অন্তর্বর্তী সরকারে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব প্রয়োজন

গত ১১ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের একটি কারখানার ওয়্যারহাউসে আগুন দেওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত

গত ৯ সেপ্টেম্বর দ্য ডেইলি স্টার আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় উৎপাদন, ব্যাংকিং ও তথ্য-প্রযুক্তিসহ (আইটি) বিভিন্ন শিল্প খাতের শীর্ষ নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সহায়তা চেয়ে জরুরি আবেদন জানিয়েছেন। তাদের মতে, এই মুহূর্তে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পুলিশের স্বাভাবিক উপস্থিতি না থাকা এবং শিল্প এলাকায় সার্বিকভাবে নিরাপত্তার অভাবে খানিকটা নিরুপায় হয়েই তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতির অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা পাঁচটি শিল্প অঞ্চলের কথা উল্লেখ করেছেন—আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা। এই পাঁচ এলাকায় আমাদের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাতের ভিত্তিমূল, যার সুরক্ষা দেওয়া সর্বোচ্চ প্রাধান্যের বিষয়। সাধারণত তারা সেনাবাহিনীর সহায়তা চান না। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আকস্মিক পরিবর্তনের কারণে এখন তারা এটাকে জরুরি প্রয়োজন হিসেবে দেখছেন।

ওই এলাকাগুলোতে সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বাস্তবতা হলো, আগের সরকারের আমলে নিজেদের ভূমিকার কারণে পুলিশ ব্যাপকভাবে বিতর্কিত এবং তারা জনসম্মুখে যেতে ও প্রয়োজন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধায় পড়ছে। পুলিশের এই আচরণে আমাদের কারখানাগুলোতে তাণ্ডব চালানো অপরাধীচক্র নিঃসন্দেহে ভুল বার্তা পাচ্ছে।

জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে গিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকতে চাওয়া সরকারের পতনের পর এক ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশকে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করায় এই বাহিনীর প্রতি সবার ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিক হিসাব মতে, প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ পুলিশের কতিপয় সদস্যের নির্বিচার গুলিতে নিহত হয়েছেন। এর ফলে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের ঘৃণা আরও হাজার গুণ বেড়েছে। আমাদের সীমান্তরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনী বিজিবি—অতিরিক্ত জনসমাবেশ বা বিক্ষোভ মোকাবিলায় যাদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই—সেই বাহিনীকে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অংশে বিক্ষোভ মোকাবিলায় মোতায়েন করায় কোনো উপকার তো হয়নি, বরং বেড়েছে লাশের স্তূপ। এসব ঘটনায় জনমনে ক্ষোভ সঞ্চার হয়েছে এবং আগের সরকার ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার তীব্র ইচ্ছা জাগ্রত করেছে। দোসরদের মধ্যে অন্যতম রাজনীতিবিদরা, যাদের মধ্যে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর একটি অংশও অন্তর্ভুক্ত। তারা রাজনৈতিক পরিচয়ের সুবিধা নিয়ে দেশে লুটপাট চালানো ছাড়া আর কিছুই করেননি। সাবেক ক্ষমতাসীন সরকারের তথাকথিত 'বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা' এর এক উজ্জ্বল উদাহরণ, যাকে 'ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির প্রতিনিধি' হিসেবে আখ্যায়িত করাই বেশি উপযুক্ত। কারণ তিনি কখনো বেসরকারি খাতের সার্বিক মঙ্গলের জন্য কাজ করেননি। বরং পদমর্যাদার সুযোগ নিয়ে নিজের ও তার চাটুকারদের ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধি করেছেন।

এসব কারণে বেসরকারি খাত সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণাটি দাঁড়িয়েছে যে, এখানে সবাই অন্যায়ভাবে সুবিধাভোগী। এ ধরনের মনোভাব সমাজের একটি শ্রেণিকে প্রভাবিত করছে, বিশেষত, তরুণ-তরুণীদের। আবার সরকারের একটি অংশ এমন মত প্রকাশ-প্রচার করেছেন, যাতে মনে হয় অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে, আধুনিকায়ন করতে ও সার্বিকভাবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বেসরকারি খাতের ভূমিকার বিষয় সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকার অবগত নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে বেসরকারি খাতের কোনো প্রতিনিধি না থাকার ব্যাপারটিকে অনেকেই এই মন-মানসিকতার প্রতিফলন হিসেবে বিবেচনা করছেন। আমাদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির জন্য এই মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে এবং দ্রুতই তা করতে হবে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বেসরকারি খাত থেকে অন্তত একজন উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ জানাই।

