সহিংসতার প্রতিবাদে মিরপুরে ক্রীড়া সাংবাদিকদের মানববন্ধন
দেশের চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থী-জনতার ওপর নৃশংসতার বিচার ও বৈষম্যমুক্ত সমাজের দাবি জানিয়ে মিরপুরে মানববন্ধন করেছেন ক্রীড়া সাংবাদিকরা।
আজ শনিবার দুপুর ১২টায় মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের এক নম্বর গেটের সামনে শুরু হওয়া মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের শতাধিক সাংবাদিক।
মানববন্ধনের শেষ অংশে নৃশংসতায় প্রাণ হারানো সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
মানববন্ধনে কালের কণ্ঠ'র ক্রীড়া সম্পাদক এটিএম সাইদুজ্জামান বলেন, 'গত জুলাইয়ে যা ঘটেছে এবং এখন যা ঘটছে, তাতে শোক জানানোর ভাষা নেই। শুধু একজন ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে নই, আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে এসেছি। আমি মর্মাহত, শোকাহত।'
দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে তিনি আরও বলেন, 'আমাদের আরও আগে ভয়েস রেইজ করা দরকার ছিল। এই নৃশংসতা যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। যারা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে আছেন, তারা সেটি করেননি। যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে, তার রেশ আমাদের আরও কতো বছর বহন করতে হবে, নিশ্চিত নই। আমার দাবি প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, কোনো আই ওয়াশ নয়।'
বৈষম্যমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে সাইদুজ্জামান আরও বলেন, 'স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে যে অধিকার, সে অধিকার থেকে যেন আমরা কেউ বঞ্চিত না হই। এই দেশ আমার, এই দেশ কারও একার নয়। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ পাইনি, কিন্তু এই স্বাধীনতা যুদ্ধ আমাদের প্রত্যেকের গর্বের। এটা কারও সম্পত্তি নয়। এখন এ উপলব্ধির সময় এসেছে। আমি কোয়ান্টিটি চাই না, কোয়ালিটি লাইফ চাই। যে জীবনটা হবে, আমি বাসা থেকে অফিসে যাব নিরাপদে, আমার সন্তান স্কুলে যাবে। আমার বৃদ্ধ বাবা-মা সুচিকিৎসা পাবে।'
মানববন্ধনে চ্যানেল২৪'র বিশেষ প্রতিনিধি রেজওয়ান উজ জামান বলেন, 'প্রতিটি হত্যার বিচার চাই। আমাদের একটাই দাবি, একটাই কথা যে, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা মনে করি, সব পক্ষ থেকে আমরা যদি এই দাবিটা গণজোয়ারে পরিণত করতে পারি, তাহলে এই দাবি পূরণ হবে।'
নিউজজি২৪.কমের প্রবীণ ক্রীড়া সাংবাদিক শামীম চৌধুরী চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত সাংবাদিকদের প্রসঙ্গে বলেন, 'এই আন্দোলনে নিহতের সঠিক সংখ্যা আমরা এখনো জানি না। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বিভিন্ন কথা শুনছি। এর মধ্যে অন্তত পাঁচ সাংবাদিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। ক্রীড়া সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে আমরা তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। পেশাগতভাবে তারা আমাদেরই সহকর্মী, আমরা প্রথমেই দাবি করব, প্রতিটি মৃত্যুর সঠিক ও বিশ্বাসযোগ্য বিচার হোক।'
সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদ বলেন, 'দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা এখানে এসেছি। ইউনিসেফের হিসাব দেখলাম, ৩২ শিশু মারা গিয়েছে। সেই শিশুটা তো আমার-আপনার শিশুও হতে পারত। আমাদের যে কারও শিশু হতে পারত। আমরা তাহলে কাদের জন্য দেশটা তৈরি করছি? কাদের জন্য এই দেশটা বিনির্মাণ করার চেষ্টা করছি? আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য।'
'তারাই যদি এই দেশে নিরাপদ না হয়, তাহলে নিরাপদ আর কারা? আমরা তাই এখানে ক্রীড়া সাংবাদিকরা এখানে দাঁড়িয়েছি একটা দাবি নিয়ে—শিক্ষার্থী-জনতার ওপর এই যে নৃশংসতা হয়েছে। গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে যে নৃশংসতা হয়েছে এটা বন্ধ হোক। এটা যেন দ্রুততার সঙ্গে বন্ধ হয়। আর যেন একটাও অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু না হয়। আমরা স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই,' যোগ করেন তিনি।
Comments