ভয়ের চাদরে আবৃত সারা দেশ: মেজর হাফিজ

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দল বিএনএমে যোগদান করার কথা ওঠে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে নিয়ে।

দলটিতে যোগদান না করা নিয়ে, নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়া এবং বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশসহ সাম্প্রতিক বেশ কিছু বিষয় নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে।

দ্য ডেইলি স্টার: দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের একটি বিএনপি। কিন্তু বিএনপি ভাঙছে, এমন আলোচনা যখন আসে, সেখানে আপনার নাম আলোচনায় আসে। আপনার নাম আসে কেন?

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ: বিএনপি যদি ভাঙত, তাহলে তো নির্বাচনের আগেই ভেঙে যেত। এখন তো ভাঙার কোনো কারণ নেই। আমার নাম এসেছে কারণ, আমি কিছু কিছু জায়গায় দলের মৃদু সমালোচনা করেছি। যেমন দলের কাউন্সিল হয় না, দলের মধ্যে গণতন্ত্র নেই—এসব কথা আমি প্রকাশ্যে বলেছি, পত্র-পত্রিকায় উঠেছে। এজন্য সবাই ধরে নিয়েছে নিশ্চয়ই আমি দল ছাড়ব। আমি ৩২ বছর এই দল করি, দল ছাড়ার প্রশ্নই আসে না।

আর নির্বাচনের আগে দল ছাড়লে এখন শাহজাহান ওমর, তৈমুর আলম বা শমসের মবিনের যে অবস্থা হয়েছে, তেমন হবে। সেটা হবে যে, দুঃসময়ে দল ছেড়ে যাওয়াটা মানুষ পছন্দ করবে না। আমার ওপরেও প্রচণ্ড চাপ ছিল। তবুও আমি আমার দলের প্রতি অনুগত, নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি অনুগত।

ডেইলি স্টার: 'চাপ' ছিল বললেন। সবাই বলে 'চাপ' ছিল। কিন্তু 'চাপ'র বিষয়টা কেউ পরিষ্কার করে না। 'চাপ' আসলে কী?

হাফিজ উদ্দিন: সেটা পরিষ্কার করলে জেলে যেতে হবে, গুম হতে হবে। এসব কারণেই কেউ পরিষ্কার করে না। আমিও করব না।

ডেইলি স্টার: তার মানে আপনিও ভয় পাচ্ছেন?

হাফিজ উদ্দিন: হ্যাঁ, ভয়ার্ত পরিবেশে ভয় না পেয়ে তো উপায় নেই। এই যে আমি জেলে গেলাম, আমাকে তো ডিভিশন দেয় নাই। কোর্ট থেকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেল অথরিটি দেয়নি।

ডেইলি স্টার: জেলে জীবনটা কেমন ছিল?

হাফিজ উদ্দিন: জেলের ভেতরে একটা হাসপাতালে রেখেছিল আমাকে। জেলের মধ্যে তো সব বিএনপির লোক থাকে। তারা আমার অনেক খাতির-যত্ন করেছে। আমার পায়ে ব্যথা ছিল, আরেকজনের কাঁধে ভর দিয়ে টয়লেটে যেতে হয়েছে। রাত ২-৩টার দিকেও লোকজনের কাঁধে ভর দিয়ে টয়লেটে গিয়েছি।

ডেইলি স্টার: এই ভয় পাওয়ার মধ্য দিয়েই কি চলতে হবে?

হাফিজ উদ্দিন: হ্যাঁ, এই ভয়ের আবহেই চলবে। আমাদের একজন প্রতিমন্ত্রীকে তো গুম করে ভারতে নিয়ে গেল। এটা তো একটা নতুন ডাইমেনশন। গুম করে দেশে রাখে বা লাশ নদীতে ভাসায়ে দেয়। কিন্তু একদম ভারতে নিয়ে গেল, এটা কীরকম কথা! এখন প্র্যাক্টিক্যালি দেশে তো শক্তিশালী বিরোধীদল নেই। যা আছে, বিএনপি মিটিং করতে পারে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মিথ্যা মামলা। সেসব মামলায় আবার দণ্ডও দেওয়া হচ্ছে। এত প্রতিকূলতায় তো রাজনীতি করা যায় না। সরকারের এসব প্রতিরোধ করার মতো কেউ নেই।

ডেইলি স্টার: তার মানে ভয়ের পরিবেশ স্থায়ী হয়ে গেল?

