কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় চিকিৎসক নিহত: ছাত্রলীগ নেতাসহ কারাগারে ২
চট্টগ্রামের আকবরশাহ এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় এক চিকিৎসক নিহতের মামলায় ছাত্রলীগ নেতাসহ দুই জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত।
তারা হলেন—ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রসুল নিশান এবং আরিফ উল্লাহ রাজু।
আজ বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর জজ আদালতের বিচারক ডা. জেবুন্নেসা আসামিদের কারাগারে প্রেরণ করেন।
এর আগে তারা আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-প্রসিকিউশন) মো. মফিজ উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুনানির পর আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।'
পুলিশ ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গোলাম রাসুল তার অনুসারীদের নিয়ে সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে যান। এ সময় আদালতের বারান্দায় তার ৫০ থেকে ৬০ জন অনুসারী ছিলেন। জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা তাদের আদালতের নিচতলায় হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় ছবি তোলেন বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকার ফটোসাংবাদিকেরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যান গোলাম রসুলের অনুসারীরা। একপর্যায়ে তারা উপস্থিত সাংবাদিকদের হুমকি দিতে শুরু করেন।
প্রথম আলো চট্টগ্রাম অফিসের জ্যেষ্ঠ আলোকচিত্র সাংবাদিক সৌরভ দাশ ছবি তোলার সময় গোলাম রসুলের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা সুমন খান বাধা দেন। ফেসবুকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহসভাপতি লেখা রয়েছে তার পরিচয় হিসেবে।
সৌরভ দাশ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছবি তোলার সময় সুমন আমাকে গালি দেন। হুমকি দিয়ে বলেন, "তুই প্রথম আলোর সাংবাদিক? ছবি কেন তুলছিস? তোকে মেরে ফেলব, সর।"'
আকবরশাহ থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, এই কিশোর গ্যাংয়ের সবাই ছাত্রলীগ নেতা গোলাম রসুল নিশানের অনুসারী হিসাবেই এলাকায় পরিচিত। নিশান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি।
নগরের আকবরশাহ থানার পশ্চিম ফিরোজ শাহ কলোনিতে গত এপ্রিলে দন্ত চিকিৎসক কোরবান আলীর (৬০) ওপর হামলা ঘটনা ঘটে। মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় কোরবান আলীর ছেলে আলী রেজা মোট আট জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
কিছুদিন পালিয়ে থাকার পর জামিন নিয়ে এলাকায় আসেন নিশান। এমনকি সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে নির্দোষও দাবি করেন তিনি।
আলী রেজা বলেন, 'গত ৫ এপ্রিল পশ্চিম ফিরোজ শাহ হাউজিং এলাকায় দুজন স্কুলছাত্রকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মারধর করছিল। আমার কাছে এসে ওই দুই ছাত্র সাহায্য চায়। সঙ্গে সঙ্গে আমি ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ এসে কিশোর গ্যাংয়ের একজনকে ধরে নিয়ে যায়।'
তিনি বলেন, 'ওই দিন সন্ধ্যায় ইফতারি কিনতে বাসা থেকে বের হলে আমাকে একা পেয়ে মারধর করতে শুরু করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। আমাকে মারতে দেখে বাবা এগিয়ে এসে তাদের থামানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ইট দিয়ে বাবার মাথায় আঘাত করতে তিনি লুটিয়ে পড়েন।'
গুরুতর আহত কোরবান আলীকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাংয়ের একটি তালিকা করেছে। সেই তালিকা অনুযায়ী, নগরজুড়ে সক্রিয় রয়েছে অন্তত ২০০ কিশোর গ্যাং। এসব দলে পাঁচ থেকে ২০ জন সদস্য আছে।
কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকতা বা প্রশ্রয় দিচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ৬৪ জন 'বড় ভাই'।
র্যাব গত মার্চ থেকে অভিযান চালিয়ে শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্যকে ধারালো অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ বলছে, টিকটকে সস্তা জনপ্রিয়তা এবং 'হিরোইজম' দেখাতে গিয়ে খুনসহ নানান অপরাধে জড়াচ্ছে তারা।
Comments