দেশের ভেতর দিয়ে ভারতের রেল চলাচল জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি: বিএনপি

মির্জা ফখরুল
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্টার ফাইল ফটো

বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের রেল চলাচল করলে দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ রোববার ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে যে ১০টি সমঝোতা স্মারক সই করেছেন তা গোলামির নবতর সংস্করণ মাত্র। কানেক্টিভিটির নামে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের এক অংশ থেকে আরেক অংশ পর্যন্ত রেল যোগাযোগের নামে করিডোর দেওয়া হয়েছে। সমঝোতার আড়ালে যেসব চুক্তি করা হলো তা বাংলাদেশকে আজীবনের জন্য ভারতের গোলামে পরিণত করবে।

বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন হবার আশঙ্কার ব্যাপারে ফখরুল বলেন, আমাদের দেশের প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিকে ভারতের জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার অংশে পরিণত করা হয়েছে, যা খুবই বিপজ্জনক এবং দেশের স্বাধীনতার প্রতি হুমকি। এটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও জোটনিরপেক্ষ নীতির পরিপন্থী। বস্তুত, এসব সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ভূ—রাজনীতিতে নিরাপত্তা কৌশলগত 'বাফার স্টেট' হিসেবে ভারতকে ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে চায়। এর ফলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জটিলতার মধ্যে জড়িয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, যে সাতটি সমঝোতা স্মারক নতুন করে সই করা হয়েছে, সেগুলোর প্রায় সবগুলোই বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল কেন্দ্রিক। প্রয়োজনের সময় বাংলাদেশ ভূখণ্ডকে ভারতের সামরিক ও বেসামরিক পণ্য পরিবহনের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ 'চিকেন নেক'কে বাই—পাস করে ব্যবহার করার সুদূরপ্রসারী মহাপরিকল্পনা থেকেই এসব সমঝোতা চুক্তি করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে জলাঞ্জলি দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদে ভারতের গোলামি চুক্তির গভীর ফাঁদে ফেলার সেই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। জাতীয় স্বার্থ—বিরোধী এহেন চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না। 

ভারতের সঙ্গে সই হওয়া চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষা হচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, গত দেড় দশকে ভারত থেকে বাংলাদেশের জনগণ কিছুই পায়নি। অথচ এই সময়ে কানেক্টিভিটির নামে একের পর এক ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ট্রানজিট—করিডোর দেয়ার রাজনৈতিক—অর্থনৈতিক ও কৌশলগত ঝুঁকি সত্ত্বেও সবকিছুই একতরফাভাবে করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বার্থকে কোন গুরুত্বই দেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, স্থল ও নৌ ট্রানজিটে ভারতের অবশিষ্ট অংশের সঙ্গে উত্তর পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার্স এর যোগাযোগের সময় ও দৈর্ঘ্য কমিয়েছে সর্বনিম্ন প্রায় তিন চতুর্থাংশ। কলকাতা ও আগরতলার মধ্যে ১৭০০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ কিলোমিটারে। ভারত পেয়েছে বাংলাদেশের পায়রা, মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের অগ্রাধিকার সুবিধা। অন্যদিকে বাংলাদেশ নেপালের মাত্র ২১/২২ কিলোমিটারের ট্রানজিট সুবিধা ভারতের কাছে থেকে আদায় করতে পারেনি। একতরফা আগ্রাসী বাণিজ্যে বাংলাদেশকে ভারতের অবাধ বিপনি কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। দু দেশের সামগ্রিক ২৬ বিলিয়ন বাৎসরিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের হিস্যা মাত্র দুই বিলিয়ন। তীব্র বেকারত্বের বাংলাদেশে কাজ করছে লাখ লাখ ভারতীয় যুবক। ভারতের রেমিট্যান্স আহরণের প্রধান উৎসের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান চার নম্বরে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছেন, গত ১০ মাসে ভারতীয়রা নিয়ে গেছে ৫০.৬০ মিলিয়ন ডলার। এর বাইরেও অবৈধ পন্থায় নিয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ ডলার।

তিনি আরও বলেন, একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য উচ্চ মূল্য নির্ধারিত হবে সেটাই স্বাভাবিক, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও আমরা তার ব্যতিক্রম দেখি না, বিশেষ করে যখন খোদ প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেন, 'আমরা কোনো প্রতিদান চাই না। আমরা ভারতকে যা দিয়েছি সেটা তারা সারা জীবন মনে রাখবে।' ওবায়দুল কাদের বলেন, 'তলে তলে আপোষ হয়ে গেছে। ভারত আছে আমরা আছি।' সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছিলেন, 'ভারতে গিয়ে বলেছি, এই সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে।'

'বর্তমান অবৈধ শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা অটুট রাখার হীন স্বার্থে জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Neonatal mortality still high at 20 per 1,000 births

A recent study has raised concerns about their current condition, revealing operational issues that could threaten future progress.

13h ago