এদেশে একক কর্তৃত্ববাদের রাজনীতির জায়গা হবে না: বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন
গণতান্ত্রিক কাঠামেো সংস্কার করে দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
নয় বছর পর আজ রোববার বিকেলে ভারত থেকে ফিরে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত শেষে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সেখানে মোনাজাত শেষে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'আমি প্রায় নয় বছরের বেশি সময় নির্বাসনে থেকে আপনাদের মাঝে আসতে পেরেছি। প্রথমেই এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন জানাই যারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা এনেছে, প্রকৃত স্বাধীনতা এনেছে এবং নতুন বিজয় দিবস আমাদের উপহার দিয়েছে।'
তিনি বলেন, 'এই স্বাধীনতাকে এই বিজয়কে আমাদের অর্থবহ করতে হবে। এ দেশের সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক কাঠামোগুলো সুন্দরভাবে সংস্কার করে প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এ দেশের জনগণকে উপহার দিতে হবে। এ দেশের জনগণ যেন স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের এবং এই বিজয় দিবসের সুফল ভোগ করতে পারে সেজন্য আমি সর্বস্তরের জনগণকে আহ্বান জানাব, আপনারা ধৈর্য্য ধরুন, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন।'
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'একাবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে এদেশে একটা নজিরবিহীন ছাত্র-জনতার বিপ্লব হয়েছে। সেই বিপ্লবকে পৃথিবীর সামনে দেখিয়ে দিতে হবে এই রক্তাক্ত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এই রক্তস্নাত বাংলাদেশকে আমরা প্রকৃত একটি গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসনের রাষ্ট্র বানাতে পেরেছি। যদি আমরা আইনের শাসন কায়েম করতে পারি, আইনের শাসনের রাষ্ট্র বানাতে পারি, সর্বস্তরের সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিতে পারি, তাহলেই ১৮ কোটি মানুষের ঘরে ঘরেই সেটার সুফল যাবে।'
'আমরা অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাব এবং এই দেশ মেরুদণ্ড-শিরদাঁড়া সোজা করে পৃথিবীর সামনে বলতে পারবে আমরা বীরের জাতি। এই বীরের জাতিকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করব। অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রকারীদের কাছ থেকে এই রাষ্ট্র হেফাজত থাকে সেজন্য আমাদের সর্তক থাকতে হবে,' যোগ করেন তিনি।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, 'এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় দরকার ধৈর্য্য ধারণ করা, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। সব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা এবং সব গোষ্ঠীর সব ধর্ম-বর্ণ-দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সমভাবে যেন সমদৃষ্টিতে দেখি এবং এ দেশের সবাইকে আমরা যেন বাংলাদেশি হিসেবে দেখি।'
আওয়ামী সরকারের পতন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, 'কোনো একক রাজত্বের জন্য, একক শাসনের জন্য, একক কর্তৃত্ববাদের জন্য যারা বাংলাদেশে রাজনীতি করবে তাদের কোনো জায়গা এ দেশে হবে না। এই দেশ একক কোনো ব্যক্তির নেতৃত্বে স্বাধীন হয় নাই। এই দেশ সারা বাংলাদেশের সব মানুষের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছে।'
'স্বাধীনতা কোনো একক দলেরও হতে পারে না, কোনো একক ব্যক্তিরও হতে পারে না। এই মুক্তি এই বিজয় আমাদের সবারই, আমাদের সবাইকে দেশকে হেফাজত করতে হবে,' বলেন তিনি।
এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন সুলতানা, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে সালাহউদ্দিন আহমেদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন।
ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করে সালাউদ্দিন আহমেদ বিকেল ৩টায় ভিআইপি গেট দিয়ে বিমানবন্দর থেকে বের হন। এ সময় দলের নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানান।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হন। ৬২ দিন পর ওই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ভারতের পুলিশের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, সালাহউদ্দিন শিলংয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করার সময় লোকজনের ফোন পেয়ে তাকে আটক করা হয়।
সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। একই বছরের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযোগ গঠন করা হয়। সেই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।
Comments