হেলিকপ্টার থেকে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘জাতীয় শোক দিবস স্মরণে’ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে জীবনগুলো ঝরে গেল, ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা গুলিবিদ্ধ। এই গুলিগুলো কীভাবে লাগলো?

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে 'জাতীয় শোক দিবস স্মরণে' আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

হত্যাচেষ্টাসহ নানা প্রতিকূলতার পথ পেরিয়ে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, 'সরকার গঠন করার একটাই লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা এবং সেই সঙ্গে জাতির পিতার হত্যার বিচার করে, সেই বিচারহীনতার যে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছিল—আবার সেই আইনের শাসন ফিরিয়ে আনা।

'আমরা জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করেছি। যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার করেছি। এটা করতে গিয়ে সেখানেও অনেক হুমকি-ধমকি সহ্য করতে হয়েছে কিন্তু আমরা করতে পেরেছি, এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। কারণ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এই শহীদের রক্তের মূল্য আমাদের দিতে হয়েছে। তাই আমরা এই খুনিদের বিচার করেছি,' বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, 'জাতির পিতার হত্যার বিচার আমরা করতে পেরেছি। আমার মনে হয়, এর থেকে বড় পাওয়া বাঙালি জাতির জন্য আর কিছু না যে, একটা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছি; মানুষ যাতে ন্যায় পায়, সেই ন্যায় বিচারের পথটা আমরা সহজ করে দিয়েছিলাম।'

বাংলাদেশ আজকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'পঁচাত্তরের পর সেই ২১ বছর এবং তারপর আবার ২০০১ থেকে ২০০৮, এই ২৯ বছর কিন্তু বাংলাদেশ এক ইঞ্চি সামনের দিকে এগোতে পারেনি। আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে তখনই এই বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে।'

এসময় তিনি আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, 'একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে উঠবে এবং যে জাতি হবে অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্নত জাতি। আমরা যখন সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি, পাশাপাশি আমরা কী দেখলাম? ওই পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, ওগুলো এখনো ছাড়েনি। সেখানে ধর্মান্ধতা এবং কূপমণ্ডুকতা দিয়ে একটা শ্রেণি কিন্তু ধীরে ধীরে সকলের অজান্তেই গড়ে উঠেছে। যারা ওই যুদ্ধাপরাধীদের দোসর ছিল। দেশে গণহত্যা, লুটপাট, নারী ধর্ষণ, অগ্নি সংযোগ এসমস্ত কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সঙ্গে দোসর হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেছে।'