হাফিজ উদ্দিন: এটা এভাবেই চলবে। ধীরে ধীরে এটা আরও বাড়বে। সবাই মুখ বন্ধ করেছে। আপনি যেটা অনুভব করেন, সেটা কি আপনার পত্রিকায় লিখতে পারবেন? দেশের এই দুরাবস্থা। এটা কেউ পারবে না। ভয়ের চাদরে আবৃত সারা দেশ।

ডেইলি স্টার: আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ৫৩ বছরের বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশে এখন আপনার মতো একজন রাজনীতিবিদ ভয়ে কথা বলছেন না। এটা ঠিক কেমন বাংলাদেশ হলো তাহলে?

হাফিজ উদ্দিন: এটাই তো, বাংলাদেশকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে বর্তমান শাসক দল। আগেও ছিল কমবেশি অন্যান্য দলের আমলে। কিন্তু এই দলের আমলে একেবারেই মানুষ কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। এই যে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, এটা তো এরাই পাস করেছে। আমি যদি এখন বলি যে, শেখ হাসিনা রাষ্ট্র চালাতে ব্যর্থ, তাহলে আইনগতভাবেই আমাকে ধরে নিয়ে যেতে পারবে। অথচ সমালোচনা করা সাধারণ একটা ব্যাপার। বিরোধীদলের প্রথম কাজই হলো সরকারের সমালোচনা করা। আর এগুলোই এখন দণ্ডনীয় অপরাধ।

ডেইলি স্টার: আবার দল ভাঙার প্রসঙ্গে আসি। বিএনএমের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। আবার বিএনএমের নেতা ব্যারিস্টার সারোয়ার বললেন, আপনি যা বলছেন সেটা সত্য নয়। কেউ কেউ বলছেন আপনি যা বলছেন, গোপন করছেন তারচেয়েও বেশি।

হাফিজ উদ্দিন: এখন অনেকের তো পাবলিসিটি দরকার। যাদের কোনো দল নেই, কিছু নেই, কিছু একটা বললেই তো পত্রিকা, ইউটিউব সব জায়গায় প্রচার পাবে। এই পাবলিসিটির লোভেই এরা এসব কল্পকাহিনী ছড়াচ্ছে। প্রেস কনফারেন্সে আমি প্রকাশ্যে বলেছি, নির্বাচনের দুই মাস আগে আমি বলেছি যে দল ছাড়ব না। নতুন কোনো দলে আমি যাব না। দুই মাস তো দীর্ঘ সময়। তারপরেও ছয় মাস পরে এসে এসব কথা উঠছে কেন। এরা পাবলিসিটি চায়!

ডেইলি স্টার: বলা হয় বিএনএমের রেজিস্ট্রেশন আপনি করে দিয়েছেলে, নাম ঠিক করে দিয়েছেন আপনি।

হাফিজ উদ্দিন: না। এই অভিযোগ সত্য নয়। এসবের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। এগুলো কারা করে, সেটা তো আপনারা সবাই জানেন। সরকারের কোন সংস্থা এগুলো করে, সেটা সবাই জানে। বিএনএমটা গঠন করেছিল সামরিক বাহিনীর ৪-৫ জন অবসরপ্রাপ্ত অফিসার। অবসরপ্রাপ্তদের সঙ্গে আমার জানা-শোনা আছে, অনেকে আমার বাসায় আড্ডা দিতে আসে, তারা কয়েকদিন পরপর এসেই 'স্যার, জয়েন করেন' বলে। আমি বলি, আচ্ছা দেখি কিংবা না ভাই যাব না। এসব আরকী।

ডেইলি স্টার: সাকিব আল হাসানের বিষয়টিও কি একই রকম?

হাফিজ উদ্দিন: হ্যাঁ। সাকিব আল হাসানকে তারা বুঝিয়েছিল যে আমি এই দলের চেয়ারম্যান হব। সাকিবকে আশ্বস্ত করার জন্যই আমার কাছে নিয়ে আসে।

ডেইলি স্টার: সাকিবের সঙ্গে আপনার কী কথা হয়েছিল?

