ইউরো

রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জার্মানিকে বিদায় করে সেমিফাইনালে স্পেন

ছবি: এএফপি

দ্বিতীয়ার্ধে দানি অলমোর লক্ষ্যভেদে এগিয়ে যাওয়া স্পেন লিড হারাল নির্ধারিত সময়ের এক মিনিট বাকি থাকতে। জার্মানির হয়ে সমতা টানলেন ফ্লোরিয়ান ভিরৎজ। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের জমজমাট লড়াইটি এরপর যখন টাইব্রেকারে যাওয়ার পথে, তখনই শেষ সময়ে ব্যবধান গড়ে দিলেন বদলি মিকেল মেরিনো। স্বাগতিকদের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে উঠল লুইস দে লা ফুয়েন্তের শিষ্যরা।

স্টুটগার্টে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো রোমাঞ্চকর কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানদের বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে স্প্যানিশরা। ম্যাচের ৫১তম মিনিটে অলমো জাল খুঁজে নেওয়ার পর ৮৯তম মিনিটে গোল করেন ভিরৎজ। এরপর ১১৯তম মিনিটে লা রোহাদের শিবিরে উল্লাসের তীব্র ঢেউ বইয়ে দেন মেরিনো।

এই প্রথম ইউরোর শেষ আট থেকে বাদ পড়ল জার্মানি। এর আগে চারবার (১৯৯৬, ২০০৮, ২০১২ ও ২০১৬) এই পর্যায়ে পৌঁছে প্রতিবারই তারা পেয়েছিল সেমির টিকিট। শুধু তাই নয়, ইউরোপের ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের আসরে প্রথমবারের মতো স্বাগতিক দল ছিটকে পড়ল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। এর আগে চারবারই (১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ড, ২০০০ সালে নেদারল্যান্ডস, ২০০৪ সালে পর্তুগাল ও ২০১৬ সালে ফ্রান্স) আয়োজকরা সেমি নিশ্চিত করেছিল।

জার্মানির মাটিতে তাদের বিপক্ষে ৮৯ বছর পর জিতল স্পেন। ১৯৩৫ সালে দুই দলের প্রথম দেখায় প্রীতি ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছিল স্প্যানিশরা। এরপর তাদের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে আটবারের সাক্ষাতে পাঁচটি জয়ের সঙ্গে তিনটি ড্র করেছিল জার্মানরা।

ম্যাচের প্রথম মিনিটেই আক্রমণ শানায় স্পেন। আলভারো মোরাতার পাসে পেদ্রির শট অনায়াসে লুফে নেন গোলরক্ষক মানুয়েল নয়্যার। সাত মিনিটের মধ্যে অবশ্য চোট নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় মিডফিল্ডার পেদ্রিকে। টনি ক্রুসের ফাউলে পায়ে ব্যথা পেয়ে খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি।

উজ্জ্বল শুরু ধরে রেখে জার্মানির রক্ষণে একের পর এক হানা দিতে থাকে স্প্যানিশরা। ১৫তম মিনিটে উইঙ্গার লামিন ইয়ামালের ফ্রি-কিক অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দুই মিনিট পর ফাবিয়ান রুইজের শট চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে।

প্রতিপক্ষের ছড়ানো ভীতি সামলে জার্মানরা প্রথমবারের মতো শট লক্ষ্যে রাখতে পারে ২১তম মিনিটে। কিন্তু ইল্কাই গুন্দোয়ানের ক্রসে কাই হাভার্টজের হেড সরাসরি চলে যায় গোলরক্ষক উনাই সিমোনের হাতে। ৩৫তম মিনিটে ফের হতাশ করেন ফরোয়ার্ড হাভার্টজ। অ্যান্টোনিও রুডিগারের লম্বা করে বাড়ানো বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যে শট নেন তিনি, তা রুখে দেন সিমোন।

পরের মিনিটে জার্মানিকে বড় বিপদ থেকে বাঁচান নয়্যার। ডি-বক্সে উইঙ্গার নিকো উইলিয়ামসের কাছের পোস্টে নেওয়া শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি। তিন মিনিট পর আবারও রক্ষাকর্তা নয়্যার। এই দফায় অলমোর শট ফিরিয়ে দেন তিনি।

