আবারও ঘুরে দাঁড়াবেন, আবারও ঘর হবে—আশা খাদিজার

আবারও ঘুরে দাঁড়াবেন, আবারও ঘর হবে—আশা খাদিজার
আঙুলের ইশারায় পুড়ে যাওয়া ঘরের ধ্বংসাবশেষ দেখাচ্ছেন কড়াইল বস্তির বাসিন্দা ইয়াসমিন আক্তার | ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

'এইখানে আমার ঘর ছিল'—আঙুলের ইশারায় দেখাচ্ছিলেন ইয়াসমিন। গত ২৪ মার্চ আগুন লেগে তার ঘরটি পুড়ে যায়।

প্রায় এক যুগ আগে সংসার শুরু করেছিলেন ইয়াসমিন আক্তার ও রফিকুল ইসলাম।

ইয়াসমিন বাসা-বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন, আর রফিকুল ফ্লাস্কে চা নিয়ে পথে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন। এই আয়ের টাকা জমিয়ে কেনেন ফ্রিজ-টেলিভিশন ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসপত্র।

প্রায় ছয় বছর আগে ৬০ হাজার টাকায় কড়াইল বস্তিতে একটি ঘর কেনেন এই দম্পতি। অগ্নিকাণ্ডে তাদের সেই ঘর, আসবাবপত্র সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

শুক্রবার দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে ইয়াসমিন বলেন, 'মিস্ত্রি বলেছে নতুন করে ঘর করতে কমপক্ষে ৭০ হাজার টাকা লাগবে। এত টাকা জোগাড় করা আমাদের পক্ষে এখন সম্ভব না।'

আবারও ঘুরে দাঁড়াবেন, আবারও ঘর হবে—আশা খাদিজার
কড়াইল বস্তির গৃহহারা পরিবারগুলো ত্রিপল দিয়ে তাঁবু টানিয়ে বাস করছেন | ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

ইয়াসমিন-রফিকুল দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। দুর্ঘটনার দিন ইয়াসমিন তার চার বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে ঘরেই ছিল। আগুন ছড়িয়ে পড়লে সন্তানকে নিয়ে তিনি ঘরে থেকে বেরিয়ে যান।

'জিনিসপত্র পুড়লেও বেঁচে থাকলে হয়তো কোনো এক সময় আবারও করতে পারব। তাই আর কোনো কিছু না ভেবে ছেলেকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম,' বলেন তিনি।

ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠান থেকে খাদ্য সামগ্রী, পোশাক ও আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, 'ঘর পুড়ে যাওয়ার পর তাঁবু টানিয়ে থাকার জন্য ত্রিপল পেয়েছি। তাতে অস্থায়ীভাবে থাকা সম্ভব কিন্তু দীর্ঘ তো থাকতে পারব না। এখন বৃষ্টির মৌসুম শুরু হচ্ছে। চারপাশ থেকে পানি এসে কাদা হয়ে যাবে। তাই পাশেই একটি ঘর ভাড়া নিয়েছি।

'কেউ যদি টিন দিতো বা সহজ শর্তে ঋণ দিতো তাহলে ভালো হতো, আমরা মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে পারতাম। বস্তিতে চড়া সুদের ঋণ পাওয়া যায়। এক লাখ টাকা ঋণ নিলে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। ৬০ হাজার টাকা নিলে প্রতি মাসে দিতে হবে ছয় হাজার টাকা—এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্যও আমাদের নেই,' যোগ করেন তিনি।

আবারও ঘুরে দাঁড়াবেন, আবারও ঘর হবে—আশা খাদিজার
কড়াইল বস্তিতে চৌকির ওপর বসে আছেন খাদিজা বেগম | ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

ত্রিপলের নিচে চৌকির ওপর বসে ছিলেন খাদিজা বেগম। তার বয়স এখন প্রায় ৫৫ বছর। খাদিজার জীবনের অধিকাংশ সময় কেটে গেছে এই বস্তিতে। পাঁচ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন। এখন ছেলে, বউ আর নাতি নিয়ে তার সংসার।

খাদিজা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চারটা ঘর ছিল, আগুনে পুড়ে গেছে। কিচ্ছু বাঁচাতে পারিনি। একদম পথে বসে গেছি।'

তিনি বলেন, 'ঈদের আগে টাকা পেয়েছিলাম, সেই টাকায় একটা চৌকি, বালিশ, বিছানার চাদর কিনেছি। এভাবেই থাকছি।'

আগুনে তার চারটি ঘর পুড়ে গেছে। এর মধ্যে দুটি ঘর ভাড়া দেওয়া ছিল। ২০১০ সালে চার লাখ টাকা খরচ করে ঘর করেছিলেন খাদিজা। তিনি বাসা-বাড়িতে কাজ করতেন, স্বামী আব্দুল আজিজ ছিলেন দিনমজুর। মারা যাওয়ার আগে প্রায় দুই বছর আজিজ অসুস্থ ছিলেন। এখন ছেলে পিক-আপ ভ্যান চালায়, ছেলের বউ বাসা-বাড়িতে কাজ করে।

'এখানে ডোবা ছিল, মাটি ফেলে ভরাট করে ঘর তুলেছিলাম। মিস্ত্রি বলেছে, চারটা ঘর, বারান্দা, টয়লেট করতে তিন লাখ টাকা লাগবে,' বলেন তিনি।

সব পুড়ে গেলে হতাশ হননি খাদিজা। তিনি বলেন, 'প্রতি বছরই এই বস্তির কোনো না কোনো জায়গায় আগুন লাগে। আবার নতুন করে শুরু করতে হয়। এবার আমার ঘর পুড়ে গেছে। প্রায় ২০০ ঘর পুড়ে গেছে। আবারও ঘুরে দাঁড়াব, আবারও ঘর হবে। কোনো না কোনো পথ খুলবে।

'আগেও অনেকের ঘর পুড়ে গেছে। তাদের মধ্যে অনেকের একতলা ঘর ছিল, পরে দোতলা হয়ে গেছে। ঘর পুড়ে গেছে মানে সব শেষ হয়ে গেছে সেটা আমি বিশ্বাস করি না। আল্লাহ পাক চাইলে আবার হবে,' বলেন খাদিজা।

কড়াইল বস্তি উন্নয়ন কমিটির বউ বাজার ইউনিটের সভাপতি আবদুস সোবহান জানান, ৯০ একর ওপর এই বস্তিতে প্রায় ৩০ হাজার ঘর আছে। এখানে ভোটার আছেন প্রায় ২৮ হাজার।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর মহাখালী এলাকায় কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

13h ago