কাতার আমিরের সফরে সই হবে ৬ চুক্তি ও ৫ সমঝোতা স্মারক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি: ইউএনবি থেকে নেওয়া

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ঢাকা। সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ সফরে আসবেন তিনি। এ সফরে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ১১টি সহযোগিতার বিষয়ে ছয়টি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হবে।

রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন কাতারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ছয়টি চুক্তির মধ্যে একটি হলো বন্দি বিনিময় চুক্তি।

তিনি আরও বলেন, 'এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। চলতি বছর নতুন সরকার গঠনের পর মধ্যপ্রাচ্য থেকে এটিই প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সফর।'

এ ছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, দ্বৈত কর পরিহার, জনশক্তি রপ্তানি সংক্রান্ত নথিও সই হবে।

দ্বিপক্ষীয় ক্ষেত্রে সহযোগিতার ক্ষেত্র ছাড়াও ফিলিস্তিন-ইসরায়েলসহ বৈশ্বিক ইস্যু নিয়েও আলোচনা হবে, যেখানে বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'স্বাভাবিকভাবেই এই আলোচনা উঠতে পারে। গাজায় হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। সবাই এটা চায়। আমরাও চাই।'

গত মাসে তুরস্কে আন্তালিয়া কূটনীতি ফোরামে অংশ নেওয়ার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টার জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও জাতিগত নির্মূলের জন্য ইসরাইলকে জবাবদিহির আওতায় আনার ওপরও জোর দেন তিনি।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ শান্তির পক্ষে, যুদ্ধের পক্ষে নয়।'

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার বাংলাদেশে আসবেন কাতারের আমির।

এক গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমিরের দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে তাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার।

সফর উপলক্ষে ঢাকার কয়েকটি রাস্তায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতারের আমিরের ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে।

প্রায় ১৯ বছর পর বন্ধুপ্রতীম দেশ কাতার থেকে ২৪ ঘণ্টা স্থায়ী এমন উচ্চ পর্যায়ের সফর হচ্ছে।

এর আগে ২০০৫ সালের এপ্রিলে কাতারের তৎকালীন আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল-থানি বাংলাদেশ সফর করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'এই সফর দুই দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদারে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।'

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমিরকে গান স্যালুট ও আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অভ্যর্থনা জানাবেন।

মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমিরকে তার কার্যালয়ে অভ্যর্থনা জানাবেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুজনের মধ্যে বৈঠকের পর আরও একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।

সহযোগিতাবিষয়ক নথি সই হওয়ার পর দুই নেতা একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন।

পরিদর্শন বইয়ে সই শেষে মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গভবনে যাবেন আমির। সেখানে রাষ্ট্রপতি তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন।

বঙ্গভবনের দরবার হলে আমিরের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করবেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন।

এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আমিরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির নামে রাজধানীর একটি সড়ক ও একটি পার্কের নামকরণ করা হবে।

এদিন বিকেল ৩টায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন মিরপুরের কালশী এলাকায় পার্ক এবং মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালশী ফ্লাইওভার পর্যন্ত সড়ক উদ্বোধন করবেন তিনি।

আমির যেখানে অবস্থান করছেন সেখানে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন।

এদিনই সন্ধ্যা ৬টায় একটি বিশেষ ফ্লাইটে তার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করার কথা রয়েছে।

বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বাংলাদেশ সফরের পর বাংলাদেশ ও কাতার জনশক্তি, জ্বালানি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বৃহত্তর সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায়।

গত বছরের মার্চে কাতারের রাজধানী দোহায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জাতিসংঘ সম্মেলনের (এলডিসি-৫) ফাঁকে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈঠকে জ্বালানি চাহিদা মেটাতে কাতারের কাছে জ্বালানি বিশেষ করে এলএনজি বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের পর ৪ মার্চ কাতার বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

১৯৭৫ সালের ২৫ জুন দোহায় বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক মিশন চালু করে। ১৯৮২ সালে ঢাকায় কাতারের কূটনৈতিক মিশন চালু হয়।

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অভিন্ন মূল্যবোধ, অভিন্ন ধর্মীয় ভিত্তি, অভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ। কাতারে চার লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কাজ করেন এবং তারা নিবেদিত ও কঠোর পরিশ্রমী হিসেবে প্রশংসিত।

বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১ এবং কাতারের রূপকল্প ২০৩০ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও কাতার একে অপরকে ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ এবং গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে।

Comments

The Daily Star  | English

Jatrabari turns into battlefield as students clash

Students of three colleges clashed at Dhaka's Jatrabari today, turning the area into a battlefield

18m ago