নখের কোনা দেবে যায় কেন, কী করবেন
পায়ের নখের কোনা দেবে যাওয়া একটি অস্বস্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. আসমা তাসনীম খান।
নখের কোনা দেবে যায় কেন
ডা. আসমা তাসমিন বলেন, পায়ের নখের কোনা দেবে ইনফেকশন হয় অনেকের। নখের কোনা মাংস বা ত্বকের ভেতরের দিকে দেবে যেতে পারে বিভিন্ন কারণে।
নখের কোনা দেবে সংক্রমণের অন্যতম কারণ হচ্ছে নখ কাটার ধরন। নখের বর্ডার ধরে কার্ভ করে নখ কাটা উচিত না। সবসময় নখের দুই পাশের কোনা ফ্রি রেখে স্কয়ার শেইপে নখ কাটা উচিত। এতে করে নখের কোনা সবসময় বাইরের দিকে বের হবে।
কিন্তু নখ গোড়া থেকে গভীর করে কাটতে থাকলে নখ যখন বড় হয় তখন সেটি ত্বকের ভেতরে বা নিচের দিকে যেতে শুরু করে। এই সমস্যাকে ইনগ্রোয়িং অব নেইল বলে। নখের কোনা ত্বকের ভেতরে দেবে গিয়ে চাপ দেয়, ব্যথা হয়, বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণের ফলে প্রদাহ হয়। এমনকি পুঁজ হয়ে যেতে পারে ভেতরে।
সারাদিন পায়ে জুতা ও মোজা পরে থাকেন যারা তাদের নখের কোনা দেবে যেতে পারে। সারাদিন আঁটসাঁট জুতা পরে থাকার কারণে নখের ওপর চাপ পড়ে এবং নখ ত্বকের ভেতরের দিকে দেবে যায়। আর দীর্ঘসময় পায়ে মোজা পরে থাকার কারণে অনেকের ঘাম হয়, এতে করে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। এর ফলে নখের কোনা আক্রান্ত হয়। নখ যখন বড় হতে থাকে তখন কোনাগুলো দুর্বল হয়ে যায়, অসুস্থ ভাব থাকে এবং নখ নিচের দিকে দেবে যেতে শুরু করে।
ডায়াবেটিস রোগী, অ্যাথলেটস, ওয়েট লিফটিং করে, জিম করে কিংবা যাদের ওজন অনেক বেশি তাদের পায়ে বেশি চাপ পড়ার কারণে নখের কোনা ভেতরের দিকে দেবে গিয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
এ ছাড়া যারা গৃহস্থালির কাজ করেন, রান্নাঘরে বার বার বিভিন্ন কাজ করেন তাদের হাতের আঙ্গুলে নখের পাশে এই ধরনের ইনফেকশন হয়। কাপড় ধোয়া, ডিটারজেন্টের ব্যবহার, দীর্ঘসময় পানির সংস্পর্শে থাকার কারণে অনেক সময় হাতে ও পায়ে ফাঙ্গাল ও ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে। এর ফলে নখের পাশে ফুলে যায়, ব্যথা হয়, পুঁজ জমে যায়, অনেকের জ্বর আসে।
ইনগ্রোয়িং নেইল বা নখের কোনা দেবে যাওয়ার সমস্যা পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলেই মূলত হয়, তবে অন্যান্য নখেও হতে পারে।
লক্ষণ
ইনগ্রোয়িংয়ের সমস্যায় নখের কোনা আস্তে আস্তে পায়ের ত্বকের গভীরে ঢুকতে শুরু করলে হাঁটার সময় চাপ পড়ার কারণে ব্যথা হবে। নখের কোনা, আঙুল ফুলে যায়। বিভিন্ন রোগজীবাণু আক্রমণ করলে ইনফেকশন হয়। ইনফেকশনের ফলে আক্রান্ত স্থান আরো বেশি লাল হয়ে যায়, ফুলে যায়, তীব্র ব্যথা হয়, জ্বর আসে, আক্রান্ত আঙুল কোনোকিছুর সঙ্গে লাগলে অসহনীয় ব্যথা হয়।
চিকিৎসা ও ঝুঁকি
ডা. আসমা তাসনীম বলেন, পায়ের কোনা দেবে যাওয়া সমস্যার চিকিৎসা হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয় রোগীকে। অ্যাক্টিভ ইনফেকশন থাকলে ক্ষতস্থান ড্রেসিং করে অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে রিকভারি করা হয়।
চূড়ান্ত চিকিৎসা হিসেবে সার্জারি মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যায়। আসমা তাসনীম বলেন, আমাদের নেইল বেডের ওপরে হচ্ছে নেইল ম্যাট্রিক্স। ত্বকের সঙ্গে লেগে আছে, যেটা দেখা যায় সেটিকে নেইল বেড বলে। আর তার উপরের অংশটা হচ্ছে নেইল ম্যাট্রিক্স। এই নেইল ম্যাট্রিক্স থেকে নেইল তৈরি হয় এবং নেইল বেডের ওপর দিয়ে এক্সটেনশন হয়ে বাড়তি নখ বের হয়।
পায়ের নখের দুই পাশে দুই কর্নার বা কোনা আছে। কর্নার তৈরি হওয়ার জন্য যে অংশটুকু আছে নেইল ম্যাট্রিক্সে ওই অংশটুকু সার্জারির মাধ্যমে তুলে ফেলা হয়। এতে করে ওখান থেকে আর নখ বের হয় না, বাকি অংশ থেকে নখ বের হয়। যার কারণে ইনগ্রোয়িংয়ের সমস্যা আর থাকে না।
যাদের ডায়াবেটিস আছে, যারা ইমিউনোকম্প্রোমাইজড রোগী, যাদের বয়স বেশি তাদের জন্য ইনগ্রোয়িংয়ের সমস্যা ঝুঁকির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের এই ধরনের সমস্যায় ভুগতে হয় অনেক বেশি। শুধু ইনগ্রোয়িং নেইলের জন্য নয়, পায়ের যেকোনো সমস্যা বা রোগের জন্য ডায়াবেটিস রোগীদের সর্তক থাকতে হবে।
প্রতিরোধ
১. পায়ের নখের কোনা দেবে যাওয়া প্রতিরোধে নখ গোড়া থেকে গভীর করে কাটা যাবে না, কিছু অংশ ছেড়ে দিয়ে নখের কোনা দুটো বের করে স্কয়ার শেইপ করে কাটতে হবে।
২. পায়ে অতিরিক্ত আঁটসাঁট জুতা দীর্ঘসময় ধরে পরে থাকা যাবে না। যাদের পায়ের নখের কোনা দেবে যাওয়ার সমস্যা আছে তারা অফিসে বা কর্মস্থলে সারাদিন জুতা পরে না থেকে স্যান্ডেল ব্যবহার করতে পারেন।
৩. নখ বা আঙুল ভেতরে চেপে থাকে এমন জুতা না পরে আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করতে হবে।
৪. আঁটসাঁট, বন্ধ বা সু জুতা পরলে যাদের অতিরিক্ত ঘাম হয় তাদের দীর্ঘসময় জুতা পরে থাকা যাবে না।
Comments