সুন্দরবন-সংলগ্ন ৫২ নদী-খালের তীরে ফিরিয়ে আনা হবে লুপ্ত ম্যানগ্রোভ বন

protecting sundarbans
সুন্দরবন। স্টার ফাইল ছবি

সুন্দরবন-সংলগ্ন ৫২টি নদী ও খালের তীরে ম্যানগ্রোভ অর্থাৎ শ্বাসমূলীয় বন সৃজনের উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। সুন্দরবনে প্রাকৃতিকভাবেই যেসব গাছপালা আছে সেগুলোই লাগানো হবে এসব নদী-খালের তীরে। ফরাসি উন্নয়ন সংস্থার অর্থায়নে প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন বাংলাদেশ ও বন বিভাগ বাস্তবায়ন করবে এই কাজ।

সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় 'আপার সুন্দরবন রিস্টোরেশন প্রোগ্রাম' নামে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খুলনার বটিয়াঘাটার শেখ রাসেল ইকোপার্কের পাঁচ একর জমিতে লেকের তীরে যেভাবে ম্যানগ্রোভ বনায়ন করা হয়েছে, সেভাবেই বাস্তবায়ন করা হবে এ কার্যক্রম।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশে প্রথমবারের মতো সৃজিত এই ম্যানগ্রোভ বনের আদলে বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় ৫২টি নদী ও খালে বিলীন হয়ে যাওয়া ম্যানগ্রোভ বন পুনরুদ্ধার করা হবে।

এই নদী ও খালগুলো সুন্দরবনের উপরিভাগে তিন জেলার ছয় উপজেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত। উপজেলাগুলো হলো- শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, দাকোপ, কয়রা ও শ্যামনগর।

বন বিভাগ বলছে, আগামী ৬ থেকে ৮ জুলাই বন অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা ও আইইউসিএন বাংলাদেশ-এর সদস্যরা যৌথভাবে সুন্দরবন ও সুন্দরবনের উপরিভাগে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনবসতি এবং শেখ রাসেল ইকোপার্কে সৃজিত ম্যানগ্রোভ মডেলটি পরিদর্শন করবেন।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মহসিন হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ফরাসি সরকার জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রথম সারিতে থাকা বাংলাদেশে তাদের 'লস অ্যান্ড ড্যামেজ' উদ্যোগটি কার্যকর করতে চায়। এর অংশ হিসেবে 'আপার সুন্দরবন রিস্টোরেশন প্রোগ্রাম'- এর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এই প্রকল্পের ভেতর দিয়ে সুন্দরবনের উপরিভাগে নদী ও খালপাড় থেকে বিলীন হয়ে যাওয়া ম্যানগ্রোভ বন পুররুদ্ধার করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই বন কর্মকর্তা। বলেন, 'পৃথিবীর যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও বঙ্গোপোসগরে সৃষ্ট ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়ে সুন্দরবনসহ এ এলাকার জনবসতি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনও উপকৃত হবে।'

বন বিভাগ বলছে, নদীতে বাঁধ দেওয়া এবং বনসংলগ্ন এলাকায় চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষের মতো বিভিন্ন মানবসৃষ্ট কারণে এই নদী ও খালগুলোতে পানিপ্রবাহ প্রবাহ কমে গেছে। কোথাও কোথাও তা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। আবার কোথাও স্লুইসগেটের মাধ্যমে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। ফলে তীরবর্তী প্রাকৃতিক বন বিলীন হয়ে গেছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বন হিসেবে পরিচিত সুন্দরবন এর স্বতন্ত্র প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বিখ্যাত। পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদী হিমালয় থেকে সৃষ্টি হয়ে বঙ্গোপসাগরে এসে মিশেছে। বঙ্গোপসাগরের মোহনার নোনা পানি আর এ তিন নদীর মিষ্টি পানি মিলেমিশে একাকার হয়েছে। পানির সঙ্গে আসা পলি জমে যে বদ্বীপের সৃষ্টি, তাতেই সুন্দরবন গড়ে উঠেছে। এ ধরনের বন উপকূলের স্থিতিশীলতা রক্ষা করে, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-উত্তাল তরঙ্গ ও জোয়ার-ভাটায় ভাঙন প্রতিরোধ করে। ম্যানগ্রোভ বনের উদ্ভিদের শ্বাসমূলের কারণে তা মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর কাছে এক আকর্ষণীয় আশ্রয়।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

1h ago