হাফিজ উদ্দিন: পরে আর কোনোদিন দেখা হয়নি। ওইদিন আমি তাকে বলেছি যে, তুমি তো একটা স্পোর্টসম্যান। যারা খেলাধুলা করে, তাদের রাজনীতিতে যোগ দেওয়া উচিত না। অবসর নেওয়ার পর যেতে পারে। অনেক দেশেই এটা হয়। পাকিস্তানে ইমরান খান করেছে। সে চুপ করে শুনে গেছে। আমি তাকে বলেছি, অবসর নেওয়ার পর রাজনীতিতে যেও। সেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য আগ্রহী ছিল। তাকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে, সে এখান (বিএনএম) থেকে নির্বাচনে অংশ নেবে না, আওয়ামী লীগ থেকেই করবে।

ডেইলি স্টার: সোশ্যাল মিডিয়ায় 'ভারত বয়কট বা ভারতীয় পণ্য বয়কট' প্রচারণা চলছে। বিএনপির একজন নেতাও এটা নিয়ে কথা বলেছেন। এই বিষয়ে আপনার অবস্থান কী?

হাফিজ উদ্দিন: এটা আপনারা যতটুকু জানেন, আমিও ততটুকুই জানি। দলের মধ্যে এটা নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে, সেটাও আপনারা জানেন। তাই এখন এটা নিয়ে মন্তব্য করার সময় নয়।

ডেইলি স্টার: ভারত আমাদের বড় প্রতিবেশী। সেরকম জায়গায় বর্জন-বয়কটের যে বিষয়টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে, এটা নিয়ে আপনার অবস্থান কী?

হাফিজ উদ্দিন: এই ব্যাপারে দলের যে অবস্থান, আমার অবস্থানও তাই। এখানে ব্যক্তি আমার কোনো বক্তব্য বা অবস্থান নেই।

ডেইলি স্টার: তার মানে এই বিষয়ে দলের বক্তব্যই আপনার বক্তব্য?

হাফিজ উদ্দিন: হ্যাঁ, এই বিষয়ে দলের বক্তব্যই আমার বক্তব্য।

ডেইলি স্টার: এত বছর ধরে বিএনপি করছেন। বিএনপি গত নির্বাচনে অংশ নিল না। এটা করে ঠিক করল নাকি ভুল—এই কেন্দ্রিক একটা আলোচনা আছে। বিএনপির সামনের সময়টাকে কীভাবে দেখছেন? বিএনপি কীভাবে টিকে থাকবে?

হাফিজ উদ্দিন: আমি তো সংবাদ সম্মেলনে বলেছি, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির যাওয়া উচিত ছিল। জাতিসংঘ বা প্র্যাক্টিক্যালি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় নির্বাচনে গেলে বিএনপি এখন ক্ষমতায় থাকত। তারা নির্বাচনটা ফেয়ার করে দিত। এই উদ্যোগই তো নেওয়া হয় নাই। উদ্যোগটা নেওয়া উচিত ছিল। সেটা আমি প্রকাশ্যেই বলেছি। আমাদের দেশে এটাও তো দোষ। দল ভুল করতে পারে, সেটা বলা যাবে না প্রকাশ্যে। এটা সব দলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

ডেইলি স্টার: নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ ছিল বিএনপির?

হাফিজ উদ্দিন: নিশ্চয়ই সুযোগ ছিল। এতবার বিদেশিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, এটা আলাপ করতে পারে নাই?

ডেইলি স্টার: তার মানে বিদেশিদের সঙ্গে যে বৈঠক হয়েছিল, সেখানে এই বিষয়ে আলাপের সুযোগ ছিল বলে আপনি মনে করছেন?

হাফিজ উদ্দিন: নিশ্চয়ই, এতকিছু নিয়ে আলাপ হয়। বিএনপির লক্ষ্য হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, শেখ হাসিনার সরকার চলে যেতে হবে। একই কথাই তো বারবার বলছে তারা। এটা তো কঠিন। আর বিদেশিরাই বা এই পর্যায় পর্যন্ত যাবে কেন, যায় না তো। সুতরাং অল্টারনেটিভ হিসেবে এই চেষ্টাটা তাদের করা উচিত ছিল। বিএনপির যেহেতু জনসমর্থন আছে, নির্বাচনে গেলেই তো বিএনপির বিজয় অবশ্যম্ভাবী। সেদিকে চেষ্টা করাটা দরকার ছিল।

ডেইলি স্টার: বিএনপির জনসমর্থন আছে—এই যে এই কথাটা বিএনপির নেতারা বলেন, এটা কীসের ওপর ভিত্তি করে বলেন?

