জামায়াত নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত সরকারের ইস্যু ডাইভারশন প্রজেক্ট: মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

কোটা আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নদিকে সরাতেই সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'সরকার একটা ইস্যু তৈরি করে সেই ইস্যুকে ডাইভারশনের দিকে নিয়ে যায়। এখন আবার এটা (জামায়াত ইস্যু) আরেকটি তাদের প্রজেক্ট।'

তিনি বলেন, 'আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। পাকিস্তান আমলে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বাম রাজনীতি যারা করতেন, মির্জা গোলাম হাফিজ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ থেকে শুরু করে সবাই দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। প্রায় দুই বছর সেখানে থেকে তারপরে তারা ফিরে আসেন। যখন উইথড্র হলো তখন আবার তারা দেশে ফিরে এসেছিলেন।'

'কেন এতদিন নেয়নি (জামায়াত নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত)? আজ এখন নিচ্ছে কেন? এগুলোর পেছনে তাদের অনেক যুক্তি থাকবে, অনেক কথা বলবে, আমরা যে কথাগুলো বলছি তার বিপক্ষে তারা অনেক কথা বলবে। তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলি যে, আমরা বিশ্বাস করি বহুদলীয় গণতন্ত্রে, আমরা বিশ্বাস করি যারা যারা এখানে রাজনীতি করে তাদের অধিকার আছে রাজনীতি করার,' বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এখন জনগণের দায়িত্ব, কার রাজনীতি তারা গ্রহণ করবেন, কার রাজনীতি গ্রহণ করবেন না। এখন এখানে দরকার একটা সুষ্ঠু নির্বাচন, অবাধ নির্বাচন। আজ যে এত ক্রাইসিস, এর মূলে প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার নাই। প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার না হলে তো এই সমস্যার সমাধান হবে না। জনগণের প্রতিনিধি দরকার এবং জনগণের কাছে যাদের অ্যাকাউন্টেবিলিটি থাকবে, দায়-দায়িত্ব থাকবে, একটা জবাবদিহিতা থাকবে সেই জবাবদিহিতা যদি না থাকে তাহলে এটা সম্ভব না।'

তিনি আরও বলেন, 'আজ এই সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তাদের কোনো বৈধতা নেই, তারা কোনো নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে আসেনি। তারা সবসময় কৌশল করে যেভাবে ডিবি অফিসে ছাত্রদের নিয়ে গিয়ে বলানো হচ্ছে সেই একইভাবে কৌশল করে তারা বিভিন্ন নির্বাচনের বৈতরণী পার হয়েছে।'

'দায় স্বীকার করে চলে যান'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'গত কয়েকদিন যেসব ছাত্র ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন তাদের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন কেউ খেতে পারছেন না। তাদের চোখের সামনে ছেলে চলে গেছে, ভবিষ্যৎ চলে গেছে, সবচেয়ে প্রিয় জিনিস। চার বছরের বাচ্চা, ছয় বছরের বাচ্চাটা…হোয়াট ইজ অ্যানসার। রাষ্ট্রের উত্তর কী?'

'কেন এত প্রাণ গেল? কী জবাব দেবে? দায়িত্ব তো তাদের। প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব তাদের। একথা বললে তো চলবে না যে, আমরা কী করতে পারি, বিভিন্নভাবে ঘটে গেছে। ইউ হ্যাভ ক্রিয়েটেড দিজ সিচ্যুয়েশন…এই দায় তোমার, এই দায় অবশ্যই তোমাদের নিতে হবে। যে কথাটা আমরা বলেছি যে, দায় স্বীকার করে তাদের চলে যাওয়াটাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি সমাধান আনবে। রাজনৈতিক সংকট রাজনৈতিকভাবেই শেষ করতে হবে। দে মাস্ট লিভ…তাদের একটা নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে,' বলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এদেশে জঙ্গিবাদের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক আওয়ামী লীগ। এই সরকার পরিকল্পিতভাবে এদেশে জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে। এর বেশি কিছু আমার বলার নেই।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে, মানুষের প্রাণ গেছে এটাকে আমরা গণহত্যা বলি। অবশ্যই এটা গণহত্যা। আমার লিখিত বক্তব্যে আপনি দেখবেন আমি এটাকে গণহত্যা বলা আছে।'
'আমি মনে করি, এই গণহত্যার তদন্ত অবশ্যই জাতিসংঘের অধীনে হওয়া উচিত। কারণ এই সরকারের কোনো তদন্তে আমরা বিশ্বাস করি না। এরা নিরপেক্ষ না, কীভাবে এদের বিশ্বাস করবেন,' যোগ করেন তিনি।

'কোটা বিরোধী আন্দোলনে সমর্থন অব্যাহত'

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আমি বলেছি তাদের (শিক্ষার্থীদের) সব আন্দোলনে আমাদের সমর্থন রয়েছে। আন্দোলনকারীদের প্রতি আমাদের একটা আহ্বান, এই আন্দোলনকে তারা চূড়ান্ত পর্যায় নিয়ে যাবে।'

'আর জনগণের যে আন্দোলন তা হলো এই সরকারের চলে যাওয়া। তাদের আন্দোলন একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন। এই সরকারকে চলে যেতে হবে,' বলেন তিনি।
একইসঙ্গে 'এই মুহূর্তে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার' দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।

'ডিবির খাবার নাটক'

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে নিয়ে তাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ দিয়ে একটা বক্তব্য দেওয়ানো হয়েছিল। একটা খাবার নাটক করা হয়েছে... ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে একটা খাবার নাটক তৈরি করা হয়েছে। ডিবি অফিসের একটা নামই হয়ে গেছে ভাতের হোটেল হিসেবে।'

'ডিবি সরকারেরে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের একমাত্র দায়িত্ব কি শুধু যারা আন্দোলন করছে, যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে, তাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে তাদের আটক করে নির্যাতন করা এবং এইসব নাটক করা? ডিবির সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব আছে। সেগুলো তাদের পালন করতে হয়,' যোগ করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এখানে এই ধরনের নাটক, একটা তামাশা তৈরি করে তারা গোটা জাতিকে ছোট করেছে, একটা মশকরা সৃষ্টি করেছে। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের মন্তব্য শুনেছেন…. হাইকোর্ট পরিষ্কার করে বলেছে, এটা জাতির সঙ্গে মশকরা করা হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'আমি বলেছিলাম, এই পুরো ইস্যুটাকে সরকারের যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকত, অতি অল্প সময়ের মধ্যে এটা সমাধান করতে পারত। যেহেতু এই সরকারের রাজনৈতিক প্রতিনিধি নাই সেজন্য এসব ঘটনা তারা করেছে।'

'অদৃশ্য শক্তি দেশ চালাচ্ছে'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমি এখানে আওয়ামী লীগ খুঁজে পাই না। আমি বারবার বলেছি, এখন পুরোপুরিভাবে একটা অদৃশ্য শক্তি দেশ পরিচালনা করার চেষ্টা করছে। সেই শক্তির একটা সরকার। যেখানে বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা যে ভাষায় প্রকাশ্যে কথা বলেন…মনে হয় না যে, কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেশে আছে। সুতরাং আমরা মনে করি যে, এদেশে প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের কোনো সরকার নেই। এখানে যে সরকারটা আছে সেটা হচ্ছে যারা এদেশকে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং দেশে একটা অরাজনৈতিক সরকার পরিচালনা করছে তাদের সরকার এটা পরিচালনা করছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Crowd control: Police seek to stop use of lethal weapon

The police may stop using lethal weapons and lead pellets for crowd control as their widespread use during the July mass uprising led to massive casualties and global criticism.

1h ago