ইতিহাসের উষ্ণতম এপ্রিল, কিছুটা স্বস্তি নিয়ে আসতে পারে মে

গত ২৭ এপ্রিল গরম কমাতে ব্যস্ত সড়কে পানি ছিটাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ওয়াটার ক্যানন। ছবি: এএফপি

এপ্রিল মাসের তীব্র গরমের পর মে মাসে কিছুটা স্বস্তি আসতে পারে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মে মাসে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এপিলের মতো মে মাসে তাপপ্রবাহের সময়সীমা এতটা দীর্ঘ হবে না, তবে কিছু আর্দ্রতা থাকবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২ মে থেকে দেশে কিছু বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে।

চলতি এপ্রিলের একটানা তাপপ্রবাহ ৭৬ বছরের মধ্যে রেকর্ড। এবারের এপ্রিল ছিল ৭৬ বছরের মধ্যে উষ্ণতম।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২ মে থেকে ৪ মে পর্যন্ত বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হবে। পরে তাপমাত্রা বাড়তে পারে এবং মে মাসে দুই থেকে তিনটি মৃদু তাপপ্রবাহ এবং এক থেকে দুটি তীব্র তাপপ্রবাহ হতে পারে।' 

মে মাসকে উষ্ণতম মাসগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হলেও, কর্মকর্তারা বলেছেন যে এল নিনোর নিরপেক্ষ অবস্থার কারণে আসন্ন মে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম গরম হতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পরিস্থিতি এল নিনো শুরু হওয়ার প্রায় সাত মাস পরে এখন নিরপেক্ষ অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। অন্তত জুলাই পর্যন্ত এটি নিরপেক্ষ অবস্থায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। লা নিনা (শীতল পর্যায়) সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এল নিনো ২০২৩ সালের জুন মাসে শুরু হয়েছিল। যার ফলে সারাদেশে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত এবং দীর্ঘ তাপপ্রবাহ শুরু হয়। 

'এল নিনো' আর 'লা নিনা' দুটি স্প্যানিশ শব্দ। এল নিনো অর্থ বালক বা ছোট ছেলে, আর লা নিনা অর্থ বালিকা বা ছোট মেয়ে। নাম দুটি সামুদ্রিক বায়ু সঞ্চালনের ফলাফলের দুই অবস্থা বোঝায়। সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এবং বায়ুমণ্ডলীয় চাপের ক্রমাগত পরিবর্তন থেকেই সৃষ্টি হয় এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রশান্ত মহাসাগরের পানির তাপমাত্রার চক্রাকার পরিবর্তনের ফলে এই বৈশ্বিক জলবায়ুগত ঘটনাটি হয়ে থাকে। এর কারণে তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাত উভয়ই প্রভাবিত হয়।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জলবায়ু চক্র তিন প্রক্রিয়ায় আবর্তিত হয়। প্রক্রিয়াটি এনসো চক্র নামে পরিচিত। এনসো চক্রের তিনটি পর্যায় রয়েছে: এল নিনো, লা নিনা আর এনসো নিউট্রাল বা নিরপেক্ষ পর্যায়। আবহাওয়ার শুষ্ক মৌসুম হলো এল নিনো পর্যায়, যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত কমে যায় আর বন্যাও কম হয়। এ সময় তাপমাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। আর লা নিনার সময় বৃষ্টিপাত ও বন্যা বেশি হয়। তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়। 

স্বাভাবিক সময়ে নিরক্ষরেখার চারপাশের বাণিজ্য বায়ু বা অয়ন বায়ু প্রশান্ত মহাসাগরের গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলগুলো থেকে উষ্ণ পানি বয়ে আনে। পশ্চিম দিকে যেতে যেতে এই বাতাস পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর থেকে সেই উষ্ণ পানি সমুদ্রের শীতল এলাকায় নিয়ে যায়। নিরপেক্ষ পর্যায়ে গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় সমুদ্রপৃষ্ঠের স্বাভাবিক তাপমাত্রা -২ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকে।

এল নিনো সাধারণত প্রতি ২-৭ বছরে ঘটে এবং ৯-১২ মাস স্থায়ী হতে পারে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ার ধরণ প্রভাবিত হয়।  অন্যদিকে, লা নিনা প্রতি ৩-৫ বছরে ঘটে এবং কখনো কখনো পরপর বছরেও ঘটতে পারে। এর ফলে বৃষ্টিপাত বেড়ে যায় এবং আবহাওয়ার স্বতন্ত্র ধরণ দেখা যায়। 

কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল বলেন, 'চলমান তাপপ্রবাহ ৩ মে এর পর বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে কমতে শুরু করবে। ৩ মে থেকে ১৩ মে এর মধ্যে, প্রচণ্ড বজ্রঝড়, তীব্র বজ্রপাত এবং শিলাবৃষ্টি সারাদেশে বয়ে যাবে, প্রায় প্রতি রাতে সিলেট বিভাগে, বিশেষ করে সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হবে।'

আমেরিকান গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম মডেল অনুযায়ী, ১৪ মে থেকে ১৭ মে এর মধ্যে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার কথা জানায়। এটি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য এবং ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের মধ্যে ২০-২৪ মে এর মধ্যে স্থলভাগে আঘাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। 

'ঘূর্ণিঝড়ের পরে, জুনের প্রথম সপ্তাহে বর্ষার আগমনের পরে ভারত ও বাংলাদেশের ওপর আরেকটি তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে,' কামাল বলেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুল কালাম মল্লিক বলেন, 'আমরা সাধারণত ১০ দিনের আগে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেই না। এখন পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে এমন কোনো ইঙ্গিত নেই।'

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জুন থেকে সেপ্টেম্বর, বর্ষা মৌসুমের শেষার্ধ পর্যন্ত গড় বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। এটি বলছে, এল নিনোর নিরপেক্ষ অবস্থা রূপান্তরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বর নাগাদ লা নিনা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, যেহেতু এপ্রিলে দীর্ঘ তাপপ্রবাহ ছিল, তাই মে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম তীব্র তাপপ্রবাহ থাকবে। আবহাওয়া দিন দিন অপ্রত্যাশিত হচ্ছে, জলবায়ুও তাই।

এ জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেন তিনি। 

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

2h ago