ডোনাল্ড লুর সফর: ঢাকা-ওয়াশিংটন বৈঠকে ‘বহুমাত্রিক’ আলোচনা

ডোনাল্ড লু। ছবি: রয়টার্স

গত ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর প্রথমবারের মতো মার্কিন প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে। বাংলাদেশ তাদের স্বাগত জানানোর প্রস্তুতির পাশাপাশি বহুমাত্রিক আলোচনার জন্য অপেক্ষা করছে।

সফরের আগে পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, 'বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র যে গুরুত্ব দেয়, (এই মেয়াদে) প্রথম প্রতিনিধি দলের আগমন তার একটি বড় উদাহরণ। এ থেকে বোঝা যায় যে, এই আলোচনা হবে বহুমাত্রিক। এটি শুধু একটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।'

আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি দলটি ঠৈঠক করবেন বলে এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানিয়েছেন।

এ ছাড়া, পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও বৈঠক করবে বৈঠক করবে প্রতিনিধি দলটি।

পররাষ্ট্র সচিব জসিম একটি মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করবেন, যেখানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের প্রয়োজনে সহায়তা করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করবেন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশি কর্মকর্তারা।'

আলোচনার সুনির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, 'আলোচনা শুরুর আগে আমি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে চাই না, যা আলোচনার স্বাভাবিকতাকে ক্ষুণ্ন করবে।'

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু প্রতিনিধি দল নিয়ে বাংলাদেশ সফর করবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব জসিম বলেন, সরকার সবার সঙ্গে পারস্পরিক সুবিধাজনক সম্পর্কের দিকে যেতে চায়।

তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের আন্তর্জাতিক বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে। সফরে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লু 'আমাদের অংশীদারদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতার প্রচারে' যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবেন।

ঢাকায় লু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বৈঠকের জন্য একটি আন্তঃসংস্থা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগ দেবেন।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব দ্য ট্রেজারি, ইউএসএআইডি ও অফিস অব দ্য ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের প্রতিনিধি দল শনিবার ঢাকায় পৌঁছাবে।

পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল।

পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের যেকোনো সফর সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব ডিফেন্স লিন্ডসে ডব্লিউ ফোর্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি বা অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ফর ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স ব্রেন্ট নেইম্যান মার্কিন প্রতিনিধি দলে থাকবেন।

এই ভূমিকায় ফোর্ড এই অঞ্চলের জন্য প্রতিরক্ষা কৌশল এবং পরিকল্পনার বিকাশ ও বাস্তবায়ন সম্পর্কিত সমস্ত নীতিগত বিষয়গুলোর জন্য প্রতিরক্ষা বিভাগের মধ্যে জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন।

তার দায়িত্বের ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান বাদে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এবং অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সুরক্ষা সম্পর্ক।

নেইম্যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থের ডেপুটি-আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, তারা অর্জনযোগ্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন এবং জোর দেন যে মার্কিন ভিসা নীতি দুই দেশের সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে না।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা লেভেল-৪ থেকে কমিয়ে লেভেল-৩ এ নামিয়ে নাগরিকদের ভ্রমণ পুরোপুরি বন্ধ না করে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। এই সমন্বয় মার্কিন নাগরিকদের জন্য তাৎক্ষণিক হুমকি কমার ইঙ্গিত দেয়।

মার্কিন প্রতিনিধি দলের নির্ধারিত বাংলাদেশ সফরের কিছুক্ষণ আগে সংশোধিত এই পরামর্শ জারি করা হয়।

জুলাই ও আগস্টে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে যুক্তরাষ্ট্র তার নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে নিষেধ করে এই মাত্রা ৪-এ উন্নীত করা হয়েছিল, যা সর্বোচ্চ স্তর।

সর্বশেষ ভ্রমণ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, 'নাগরিক অস্থিরতা, অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের কারণে বাংলাদেশ ভ্রমণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করুন। কিছু এলাকায় ঝুঁকি বেড়েছে।' যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে 'নাগরিক অস্থিরতা, সহিংস সংঘর্ষ' অনেকাংশে শেষ হয়েছে, তবে স্বল্প সময়ের ঘোষণায় পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে।

মার্কিন নাগরিকদের সব ধরনের জমায়েত, এমনকি শান্তিপূর্ণ জমায়েত এড়িয়ে চলার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহায়তা করতে পারে তা নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা করবে। কারণ কয়েক দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানাবে ঢাকা।

Comments

The Daily Star  | English

BB tightens loan classification rules to meet IMF conditions

Payment failure for three months or 90 days after the due date will now lead to classification of loans regardless of type, according to new rules announced by the central bank yesterday, aligning with international best practices prescribed by the International Monetary Fund (IMF).

3h ago