‘আব্বু-আম্মু আমাকে দেখতে আসে না কেন?’

দুটি সেলফিতে সুজন ও তার পরিবার। বামের ছবিতে বাবা লিটন মিয়ার সঙ্গে সুজন। ডানের ছবিতে মা সূর্য বানু ও বোন লিজার সঙ্গে ছোট্ট লামিয়া। তাদের বাবা-মা মারা গেছেন। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন তিন ভাই-বোন। ছবি: সংগৃহীত

শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) স্বজনরা দেখতে এলেই ৯ বছর বয়সী সুজন জানতে চায় তার বাবা-মা ও দুই বোনের কথা।

সুজনের প্রশ্ন, 'আব্বু-আম্মু কোথায়? তারা আমাকে দেখতে আসে না কেন? আমাকে তাদের কাছে নিয়ে যাও।'

স্বজনরা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে, তারা ভালো আছে এবং পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলেই আসবে।

সুজনের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বলারই সাহস পাচ্ছি না যে ওর বাবা-মা মারা গেছেন। ওর শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। বাবা-মায়ের মৃত্যুর খবর শুনলে ওর পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।'

গত ১২ এপ্রিল ভাসানটেকে একটি দোতলা ভবনের নিচতলায় অগ্নিকাণ্ডে বাবা, মা, নানী ও দুই বোনসহ গুরুতর দগ্ধ হয় সুজন।

পরিবারের ধারণা, রান্নার সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিকেজ হচ্ছিল এবং সুজনের বাবা লিটন মিয়া (৪৮) মশার কয়েল জ্বালালে সেখান থেকে আগুন লেগেছে।

আগুনে ৬৭ শতাংশ দগ্ধ হন লিটন মিয়া এবং ৮২ শতাংশ দগ্ধ হন তার স্ত্রী সূর্য বানু (৪০)। সূর্য গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এবং লিটন আজ ভোর ৬টার দিকে মারা যান।

সূর্যর মা মেহেরুন্নেসা (৭০) ১৩ এপ্রিল মারা গেছেন।

পরিবারের সদস্যরা যখন কুমিল্লায় লিটন-সূর্য দম্পতির দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন শরীরের ৪৭ শতাংশ দগ্ধ সুজন এইচডিইউ ইউনিটে চিকিৎসাধীন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সুজনের দুই বোনও—লিজা (১৮) ও লামিয়া (৭)—গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে যাচ্ছে।

সুজনের মতোই বাবা, মা ও ভাইবোনদের দেখতে কাতর হয়ে পরেছে লিজা ও লামিয়া।

সাইফুল বলেন, 'সান্ত্বনা দিতেই মাঝে মাঝে বলছি যে ওদের বাবা-মা অনেকটা ভালো আছে।'

লিজার চাচা সোহাগ মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লিজা তো বড় হয়ে গেছে। আমাদের দেখে এবং হাসপাতাল কর্মীদের কথায় ও হয়তো বুঝতে পারছে যে ওর মা আর নানী আর নেই।'

'গতকাল রাতে ও আমাকে বলেছে, "চাচা, আব্বুর দিকে খেয়াল রাইখেন",' যোগ করেন সোহাগ।

তিনি জানান, লিটন-সূর্য দম্পতির বড় মেয়ে আকলিমা আক্তার দেশের বাইরে থাকেন। আগামীকাল তিনি দেশে ফেরার পর তাদের মরদেহ দাফন করা হবে।

সোহাগ বলেন, 'খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় আমাদের বাড়ি। ঈদের পর পরিবারের নিয়ে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল আমার ভাইয়ের। আগুনে সব শেষ হয়ে গেল।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Govt relieves Kuet VC, Pro-VC of duties to resolve crisis

A search committee will soon be formed to appoint new candidates to the two posts

2h ago