‘চোখের সামনে নদীতে চলে গেল বাড়ি’
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার হাটপাঁচিল গ্রামের গোরস্থান থেকে যমুনা নদীর দূরত্ব এখন প্রায় আধা কিলোমিটার।
নদীর তীর ধরে হাঁটলে দেখা যায়, উঁচু উঁচু মাটির ঢিবি সাক্ষী হয়ে আছে বসতির।
গ্রামবাসী জানান, গত দুই মাসে প্রায় আধা কিলোমিটার এগিয়ে এসেছে যমুনা। প্রতিদিনই তীব্রতর হচ্ছে ভাঙন। যে কারণে আধা-পাকা ও কাঁচা ঘরের কাঠামো, আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে।
তারা আরও জানান, গত দুই সপ্তাহে শতাধিক বাড়ি-ঘর যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের টিন-খুঁটি, আসবাবপত্র অনেকেই সরিয়ে নিয়েছেন, অনেকে নিচ্ছেন। কেউ কেউ আশায় বুক বেঁধে আছেন—ভাঙন থামবে, ভিটা ছেড়ে আশ্রয়হীন হতে হবে না।
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এক কাপড়ে বাড়িতে বাড়িতে আশ্রয় খুঁজছেন আজুবা বেগম। গত ২৮ জুন চোখের সামনে তার পাকাবাড়ি নদীতে ধসে যায়।
যমুনার তীরেই এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তার কথা হয়।
'রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। বিকট শব্দ শুনে সবাই ঘর থেকে বের হই। দেখলাম, বিরাট চাঁই ভেঙে পড়েছে নদীতে। মুহূর্তে আশঙ্কা হলো, কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো আমার ঘরটিও ভেঙে পড়বে। কী করবো বুঝে ওঠার আগেই প্রথমে ঘরের এক অংশ, ধীরে ধীরে চোখের সামনে নদীতে চলে গেল আমার বাড়ি,' বলেন আজুবা।
তিনি বলেন, শুধু জীবনটাই বাঁচাতে পেরেছি। পরিবারের সদস্যরা একেকজন একেক জায়গায়।
হঠাৎ নিঃস্ব হয়ে যাওয়া শোক হাটপাঁচিল গ্রামের বাসিন্দা ওমর ফারুকসহ শতাধিক মানুষের।
শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর, এনায়েতপুর গ্রামের চিত্রও একই রকম। এনায়েতপুর থেকে কৈজুরী পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকার বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি ভাঙন ঝুঁকিতে আছে।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ডেইলি স্টারকে জানান, 'উপজেলা প্রশাসন এ পর্যন্ত ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৭৮ জনের নামের তালিকা পেয়েছে।
শিগগির তাদের সহায়তায় উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মনে করে, তাদের দুরবস্থার কারণ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলা।
ভাঙনে প্রায় নিঃস্ব হাটপাঁচিল গ্রামের বাসিন্দা আবেদ আলী বলেন, 'নদী পারের মানুষ ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। সামান্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে আমাদের কোনো লাভ নেই। ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা করতে বছরের পর বছর কাজ চলছে কিন্তু তীর সংরক্ষণের কাজ শেষ হচ্ছে না! বড় বড় সিসি ব্লকগুলো নদী তীরে পড়ে আছে।'
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নাজমুল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শাহজাদপুরে নদী ভাঙন রোধে এনায়েতপুর থেকে কৈজুরী পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্প চলমান। এই প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছর পর্যন্ত রয়েছে।
'নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নদী ভাঙনের ঝুঁকি থাকবে না,' বলেন তিনি।
Comments