'আর সেই আঘাতটা আপনারা দেখলেন কিছু দিন আগে। কোটা আন্দোলনের নামে যখন সব রাস্তায় বেরিয়ে এলো, আমরা তাদের বললাম, কোটা আন্দোলন হয়েছিল ২০১৮ সালে। আমরা এটা মেনে নিয়ে বাতিল করে দিয়েছিলাম কোটা পদ্ধতি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মামলা করল, সেখানে আমার করা প্রজ্ঞাপনটা বাতিল করে দিলো হাইকোর্ট। আবার কোটা ফিরে আসলো। সাথে সাথে সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাপিলেট ডিভিশনে আপিল করা হলো। আপিল করা হলে হাইকোর্টের রায়টা সাসপেন্ড করে দেওয়া হলো। কাজেই আবার সেখানে কোটা পদ্ধতি বাতিল হয়ে গেল এবং পূর্ণাঙ্গ শুনানির তারিখও দেওয়া হলো। ৫ জুন এই রায় হয়েছিল। পুরো জুন মাস চলে গেল। জুলাই মাসে ৭ তারিখ থেকে হঠাৎ দেখি, আবার কোটার জন্য আন্দোলন—যখন কোটা পদ্ধতি নাই,' বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'তখন কোটা পদ্ধতি নাই কিন্তু তখনই আন্দোলন। আর আন্দোলন না, দেখা গেল ঝাঁকে ঝাঁকে সব জড়ো হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক থেকে শুরু করে, গার্ডিয়ান থেকে শুরু করে অনেক শিশুদের নিয়েও হাজির হচ্ছে। আমার খুব সন্দেহ হলো, এটা পেছনে অন্য কিছু আছে। আমি সেটা বলেও ছিলাম। তাহলে এই ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ কী হবে! যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করা, এমনকি তারা মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিল সে ব্যবস্থাও করা—সবই করা হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো কিছুই মানবে না। হাইকোর্টের (শুনানির) তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসা হলো। অ্যাপিলেট ডিভিশন চেম্বার জজ থেকে রায় দেওয়া হলো, ঠিক যা চেয়েছিল তার থেকে বেশি। তাদের একদফা দাবি ছিল কোটা সংস্কার। যে দাবি করেছিল, সেই দাবি সংস্কার করে দেওয়া হলো কিন্তু সেই সংস্কার করে দেওয়ার পরও তাদের আন্দোলন থামে না, দাবি থামে না। এর পেছনে ঠিক কী ছিল? সেটা আমরা দেখলাম, মানুষের জীবন নেওয়া। কোটা আন্দোলন করছে এক জায়গায়, ঢাকার চারিদিক থেকে জঙ্গি ঢুকে একদিকে হত্যাকাণ্ড চালানো, অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের সেবা দেয়। যেমন দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা সব থেকে অগ্রগামী ছিলাম। আমাদের সামনে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস যেকোনো সময় আসতে পারে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে আমরা এত চমৎকার সিস্টেম তৈরি করেছিলাম, যেকোনো মুহূর্তে বাংলাদেশের যেকোনো জায়গার ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস-বন্যার খবর পেতে পারব। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সহযোগিতা করতে পারব। এটা তো মানুষকে বাঁচানোর জন্য, মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য। সেখানে অগ্নি সংযোগ।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'বাংলাদেশ টেলিভিশন মানুষের একটি সাংস্কৃতিক চর্চার জায়গা, সেখানে অগ্নিসংযোগ। আমাদের সেতু ভবন; সারা বাংলাদেশকে আমরা একটা নেটওয়ার্কে তৈরি করে দিয়েছি এবং পদ্মা সেতু আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করেছি। সেই সেতু ভবনে অগ্নি সংযোগ। ডিজিটাল সিস্টেম আমরা যেটা করেছি, ডেটা সেন্টার, বিটিআরসি ভবন—যেখান থেকে পুরো সিস্টেমটা বাংলাদেশে পরিচালনা করা হয়। স্যাটেলাইট থেকে সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সেটাকে আগুন দেওয়া হলো। এমনকি সাবমেরিন ক্যাবল, এটা মাটির নিচ দিয়ে ছিল। রাস্তা করার জন্য কিছু দিনের জন্য উপরে রাখা হয়েছিল, সেটাকে নষ্ট করা হলো। একেরপর এক ধ্বংস, আগুন দিয়ে পোড়ানো। কোভিড-১৯ মোকাবিলা করে আমরা বিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। তার জন্য যে হসপিটালটা তৈরি করেছিলাম, সেই কোভিড-১৯ হসপিটালে আগুন। সেই সাথে আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন স্থানে আগুন। অর্থাৎ মানুষের সেবা দেওয়ার প্রতিটি জায়গাতে একটা আঘাত হানা। তার সাথে আসলো মেট্রোরেল। অত্যন্ত আধুনিক মেট্রোরেলের দুটি স্টেশন পুড়িয়ে দিলো। মিরপুর স্টেশন থেকে প্রতিদিন এক লাখ মানুষ যাতায়াত করতো। গোটা মেট্রোরেলে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষ নির্বিঘ্নে তার কর্মস্থানে যেতে পারতো, ফিরে আসতে পারতো। কর্মঘণ্টা বাঁচতো। নিরাপদে যাতায়াত করতে পারতো, বিশেষ করে মেয়েরা যাতায়াত করতে পারতো। সেখানে আঘাত করা।'

তিনি বলেন, জনগণ একটু আরামে থাকবে, জনগণ একটু ভালো থাকবে, জনগণ একটু সুস্থভাবে চলবে, সুপেয় পানি-পয়োঃনিষ্কাশন থেকে শুরু করে প্রতিটি জায়গায় আগুন দিয়ে পোড়ানো। এটা কোন ধরনের আন্দোলন? আর সেই সাথে আজকে কত মানুষের জীবন গেছে! চারিদিক থেকে অস্ত্রধারী কোথাও...ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০০ কামরা, সেখানে এখন ভিডিও ফুটেজও পাওয়া গেছে হাতে অস্ত্রসহ; কারও হাতে তরবারি, কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে শাবল নিয়ে পুরো তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। ছেলেদের সব জিনিসগুলো পুড়িয়ে দেওয়া। মেয়েদের হোস্টেল; রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, ইডেন কলেজ, বদরুন্নেছা কলেজ—মেয়ে হয়ে মেয়েদের ওপর যে টর্চার, পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে টর্চার করেছে, ঠিক সেই ধরনের টর্চার করল মেয়েদের ওপর।'

'মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা ছাত্রলীগ করে, ছাত্রলীগ করতে পারবে না। তাদের ওপর জুলুম অত্যাচার। এক মেয়েকে ১০০ বার উঠবস করাল। তারপর যে সমস্ত ঘটনা ঘটিয়েছে, একজন মহিলা সাংবাদিককে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে, তাকে উলঙ্গ করে, তার ওপর পাশবিক অত্যাচার; এমন কিছু নেই, তিনজন সাংবাদিকের ওপর এই অত্যাচার না করেছে। এদের হাত থেকে সাংবাদিক রেহাই পায়নি, সাংবাদিক হত্যা করেছে। সাংবাদিককে মারধর করেছে। সাধারণ মানুষ, ছাত্র-যুব-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে কেউ তো রেহাই পায়নি,' বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আজকে যে প্রাণহানিগুলো ঘটলো, যেখানে দাবি শত ভাগ মেনে নেওয়া হয়ে গেছে। সেখানে এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কী যৌক্তিকতা আছে? কার স্বার্থে? কেন? সেই সাথে সাথে পুলিশ হত্যা করে তাকে ঝুলিয়ে রাখা হলো পা বেঁধে উপর দিকে, মাথা নিচের দিকে। আমাদের গাজীপুরের কর্মীদের মেরেছেই, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছে, সেখানে থেকে বের করে নিয়ে এসে পা গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে তারপর তাকে গুলি করা হয়েছে। পুলিশের ওপর আক্রমণ, কত গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। র‌্যাবের গাড়ি চালাচ্ছে, তাকে যেভাবে মারা! এমনকি আমার মোটরকেডের পাইলট, থাকে যাত্রাবাড়ীর ওদিকে, ডিউটিতে আসবে, তাকে মেরে লাশ ফেলে দেওয়া হয়েছে। বাড়ি বাড়ি ঢুকে ঢুকে কোথায় পুলিশ আছে, পুলিশকে মারতে হবে আর আওয়ামী লীগ কোথায় থাকে, তাকে মারো।'

মানুষের সাময়িক কষ্ট হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আগে যেখানে এত আরামে চলতে পারতো, সেটা হয়তো করতে পারছে না। সময় লাগবে কিন্তু এক সময় সেগুলো গড়ে তোলা যাবে। কিন্তু যে জীবনগুলো ঝরে গেল, ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা গুলিবিদ্ধ। এই গুলিগুলো কীভাবে লাগলো? তার পরে মিথ্যাচার! দোতলা বাড়ির মধ্যে জানালার কাছে ছেলেটা। তার গুলি লেগেছে। বলে হেলিকপ্টার থেকে গুলি লেগেছে। আপনারা বলেন, হেলিকপ্টারের গুলি ঘরের মধ্যে ঢুকবে কীভাবে? আর সেই গুলি ঢুকে কিন্তু দেয়ালে যেয়ে ফুটো করে দিয়েছে। সেখানে তদন্তের জন্য লোক গেছে। তারা দেখে, সেখানে হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করল কীভাবে! যখন পুলিশ আটকা পড়লো। যখন বিটিভিতে, এখানে-ওখানে আগুন দিচ্ছে একটার পর একটা, আমরা হেলিকপ্টার থেকে সেখানে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছি। কারণ ফায়ার ব্রিগেড যেতে পারে না। আমার সব থেকে আধুনিক ফায়ার ব্রিগেডের যে গাড়িগুলো, সব পুড়িয়ে দিয়েছে। মানুষগুলোকে মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে। তখন বাধ্য হয়ে হেলিকপ্টার থেকে পানি দিয়ে আগুন নেভাতে আমরা চেষ্টা করলাম। সেই সময় আবার অনেক জায়গায় পুলিশ আটকা পড়লো। নিচে আগুন দিয়ে দিয়েছে, তারা উপরে বসে আছে। আমাদের খবর দিলো, আমরা হেলিকপ্টার দিয়ে তাদের উদ্ধার করলাম। শুধু পুলিশ কেন! অনেক জায়গায় বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের যে সমস্ত কর্মকর্তারা আটকা পড়েছে, আমরা হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার করেছি।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'এই আন্দোলনকে আবার আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণী, বুদ্ধিজীবীরা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কীসের সমর্থনটা দিচ্ছে? দাবি যেটা ছিল সেটা তো পূরণ হয়ে গেছে। তারপর আবার এভাবে নেমে আসলে আঘাত পায় তো সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী। আর যারা এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তাদের জিঘাংসা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালায়, তারা তো তাদেরটা করে, তাতে ভুক্তভোগী হয় সাধারণ মানুষ। এখানে পুলিশ, র‌্যাব, সাংবাদিক, সাধারণ মানুষ, কেউ তো রেহাই পায়নি! এই যে আহতদের আমরা দেখতে গেলাম, সেখানে পেলাম মাত্র ছয়-সাতজন ছাত্র। কয়েকটা শিশু ছিল, আর বেশিরভাগই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। কারণ আঘাত পেলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলোই বেশি পায়। তাদের জীবন-জীবিকা কীভাবে চলবে! কেউ পরীক্ষা দিতে যাবে বা দিয়েছে, সে রকম ছাত্র আমি একজন-দুজন পেলাম কয়েকটা হাসপাতালে।'

চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'কোটা আন্দোলনের নাম দিয়ে নাশকতা করা, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা; আমি আগেই সাবধান করেছিলাম, ১৭ তারিখ আমি টেলিভিশনে ভাষণ দিয়ে অভিভাবকদের বলেছিলাম, শিক্ষকদের বলেছিলাম, এখানে আপনাদের সন্তানের জীবনের ঝুঁকি আছে। আপনারা সন্তানদের বের হতে দিয়েন না। কারণ আমি তো জানি এ দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস কারা করে। আমি সতর্ক করেছি, অ্যাপিলেট ডিভিশন রায় দেবে, আপনারা হতাশ হবেন না। আমি তো রায়ের ব্যাপারে বলতে পারি না এই রায় দেবে কিন্তু আমরা তো বললাম, সরকারের পক্ষ থেকে আমরা আপত্তি জানাবো না। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে আপত্তি না জানালে তাদের যেটা দাবি, সেটা এসে যাবে। আমরা সেটুকু করতে পারি আইনগতভাবে, যদি আমি কোর্ট-কাচারি, আইন-আদালত মেনে চলি। সেটা আমি বললাম, আপনারা হতাশ হবেন না। তারপরও তারা না থেমে...আজকে যে সারা দেশে এতগুলো প্রাণ ঝরে গেল এ দায়-দায়িত্ব কার,' প্রশ্ন রাখেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'একটা জিনিস গেলে আবার গড়ে তোলা যায় কিন্তু একটা জীবন গেলে, প্রাণ গেলে তো আর ফিরে পাওয়া যায় না! যারা আপনজন হারিয়েছে, যে মা তার সন্তান হারিয়েছে, যে সন্তান তার বাবা হারিয়েছে, তাদের কষ্ট আর কেউ না বুঝুক, আমি তো বুঝি! কারণ আজকে এই আগস্ট মাস আমি তো বাবা-মা, ভাই সব হারিয়ে এই বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম নিজে ছোট ছোট বাচ্চাদের মাতৃস্নেহবঞ্চিত করে, কেন? বাংলাদেশের মানুষের জন্য। এই দেশের মানুষ সুন্দর জীবন পাবে, উন্নত জীবন পাবে, স্বাধীনতার সুফল পাবে। প্রত্যেকে পেট ভরে ভাত খাবে, প্রত্যেকে লেখাপড়া শিখবে, দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি পাবে। বাংলাদেশ উন্নত হবে, সমৃদ্ধশালী হবে, বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসন পাবে। যে মর্যাদা আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর পেয়েছিলাম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর যা আমরা হারিয়েছিলাম, আবার সেই মর্যাদা ফিরিয়ে নিয়ে আসব।'

'আমি কিন্তু এনেছিলাম। বাংলাদেশ বিশ্বে সেই মর্যাদা পেয়েছে। সেই জায়গায় আমরা নিয়ে গিয়েছিলাম। আজকে বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রতিটি জায়গায় নেতিবাচক একটা মনোভাব হয়ে গেছে। এই যে এতদিন এত শ্রম দিলাম, এত কষ্ট, নিজের দিকে তো তাকাইনি! নিজের ছেলে-মেয়ের তো কিছু করিনি! যেটুকু করেছি, এ দেশের মানুষের জন্য,' যোগ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি সময়, দিন-রাত পরিশ্রম করেছি। কারণ আমি জানি, কারণ আমি বলতাম, টাইম ইজ টু শর্ট! কারণ আমি জানি, যেকোনো সময় ঘাতক আমাকে আঘাত করতে পারে। কারণ আমি বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ; মানুষের জন্য কাজ করব। সেই যে ১০ বছরের ছেলে আর আট বছরের মেয়েকে মাতৃস্নেহ বঞ্চিত করে এ দেশের মানুষের জন্য আনাচে-কানাচে সব ঘুরেছি এবং প্রতিটি জায়গা উন্নত করেছি। প্রতিটি গ্রাম আজকে শহর হয়ে গেছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। মানুষের জীবনমান উন্নত করে দিয়েছি। এটা কি অপরাধ? এটা কি আমার অপরাধ ছিল?'

