ছাত্র আন্দোলনে আহত আরও ৪ জনের মৃত্যু

স্টার ফাইল ফটো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘাত-সহিসংতায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক আইনজীবীসহ আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

নিহতরা হলেন—কুমিল্লা সদর উপজেলার আইনজীবী আবুল কালাম (৫৫), চুয়াডাঙ্গার রাজমিস্ত্রী উজ্জল হোসেন (৩০), নোয়াখালীর দোকান কর্মচারী আসিফ (২৬) ও বরগুনার ‍ওষুধ কোম্পানির বিক্রয়কর্মী আল আমিন হোসেন (২৭)।

আজ শুক্রবার দুপুরে নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নিহত আইনজীবী আবুল কালামের বাড়ির চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার কাজীরগাঁও গ্রামে। কুমিল্লা সদর উপজেলার মহিলা কলেজ রোডে বাস করতেন তিনি।

আবুল কালামের সুরতহাল প্রতিবেদনে ধানমন্ডি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকিব নূর উল্লেখ করেন, গত ৫ আগস্ট সরকারের পদত্যাগের এক দফার কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন আবুল কালাম। কুমিল্লা সদর থানার পাশে কুমিল্লা হাই স্কুল সংলগ্ন রাস্তায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর রায়হান ও তার বাহিনী আবুল কালামের ওপর হামলা করে এবং তাকে গুলিবিদ্ধ করে। ওইদিনই তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ৬ আগস্ট তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার ধানমন্ডি পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মারা যান তিনি।

নিহত উজ্জ্বল হোসাইনের স্ত্রী শিলু আক্তার জানান, তাদের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামে। উজ্জ্বলের বাবার নাম আলতাফ হোসাইন। পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন উজ্জ্বল। ৫ আগস্ট কাজ থেকে বাসায় ফিরে সন্ধ্যায় গিয়েছিলেন মুক্তারপুর মোল্লাবাজারে চা পান করতে। সরকারের পদত্যাগের সেইদিন বাজারের একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে আন্দোলনকারীরা আগুন লাগিয়ে দেন। ওই দোকানটিতে বসে ছিলেন উজ্জ্বলসহ এলাকার বেশ কিছু লোকজন। সঙ্গে সঙ্গে দোকানে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। এতে উজ্জ্বলসহ আরও কয়েকজন গুরুতর আহত ও দগ্ধ হন। তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলের পুরাতন বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। উজ্জ্বলের শরীরের ৬৬ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে মারা যান উজ্জ্বল।

নিহত আসিফের প্রতিবেশী জামাল উদ্দিন জানান, তাদের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার মীরআলিপুর গ্রামে। আসিফের বাবার নাম মোর্শেদ আলম। আসিফ কিছুদিন আগে একটি দোকানে কাজ নেন। ৫ আগষ্ট সোনাইমুড়ি এলাকায় একটি মিছিলে গিয়েছিল। সেখান থেকে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।

মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ জানান। গত ৫ আগস্ট মিছিলে গুলিবিদ্ধ হন আসিফ। তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৭ আগস্ট তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসাধীন বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি মারা যান।

নিহত আল আমিন হোসেনের ছোট ভাই রাসেল হোসেন জানান, তাদের বাড়ি যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার আফরা গ্রামে। বাবার নাম আনোয়ার হোসেন বাবু। বরগুনার আমতলীতে রেনেটা ওষুধ কোম্পানির সেলসম্যানের চাকরি করতেন আল আমিন। থাকতেন আমতলী শহরে। গত ৫ আগস্ট কাজ শেষে তিনি সেখানকার বাসার দ্বিতীয় তলায় ঘুমিয়ে ছিলেন। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আন্দোলনকারীরা বাসার নিচতলায় আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয় তলায়। ঘুমিয়ে থাকা আল আমিনসহ তার কয়েকজন সহকর্মীর শরীরেও আগুন ধরে যায়। তখন তারা শরীরে আগুন নিয়েই দ্বিতীয় তলা থেকে লাফিয়ে রাস্তায় পড়েন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেলে নিয়ে যান। পরদিন ৬ আগস্ট তাকে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে এনে ভর্তি করা হয়। গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আইসিইউতে মারা যান তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

5h ago