বরিশালে ১৫ শতাংশ চামড়া নষ্টের আশঙ্কা, দামও কম

বরিশালের বিভিন্ন এলাকার মাদ্রাসা থেকে আনা কোরবানির পশুর চামড়া কিনে স্তূপ করছে ব্যবসায়ীরা। ছবিটি গতকাল তুলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী টিটু দাস।

আবহাওয়া অনুকূল না থাকা, অদক্ষ হাতে চামড়া ছাড়ানো ও সঠিক সময়ে লবণ না দেওয়ার কারণে এবার বরিশাল বিভাগে কোরবানি পশুর অন্তত ১৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, নষ্ট নয়, হয়তো কিছু সংখ্যক চামড়ার মান কমে যেতে পারে।

বরিশালের প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়, বরিশাল বিভাগে এবার চার লাখ ২৮ হাজার পশু কোরবানি হয়েছে। এরমধ্যে দুই লাখ ৮ হাজার গরু, এক লাখ ২৭ হাজার ছাগল, ২০ হাজার ভেড়া, এক হাজার মহিষ ও সাত হাজার অন্যান্য।

বিভাগে গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানি বেশি হলেও একাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়া উপক্রম দেখা দিয়েছে।

বরিশাল বিভাগীয় স্কিন অ্যান্ড হাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. বাচ্চু মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এবার তারা অন্তত ৬০ হাজার গরুর চামড়া সংরক্ষণের টার্গেট নিয়েছেন।

তবে তিনি অভিযোগ করে জানান, ঢাকার ট্যানারি মালিকরা পূর্বের বকেয়া টাকা না দেওয়ায় তারা প্রয়োজনীয় সংখ্যক চামড়া তারা কিনতে পারছেন না। এর ফলে দূর-দূরান্তের চামড়া তাদের বাকিতে রাখতে হচ্ছে। যে কারণে অনেকেই গাড়ি ভাড়া দিয়ে চামড়া এনে বিক্রি করতে আগ্রহ পাচ্ছেন না। এতে দূর-দূরান্তের এসব চামড়ার একাংশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

বরিশালের পদ্মাবতী এলাকার কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান মাসুম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবার অন্তত ১৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কেননা এবার অত্যন্ত গরম পড়েছে এবং দূর-দূরান্তের চামড়া এসে পৌঁছতে দেরি হচ্ছে। একসঙ্গে চামড়া না আসার কারণে চামড়া থেকে মাংস আলাদা করাসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমেও তেমন গতি নেই। এর ফলে চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে গেছে।' 

সরজমিনে বরিশাল কীর্তনখোলা নদীর পাড় এবং পদ্মাবতী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাতেও দূর-দূরান্ত থেকে লবণ ছাড়া চামড়া পাইকারি বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে আসছে। পশু জবাইয়ের ১০-১৫ ঘণ্টা পর লবণ ছাড়া যেসব চামড়া আসছে সেগুলোর একাংশ নষ্ট হয়ে যাবে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগ বরিশাল অফিসের বিভাগীয় পরিচালক লুৎফর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবার আবহাওয়া অনুকূল না থাকা, অদক্ষ হাতে চামড়া ছাড়ানো ও সময়মত লবণ না দেওয়ার কারণে বেশ কিছু চামড়ার মান কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে কত সংখ্যক চামড়ার এরূপ অবস্থা হতে পারে এর কোনো পরিসংখ্যান নেই।'

বরিশাল চামড়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বড় ও ছোট মিলিয়ে গরুর চামড়া গড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশি বড় গরুর চামড়ারও ৪০০-৫০০ টাকার বেশি মূল্য নেই। 

চামড়ার বাজারে আশানুরূপ মূল্য না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে বিক্রেতাদের। 

শাহাদাত হোসেন নামে এক মৌসুমি চামড়া সংগ্রাহক জানান, তিনি ১২০টি চামড়া নিয়ে এসেছেন। তবে পাইকাররা গড়ে ৩০০ টাকা করে দাম দিতে চাইছেন। 

'হাজার টাকার নিচে কোনো জুতা পাওয়া যায় না, তবে চামড়ার কোনো দাম নেই' এই বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে অনেকে কাঁচা চামড়া এনে বিপাকে পড়েছেন বলেও জানান। সংক্ষুব্ধ কেউ কেউ বিক্রি না করে কীর্তনখোলা নদীতে চামড়া ফেলে দেওয়ারও হুমকি দেন।

তবে ব্যবসায়ীরা জানান, চামড়ার দাম কমে যাওয়ার জন্য ট্যানারি মালিকরাই দায়ী। ২০১৬ সালের আগে এই পরিস্থিতি ছিল না। বিপুল সংখ্যক টাকা বকেয়া থাকার কারণে তারা চামড়া কিনতে পারছেন না। বাজারে চাহিদা না থাকায় কাঁচা চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা।

Comments

The Daily Star  | English

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

16h ago