এক্ষেত্রে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি মনে রাখতে হবে, তা হলো, বেসরকারি খাতের সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আগের সরকারের বদান্যতা পায়নি। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ছিলেন যারা নীতিনির্ধারণে প্রভাব রাখতেন এবং মূলত তারাই এ ধরনের সুবিধাগুলো পেতেন। বিপরীতে অসংখ্য ব্যবসায়ী তাদের সঙ্গে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ক্ষতির শিকার হন। তারা ঋণখেলাপি না করে এবং সময়মতো কর পরিশোধ করেও প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হয়েছেন। কারা প্রকৃতপক্ষেই বেসরকারি খাতের সদস্য, আর কারা স্বজনপ্রিয়তার সুযোগ নেওয়া উদ্যোক্তা—তাদের মধ্যে বিভাজন খুবই জরুরি এবং এই কাজটি দ্রুতই গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে।

মালিকদের ব্যক্তিগত পরিচয় যাই হোক না কেন, কারখানাগুলো জাতীয় সম্পদ। মালিকদের বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তারা কীভাবে এগুলো নির্মাণ করেছেন, সেটা বিবেচ্য বিষয়। তবে সেগুলো নির্মাণে ব্যক্তিগত সম্পদ না ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ ব্যবহার করা হয়েছে, তা না ভেবে সামগ্রিকভাবে সেগুলোকে বাংলাদেশের সম্পদ হিসেবেই দেখা উচিত। কিন্তু এই দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্বে নেওয়া হয়নি। এর অকাট্য প্রমাণ হলো সাবেক ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি বা যারা তাদের চাটুকারিতা করে অন্যায্য সুবিধা পেয়ে, সন্দেহজনক কর রেয়াত পেয়ে বা সুষ্ঠুভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কযুক্ত নয়, এমন অবৈধ কাজ করে সম্পদের মালিক হয়েছেন, তাদের মালিকানাধীন কারখানার প্রতি মানুষের প্রতিক্রিয়া।

হ্যাঁ, খুব সম্ভবত তাদের কেউই রাজনৈতিক সহায়তা ছাড়া সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলতে পারতেন না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাদের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানকে 'শত্রুর সম্পত্তি' হিসেবে বিবেচনা করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে, যেমনটি ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনায় আমরা দেখতে পেয়েছি। এ ধরনের কাজের সরাসরি প্রভাব হলো শ্রমিকদের চাকরির ওপর ঝুঁকি। কারখানা ধ্বংস হলে উৎপাদন অব্যাহত রাখার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। যার ফলে শ্রমিকদের চাকরি হুমকির মুখে পড়ে যায়। ভাঙচুরের পাশাপাশি কাঁচামাল ও মজুত রাখা পণ্য লুট এবং ক্ষেত্রবিশেষে, মেশিনারি ও যন্ত্রাংশও লুটে নেওয়ার ঘটনা এটাই চিহ্নিত করছে যে এখানে এমন সব গোষ্ঠী সংযুক্ত রয়েছে, যাদের কাছে জাতীয় স্বার্থের একবিন্দু মূল্যও নেই।

সব ধরনের স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, জাতীয় কোষাগার লুট ও ক্ষমতার অপব্যবহার সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। ত্রুটি যতই হোক এবং ভেতরে ভেতরে আমাদের যত দুর্বলতাই থাকুক না কেন, আমরা রপ্তানির পরিমাণ বাড়িয়েছি—কেউ কেউ হয়তো বলবেন, রপ্তানিকারকরা এমন সব ভর্তুকি ও কর সুবিধা পেয়েছেন, যা তাদের প্রাপ্য নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা নতুন নতুন বাজারে পৌঁছেছি এবং নতুন পণ্য উৎপাদনের প্রযুক্তি নিয়ে এসেছি, যা প্রকারান্তরে আমাদের রপ্তানির বাজারকে সম্প্রসারিত করেছে। আরও যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন হলেও সর্বশেষ তথ্যগুলো আমাদেরকে বলছে—অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার শক্তিশালী ও অকাট্য প্রমাণ রয়েছে।

দেশে এখন কিছু মৌলিক রূপান্তর ঘটতে যাচ্ছে। আমরা একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন বা পুরোনোটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার নিয়ে কথা বলছি। কিন্তু অর্থনীতির ক্ষেত্রেও সে ধরনের পরিবর্তন নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা চোখে পড়ছে না।

আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার প্রক্রিয়ায় মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করতে ও স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়াতে আমাদের ব্যাংকিং খাতের আইন ও নীতিমালায় জরুরি সংস্কার দরকার। শুরুতেই আমাদের উচিত ব্যাংকে পেশাদারি ব্যবস্থাপনা চালুর বিষয়টিকে বাধ্যতামূলক করা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ব্যাংকের পরিচালকদের ভূমিকা নির্ধারণ করা। বস্তুত, এটা নিশ্চিত করতে হবে যেন পরিচালকরা ছোট অংশীজন হয়েও নিজেদেরকে 'মালিক' ভাবতে না পারেন এবং আমানতকারীরাই যাতে প্রকৃত মালিক হতে পারেন। আমানতকারীদের অধিকার রক্ষার চর্চা এখনই যথাযথভাবে শুরু করতে হবে। ব্যাংকিং খাত ধ্বংসের বেশিরভাগ দায় পরিচালকদের ঘাড়েই বর্তায়।

গত কয়েক দশকে আমাদের অর্থনীতিতে অগ্রগতি হলেও সে অনুযায়ী কেন আমরা সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারিনি, তা নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। নিঃসন্দেহে এর পেছনে ব্যাপক দুর্নীতির ভূমিকা আছে। এ ছাড়া, অনেকগুলো আইন রয়েছে, যেগুলো উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করে। ব্যাংকের জটিলতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ভূমি নিবন্ধন, সব মিলিয়ে যেকোনো কাজ করতে বিলম্বের কারণে সামগ্রিক প্রক্রিয়াটিতে উপযোগিতার অভাব দেখা দিয়েছে। আমাদের সামনে যে সম্ভাবনা রয়েছে, সেটাকে কাজে লাগাতে হলে এই ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার।

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, যখন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার নিজের দেশে অথবা বিদেশে বিনিয়োগ করে—সেটা নিজের বা ব্যাংক থেকে ধার করা সম্পদ, যেটাই হোক না কেন—সে বিনিয়োগ করছে। তাদেরকে বৈধ মুনাফা অর্জন করার সুযোগ দেওয়া উচিত। একইসঙ্গে নিশ্চিত করা উচিত, সেটা যেন মাত্রাতিরিক্ত বা অন্যায্য না হয়। এই প্রক্রিয়ার পূর্বশর্ত হলো এমন একটি বিষয় যা চোখে দেখা যায় না কিংবা ধরা-ছোঁয়া যায় না। সেটা হলো 'ভরসা', যা বেশ কয়েকটি জিনিসের সমন্বয়ে তৈরি হতে পারে। যেমন: আইনি অবকাঠামো, ব্যবসা পরিচালনার প্রচলিত চর্চা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতি না থাকা ও আইন ভঙ্গকারীদের আইনের আওতায় আনা।

অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে এসেছে, কিন্তু বেশ কয়েক বছর অপেক্ষার পর ফিরেও গেছে। কারণ, তাদের মনে হয়েছে আমরা ব্যবসায়িক স্থিতিশীলতার দিক দিয়ে নির্ভরযোগ্য নই। এর মানে এই না যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দিক থেকে কোনো ত্রুটি নেই—কখনো কখনো তারা এমন সব খাতে বিনিয়োগের প্রস্তাব এনেছেন, যা আমাদের প্রাধান্যের তালিকায় নেই বা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সঙ্গে মানানসই নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিদেশি বিনিয়োগের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। যদি চীন ও ভিয়েতনামের মতো দেশ, যেখানকার অর্থনীতি সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে, সেখানেও বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ হয়, তাহলে আমরা বাজার অর্থনীতির চর্চা করেও কেন তা করতে পারছি না? কারণ তারা সেই অস্পৃশ্য উপকরণটি নিশ্চিত করতে পারে—সেই 'ভরসা' তারা দিতে পারে, যার কথা ইতোমধ্যে বলেছি।

আমাদের আশা, একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, সৎ ও অনন্য বৈশ্বিক সম্মানের অধিকারী মানুষের নেতৃত্বে তারুণ্যের প্রবল শক্তিমত্তা ও সততায় চালিত হয়ে এবং গণমানুষের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আসা সমর্থন ও আত্মবিশ্বাসের জোরে নতুন বাংলাদেশে নিজেদের ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সেই ভরসা-আত্মবিশ্বাসের জায়গাটি তৈরি করে নিতে পারব এবং একটি গণতন্ত্র, সমতা ও অধিকারভিত্তিক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারব।

মাহফুজ আনাম: সম্পাদক ও প্রকাশক, দ্য ডেইলি স্টার

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Cyber protection ordinance: Draft fails to shake off ghosts of the past

The newly approved draft Cyber Protection Ordinance retains many of the clauses of its predecessors that drew flak from across the world for stifling freedom of expression.

6h ago