‘ছাত্র নামধারী বিবেকহীনদের জন্য নিরপরাধ প্রাণটা চলে গেল’

তোফাজ্জল। ছবি: সংগৃহীত

'আহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! ছাত্র নামধারী বিবেকহীনদের জন্য আজকে একটি নিরপরাধ প্রাণ চলে গেল, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলঙ্কিত হলো।'

বুধবার রাতে ঢাবির ফজলুল হক মুসলিম পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে তোফাজ্জলকে (৩০)। তার প্রতিবেশী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী আরিফুজ্জামান আল ইমরান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই কথাগুলো লিখেছেন।

তোফাজ্জলের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা যায়, তিনি ছিলেন মেধাবী। তবে, প্রেমসংক্রান্ত বিষয়ে আঘাত পেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এরপর মা, বাবা ও একমাত্র বড় ভাই মারা যাওয়ার পর পরিবার ও অভিভাবকহীন হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন।

তোফাজ্জল বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। এক সময় তিনি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতিও ছিলেন।

দুই ভাইয়ের মধ্যে তোফাজ্জল ছিলেন ছোট। বড় ভাই নাসির উদ্দিন পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ছিলেন। ২০২৩ সালের ৭ এপ্রিল লিভার সিরোসিস রোগে তিনি মারা যান। এর আগে ২০১১ সালে তোফাজ্জলের বাবা আব্দুর রহমান ও ২০১৪ সালে মা বিউটি বেগম মারা যান।

আরিফুজ্জামান আল ইমরান তার ফেসবুকে তোফাজ্জল সম্পর্কে লিখেছেন, 'এই ছেলেটি বেশ সজ্জন, পরোপকারী ছাত্রনেতা ছিল। ব্যক্তিগত জীবনে প্রেমসংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় প্রথমে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারায়। এর কিছুদিনের মধ্যে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে তোফাজ্জলের মা, বাবা ও একমাত্র বড় ভাই মারা যান। তোফাজ্জল পরিবার ও অভিভাবক শূন্য হয়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে গত তিন-চার বছর ধরে।'

তিনি আরও লিখেছেন, 'বিগত দুই থেকে তিন বছর তোফাজ্জল প্রায়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াত। আমাদের এলাকার যারা ওকে চিনত, সবাই সহযোগিতা করতো। ক্যাম্পাসে আমাকে দেখলেই দৌড়ে এসে কুশল বিনিময় করতো। আমি দেখা হলে ওকে খাবার খেতে বলতাম বা খাওয়ার জন্য টাকা দিতাম অথবা ও মাঝে মধ্যে চেয়ে নিতো। খাবার ও খাবার টাকার বাইরে ওর তেমন কোনো চাহিদা ছিল না।'

পিরোজপুরের সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে বাংলা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন তোফাজ্জল। পাস করার অল্প কিছুদিন পর থেকেই তার মধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। একপর্যায়ে তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

অবশেষে গতকাল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একদল শিক্ষার্থী পিটিয়ে হত্যা করে তোফাজ্জলের ভবঘুরে জীবনের সমাপ্তি টেনে দেয়।

এলাকার মানুষ তোফাজ্জলের এমন মৃত্যুর খবর মেনে নিতে পারছে না। তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী শরীফা আক্তার বলেন, 'মানসিক সমস্যা থাকায় সে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। তাই বলে তাকে হত্যা করতে হবে? আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।'

তোফাজ্জল হত্যার বিচার চান তার চাচা ফজলুল হকও।

তোফাজ্জলের চাচাতো ভাই ফারুক হোসেন বলেন, 'আজ সকালে শুনেছি তোফাজ্জলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এখন ঢাকা মেডিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া হয়েছে তার মরদেহ। সেখানে আমাদের চাচাতো ভাই শাহাদাত হোসেন আছেন। থানার আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাড়ির উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Apparel Buyers Delay Price Increases Post-Wage Hike Promise

Garment exports to US grow 17%

Bangladesh shipped apparels worth $5.74 billion in the July-March period to the USA

7h ago