ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার ১২ বছরেও সংস্কার হয়নি সেতু

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর গহিনখালের সেতুটিকে স্থানীয়রা ভেঙে পড়ার হাত থেকে রক্ষায় খালে গাছের খুঁটি বসিয়ে সেতুটি দাঁড় করিয়ে রেখেছে। ছবি: সোহরাব হোসেন/ স্টার

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার গহিনখালী খালের ওপর নির্মিত রাঙ্গাবালী সেতুটি সংস্কারাভাবে জরাজীর্ণ হওয়ায় ১২ বছর আগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। তবে এত বছরেও নতুন সেতু নির্মাণ বা ওই সেতুটি সংস্কার হয়নি।

লোহার বিমের ওপর কংক্রিট ঢালাইয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হলেও কংক্রিটের ঢালাই উঠে গেছে। সেখানে কাঠ দিয়ে পাটাতন করে দেওয়া হয়েছে। পাশের অনেক স্থানের লোহার রেলিংও ভেঙে গেছে।

গাছের খুঁটি বসিয়ে সেতুটিকে কোনোরকমে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। আর এর উপর দিয়েই স্থানীয়রা ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন সেতুটি।

সেতুটি রাঙ্গাবালী উপজেলার দুটি  ইউনিয়ন-- রাঙ্গাবালী সদর ও ছোট বাইশদিয়ার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগসহ ওই এলাকার স্কুল ও কলেজে পড়া শিক্ষার্থীদের চলাচলের সহজ যোগাযোগ। সেতুটির দক্ষিণপাড়ে রাঙ্গাবালীর বাহেরচর ও উত্তর পাড়ে ছোটবাইশদিয়ার গহিনখালী।

ওই দুটি ইউনিয়নের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে এলজিইডি ১৯৯০ সালে লোহার পিলার ও বিমের ওপর ৬৫ মিটার দীর্ঘ ও ২ মিটার প্রস্থের কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করে। পরবর্তীতে ২০০২ সালে এলজিইডি সেতুটি সংস্কার করে। ২০১০ সালে সেতুর লোহার বিম, পিলার  ভেঙে গিয়ে নড়বড়ে হয়ে হেলে পড়লে এলজিইডি ২০১২ সালে এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাকিল আহমেদ বলেন, তাদের এই সেতুর অবস্থা অত্যন্ত নড়বড়ে ও ঝুঁকিপূর্ণ। যানবাহন চলাচলের সুযোগ নেই। শুধু পথচারী চলাচল করে। আমরা ব্যবসায়ীরা  কাঠ এবং গাছ দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে কোনমতে লোকজন পারাপারের উপযোগী  করে রেখেছি। আমরা চাই সরকারি উদ্যোগে এখানে একটি সেতু নির্মাণ হোক।

বাহেরচর বাজারের মুদি ব্যবসায়ী আব্বাস হাওলাদার জানান, সপ্তাহে দুই দিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার বাহেরচরে হাট বসে। খালের উত্তর পাড়ের গহিনখালীসহ আশেপাশের এলাকার মানুষ সহজ পথ হিসেবে এই সেতু পার হয়ে যাতায়াত করত। এখন সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ। অপর পাড়ের  মানুষজন এখন তাদের বাজারে কম আসছেন। এতে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীরাও। গহিনখালীর বাসিন্দা রাঙ্গাবালী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দশম শ্রেণির সামসুন্নাহার জানান, পারাপারের সময় সেতু হেলে-দুলে ওঠে, তখন খুব ভয় হয়। সেতু না পেরিয়ে স্কুলে আসতে হলে অন্তত দুই কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। সেতুটি ভেঙে পড়লে তাদের লেখাপড়ায় ক্ষতি হবে।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন জানান, ছোটবাইশদিয়ার গহিনখালী, চতলাখালী ও পূর্ব চতলাখালী এই তিন গ্রাম থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতে সেতু পেরিয়ে স্কুলে আসে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সেতুটি মেরামত কিংবা নতুন সেতু নির্মাণকাজ শুরু না হওয়ায় ওইসব এলাকার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন ।

ছোটবাইশদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) কামাল পাশা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ প্রায় দুই হাজার বাসিন্দা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।  জনস্বার্থে দ্রুত সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। 

রাঙ্গাবালী ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুন বলেন, ১২ বছর  আগে এলজিইডি সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও  নতুন করে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি। আমরা এলজিইডিকে বার বার অনুরোধ করছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

এলজিইডি, রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ওই স্থানে একটি নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় একটি নতুন সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো  হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন হলে দরপত্র আহবান করে সেতু নির্মাণের  উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

3h ago