যারা চসিকের সঙ্গে ব্যবসায় আগ্রহী তাদের খরচে মেয়রের বিদেশ সফর

জাপানে এওটিএসের কর্মশালায় মেয়রের বক্তৃতার এই ছবি গত ২২ এপ্রিল চসিকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সঙ্গে ব্যবসা করতে আগ্রহী সংস্থার খরচে অন্তত তিনটি দেশ সফর করেছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, যা নিয়ে সমালোচনা চলছে।

চসিক সূত্র জানায়, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে তিনটি পৃথক দেশ জাপান, ফিনল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ায় যান মেয়র।

জানা গেছে, গত ২১ এপ্রিল ১২ দিনের সফরে জাপান যান রেজাউল করিম চৌধুরী। জাপানি সংস্থা দ্য অ্যাসোসিয়েশন ফর ওভারসিজ টেকনিক্যাল কো-অপারেশন অ্যান্ড সাসটেইনেবল পার্টনারশিপের (এওটিএস) আমন্ত্রণে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। সেই সফরে এওটিএসের একটি কর্মশালায় মূল বক্তা হিসেবেও অংশগ্রহণ করেন তিনি। 
 
কর্মশালায় মেয়রের বক্তৃতার একটি ছবি গত ২২ এপ্রিল চসিকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়। 

জানা গেছে, মেয়রের ওই সফরের সব খরচ এওটিএস বহন করেছিল। ওই সফরে মেয়রের সঙ্গে ছিলেন চসিকের দুই কর্মকর্তা ও চসিক ১০ নম্বর ওয়ার্ডের (উত্তর কাট্টলী) কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু।
  
এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার মঞ্জু দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা এওটিএসের আমন্ত্রণে জাপান সফর করেছেন।

তিনি বলেন, 'এওটিএস হলো জাপানের একটি সংস্থা, যা আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে। সংস্থাটি চসিকের কর্মীদের আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দক্ষ করে তুলতে প্রশিক্ষণ দিতে আগ্রহী।'
 
ফিনল্যান্ডের হাবা গ্রুপ গত বছর আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা দেখার জন্য চসিক মেয়রকে দেশটির তুর্কু শহর পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানায়।

চসিক সূত্র জানায়, হাবা গ্রুপের কর্মকর্তারা গত বছরের আগস্টে মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বন্দরনগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

সেসময় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ডেইলি স্টারকে জানিয়েছিলেন যে, হাবা গ্রুপের কর্মকর্তারা বন্দর নগরীতে ভূগর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

তিনি বলেন, 'বন্দর নগরীতে ভূগর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা গেলে শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিক হয়ে উঠবে এবং নগরবাসী সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন থেকে ছড়িয়ে পড়া বর্জ্যের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাবে।'
  
গত বছরের ৫ নভেম্বর চসিক মেয়র ১০ দিনের সফরে তুর্কু শহরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন। ওই সফরে সঙ্গী ছিলেন তার পিএস আবুল হাসেম। সূত্র জানায়, সফরের ব্যয়ভার বহন করে হাবা গ্রুপ।
 
গত ১০ জানুয়ারি চসিক মেয়র দুই কর্মকর্তাকে নিয়ে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা নিতে সাত দিনের সফরে দক্ষিণ কোরিয়ায় যান।

সেসময় চসিকের তৎকালীন সচিব খালেদ মাহমুদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ধারণা নেওয়ার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সংস্থার আমন্ত্রণে মেয়র ও সিটি করপোরেশনের দুই কর্মকর্তা ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ত্যাগ করেছেন।'

দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কোরিয়া এনভায়রনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট (কেইআইটিআই) এই সফরের খরচ বহন করে বলে চসিক সূত্র জানায়।

চসিকের সঙ্গে ব্যবসায় আগ্রহী মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় বিদেশ সফরকে 'দুর্নীতি' আখ্যা দিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আক্তার কবির চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের অধীন স্থানীয় সরকার বিভাগের উচিৎ মেয়রকে এই ধরনের সফর থেকে বিরত রাখতে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া।'
     
'যেসব প্রতিষ্ঠান চসিকের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায় বা চসিক থেকে সুবিধা নিতে চায়, তাদের খরচে কোনো সফরে যাওয়া সম্পূর্ণ অনৈতিক। এটি দুর্নীতি', বলেন তিনি।

আক্তার কবির চৌধুরী বলেন, 'মেয়রের সফরে প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করবে কেন? কেননা তাদের অবশ্যই চসিক থেকে সুবিধা বা ব্যবসার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এটা অনেকটা ঘুষ নেওয়ার মতোই।'

তিনি আরও বলেন, 'একজন জনপ্রতিনিধির জন্য বিষয়টি সম্পূর্ণ বেমানান। আধুনিক যুগে একজন মেয়রকে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে বিদেশ যাওয়ার দরকার হয় না, কারণ ইন্টারনেট ও ইউটিউবের মাধ্যমেই তা জানা যায়।'
   
এই ধরনের প্র্যাক্টিসকে 'অনৈতিক' উল্লেখ করে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অধ্যাপক সিকান্দার খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেয়রের উচিৎ নয় চসিকের সঙ্গে ব্যবসা করতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের খরচে বিদেশ সফরে যাওয়া।'

'যারা মেয়রকে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন, তাদের অবশ্যই কোনো না কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। তাদের চসিক থেকে কোনো সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্য রয়েছে। সুতরাং এ ধরনের প্র্যাকটিস বন্ধ করা উচিত', যোগ করেন তিনি। 

এ বিষয়ে জানতে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

Comments

The Daily Star  | English
IMF loan conditions

IMF conditions: Govt pledges to track graft in tax admin

The government has pledged a series of sweeping reforms to meet International Monetary Fund conditions for the next instalment of its $5.5 billion loan, including a public survey to measure corruption in tax administration and a phased reduction of subsidies on electricity, fertiliser, remittances and exports.

7h ago