার কয়েকদিন আগেই একটি সাক্ষাতকারে জানান, দায়িত্ব পেলে হাথুরুসিংহেকে তিনি এক মুহূর্ত কোচ রাখতে চাইবেন না। দায়িত্ব নেওয়ার পরও একই অবস্থান ব্যক্ত করেন।

অর্থাৎ ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে তিনি আগে থেকেই এই কোচের ব্যাপারে বিরূপ মনোভাবাপন্ন ছিলেন। বিসিবি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর একবারও জাতীয় দলের কোচের সঙ্গে কথা বলার দরকার মনে করেননি। তিনি যদি হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগের তদন্ত করেন তাহলে সেটার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক।

হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করা নিয়ে পুরো এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটা অস্বাস্থ্যকর দৃষ্টান্ত তৈরি করল। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তিও প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল। আগামীতে কোচ হিসেবে যারাই বাংলাদেশ ক্রিকেটে কাজ করবেন তারা কাজের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে পারেন, দ্বিধা ও সংশয় নিয়ে কাজ করতে পারেন। যা একটি দল ও দেশের জন্য ভালো উদাহরণ নয়।

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

3h ago