'আজকে নানাভাবে, জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের বদনাম আর আমি তো আছিই! যখন থেকে আছি তখন থেকেই গালি খাচ্ছি তো খাচ্ছিই। আমি তো পরোয়া করিনি! আমি জানি, আমার আত্মবিশ্বাস নিয়ে, সততা নিয়ে কাজ করে গেছি, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছি,' যোগ করেন তিনি।

কোটা আন্দোলনে হতাহতের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি এখানে কারও দাবি অপেক্ষা রাখিনি। তার আগেই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে দেই। ঘটনা যখন হয় তখন মাত্র ছয়জন মারা গিয়েছিল। এখন আরও বেশি ঘটনা ঘটেছে। আমি এখন তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিটি করে দিয়ে, তাদের কর্ম পরিধি আরও দিয়ে...আমি চাই প্রত্যেকটা জিনিসের তদন্ত হোক—কারা এর পেছনে? কী কীভাবে? কী কী ঘটনা ঘটেছে? সে জন্য জাতিসংঘেও আমি আবেদন করেছি, তারা বিশেষজ্ঞ পাঠাক। অন্য কোনো দেশ যদি চায়, তারা বিশেষজ্ঞ পাঠাক। কারণ আমি চাই এই ঘটনাগুলো সুষ্ঠু তদন্ত হোক, সে যেই দায়ী থাক। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে আমাদের।'

'কারণ আমরা গড়ব আর কেউ এসে খালি ভেঙে তামাতামা করে দেবে আর আমার দেশের মানুষকে কষ্ট দেবে, দেশের মানুষ ভুক্তভোগী হবে; দেশের মানুষে ভাগ্য নিয়ে খেলা, এটাই তো আমি দেখি সব থেকে তাদের বড় জিনিস! জঙ্গি সারা বিশ্বব্যাপী কী ঘটনা ঘটিয়েছে, বাংলাদেশে হলি আর্টিজানের পরে আমরা আর একটা ঘটনা ঘটতে দেইনি। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ থেকেছে। নিজেরা জীবন দিয়েছে কিন্তু জঙ্গিবাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেছে। আজকে কোটা আন্দোলনের ছাত্রছায়ায় এরা এসে জঙ্গির সেই ভয়াল দাঁত দেখাল,' যোগ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, 'যখন এরা বসেছে, মিটিং করছে, আমি বললাম ঠিক আছে, ছেলেমেয়েরা বসছে বসুক। আমরা তো রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, মিছিল-মিটিং করে, পোড় খেয়ে খেয়ে না এ পর্যন্ত এসেছি। অন্তত আমি সরকারে আসার পরে এদের তো সেই ধরনের কষ্ট কাউকে করতে হয় নাই। তারা যদি একটু রোদে পোড়ে, একটু স্লোগান দেয়, বসে তো বসলো! এটাতে তোমরা কিচ্ছু বলবা না। পুলিশ কত সহনশীলতা দেখিয়েছে! তারা মিছিল করে, যেখানে যেতে চেয়েছে, সেখানেই তাদের নিয়ে গেছে। খালি বলেছি, তাদের একটু নিরাপত্তা দাও তোমরা। আমেরিকায় ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা নেমেছিল, যেভাবে তাদের মেরেধরে মাটিতে ফেলে অত্যাচার করে, এমনকি শিক্ষকদের পর্যন্ত পেছনে হ্যান্ডকাফ দিয়ে বেঁধে নিয়ে ছাত্রদের আন্দোলন দমন করেছিল, আমরা তো তা করতে যাইনি! ওইভাবে আমরা শক্তি প্রয়োগ করিনি। তাদের দাবিটা কী? এটা তো আমার করা! প্রজ্ঞাপন বাতিল হয়েছে, আমরা আপিল করেছি, সেটা আবার আমরা পেয়ে গেছি। সেখানে আন্দোলনের ইস্যুটা আর কী থাকে?'

'তারপরে এই যে ঘটনাগুলো ঘটলো। আজকে দেশবাসীর কাছে এরা তো মিথ্যা অপবাদ চালিয়েই যাচ্ছে। আমি ক্ষমতায় থেকে মানুষের জীবন নেব, সেটা তো কখনো হতে পারে না। কারণ আমি তো সব কিছু হারিয়েছি। আর আমার নিজের জীবনটাও তো আমি জানি না। এরাই তো বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। এখন রাখে আল্লাহ, মারে কে,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

4h ago