গোলশূন্য স্কোরলাইন নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল। প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম থেকেই জার্মানিকে চেপে ধরায় মনোযোগী হয় স্পেন। ৪৭তম মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন স্ট্রাইকার মোরাতা। ইয়ামালের কাছ থেকে ডি-বক্সে বল পেয়ে শরীর ঘুরিয়ে জায়গা বানিয়ে নেন তিনি। তবে খুব কাছ থেকে তার নেওয়া শট অনেক ওপর দিয়ে চলে যায়।

চার মিনিট পর ভাঙে অচলাবস্থা। দাপুটে ফুটবল খেলার সুফল অবশেষে আদায় করে এগিয়ে যায় স্পেন। দৌড়ে ডি-বক্সে ঢুকে ইয়ামালের কাটব্যাকে প্রথম ছোঁয়ায় নিচু শটে জাল কাঁপান পেদ্রির বদলি নামা উইঙ্গার অলমো। ডাইভ দিলেও বল রুখে দেওয়া সম্ভব হয়নি নয়্যারের পক্ষে।

পিছিয়ে পড়ার পর যেন টনক নড়ে ওঠে জার্মানির। ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়িয়ে পাল্টা আক্রমণে প্রতিপক্ষকে ব্যতিব্যস্ত করে ফেলে তারা। ৬৯তম মিনিটে সমতা প্রায় টেনেই ফেলেছিল দলটি। মিডফিল্ডার রবার্ত আনদ্রিচের শট ঠেকিয়ে জাল অক্ষত রাখেন সিমোন। আট মিনিট পর ভাগ্য সহায় হয়নি জার্মানদের। বদলি স্ট্রাইকার নিকলাস ফুয়েলক্রুগের শট বাধা পায় পোস্টে।

৮৬তম মিনিটে বিদায়ী মিডফিল্ডার ক্রুসের ফ্রি-কিকে হাভার্টজের সোজা হেড রুখে দেন সিমোন। এরপর স্পেন যখন জয়ের সুবাস পাচ্ছে, তখনই ভিরৎজ স্বস্তি আনেন জার্মানি শিবিরে। দূরের পোস্ট থেকে ইয়োশুয়া কিমিখ হেড করে বল রাখেন ডি-বক্সে। এরপর নিচু শটে নিশানা ভেদ করেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ভিরৎজ।

অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে দুই দলের সামনেই সুযোগ আসে লিড নেওয়ার। কিন্তু মিকেল ওইয়ারজাবাল পারেননি স্পেনকে আনন্দে ভাসাতে। ভিরৎজও ব্যর্থ হন জার্মানিকে উদযাপনের মুহূর্ত এনে দিতে। দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টির জোরালো আবেদন তোলে জার্মানরা। কিন্তু ১০৭তম জামাল মুসিয়ালার শট ডি-বক্সে ডিফেন্ডার মার্ক কুকুরেয়ার হাতে লাগলেও রেফারি খেলা চালিয়ে যান।

এরপর ১১৯তম মিনিটে জয়সূচক গোল করে ফেলেন মেরিনো। বামদিক থেকে অলমোর ক্রসে লাফিয়ে উঠে হেড করে জাল কাঁপান তিনি। ইউলিয়ান নাগেলসমানের শিষ্যদের সামনে সুযোগ এসেছিল ফের সমতা টানার। কিন্তু যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে ফুয়েলক্রুগের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি।

স্পেন যদিও পারেননি পুরো ১১ জন নিয়ে খেলা শেষ করতে। একদম শেষ মুহূর্তে মুসিয়ালাকে টেনে ফেলে দিয়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ডসহ লাল কার্ড দেখেন ডিফেন্ডার দানি কারভাহাল। ফলে নিশ্চিতভাবেই সেমিতে খেলতে পারবেন না তিনি।

খেলোয়াড়দের মধ্যে মাঠে বাড়তি কোনো উত্তাপ না থাকলেও প্রচুর ফাউল হয় এই ম্যাচে। দুই দল মিলিয়ে করে মোট ৩৯টি ফাউল। একটি লাল কার্ডের সঙ্গে ছয়টি হলুদ কার্ড দেখে স্পেন। জার্মানি পায় আটটি হলুদ কার্ড।

৩৫ বছর বয়সী ক্রুস আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, এবারের ইউরো দিয়েই সব ধরনের ফুটবল থেকে অবসরে যাবেন তিনি। দেশের মাটিতে তার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটা হলো না মধুর। ইউরো না জেতার আক্ষেপ নিয়েই বিদায় নিতে হলো ২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী অভিজ্ঞ তারকাকে।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

8h ago