হাফিজ উদ্দিন: ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে পাঁচটা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়েছিল। পাঁচটাতেই বিএনপি জিতেছিল। তারপরে যে ট্রেন্ড শুরু হয়, সব নির্বাচনে বিএনপিই জেতে। এরপর উপজেলা নির্বাচনে ৯০ শতাংশ জায়গায় বিএনপি জেতা শুরু করল, তারপর তারা (আওয়ামী লীগ) কারচুপি শুরু করে দিল। আর সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। বর্তমান শাসক দল বুঝে গেছে যে নির্বাচন দিলেই বিএনপি জিতবে। তারপর বিভাগীয় সমাবেশের সময় রাস্তা-ঘাটে মানুষের কথা-বার্তা, ফেসবুক ও মিডিয়া—যেখানেই দেখেন সব জায়গাতেই দেখা যায় বিএনপির পক্ষের লোকজন বেশি। সেজন্যই মনে হয় বিএনপির জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। এটা তো বোঝাই যায়। আপনি রাস্তা-ঘাটে দেখলেই বুঝবেন।

ডেইলি স্টার: এর কারণ কি এই যে আওয়ামী লীগ জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না বলে বিএনপি জনপ্রিয়?

হাফিজ উদ্দিন: এটা প্রধান কারণ। তাদের দুঃশাসনের কারণেই বিএনপির জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

ডেইলি স্টার: কিন্তু বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছে না—এমন সমালোচনাও তো আছে?

হাফিজ উদ্দিন: বিএনপি চেষ্টা করছে। এরচেয়ে বেশি বিএনপির পক্ষে করা সম্ভব না। আমাদের ২২ জন লোক আন্দোলনে জীবন দিয়েছে। এরচেয়ে বেশি আর কী করবে? জেলখানায় ১৬ জনকে কেউ বলে হত্যা করা হয়েছে, কেউ বলে এমনি মারা গেছে। এগুলো তো স্যাক্রিফাইস। সব মিথ্যা মামলায় জেলে গেছে। আমিও যে ছয়দিন জেল খাটলাম, সেটা তো মিথ্যা মামলায়। আমি নাকি গাড়ি পুড়িয়েছি। 

ডেইলি স্টার: আপনাকে কি জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল যে আপনি গাড়ি পুড়িয়েছেন কি না?

হাফিজ উদ্দিন: না, আমাকে রিমান্ডে নেয়নি। আমি যেই সময় চিকিৎসার জন্য ভারতে ছিলাম, তখন এই মামলার রায় দেওয়া হয়েছে। এই মামলার বাদী পুলিশ, সাক্ষী পুলিশ, সবই পুলিশ। কারো নাম তারা জানে না। আমার আইনজীবী বলছেন, শেষদিন তারা একজন পুলিশকে শিখিয়ে নিয়ে এসেছে কয়েকজনের নাম, আমার ও আলতাফ চৌধুরীসহ আরও কয়েকজনের নাম। তারা দেখলে চিনতেও পারবে না কাউকে। তাদের দিয়ে বলিয়েছে।

রায় দেওয়ার পর আমার আইনজীবী জানালেন যে, আমাকে ২১ মাসের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আমি নাকি জনতা ব্যাংকের গাড়ি পুড়িয়েছি। ৩৪ বছর আগে আমি এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলাম। অনেক লুটেরাকে ঠেকিয়েছিলাম। একদিন প্রেসিডেন্ট এরশাদ আমাকে ফোন করে বললেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজান চৌধুরীকে ঋণ দেওয়ার জন্য। বললেন, মিজান চৌধুরী রাজনীতি করেছেন এতদিন, কিন্তু তার কিছু নাই। তোমার কাছে যাবে, লোন দিও। আমি তাকে বলেছি, ঠিক আছে স্যার। কিন্তু এমডিকে বলেছিলাম তাকে ঋণ না দিতে। এসব বিষয় মিটিংয়েই উঠাবেন না।

ডেইলি স্টার: এরশাদ তো তখন ক্ষমতায় ছিলেন। সেই সময় তার কথা না শুনলে পরবর্তীতে বিপদ হতো না?

হাফিজ উদ্দিন: এরকম পরিস্থিতি ছিল না তখন। আমাকে পরে আর কখনো কিছু বলেনি।

এক সাংবাদিক ছাপাখানার জন্য মেশিন কিনবে বলে সাদা কাগজের ওপর সবুজ কালি দিয়ে এরশাদকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়ে এসেছেন যে, তাকে এক কোটি টাকা প্রদান করা হোক। এটা দেখে এমডি কাঁপতেছে যে, প্রেসিডেন্টের লেখা। পরে আমার কাছে নিয়ে আসছে। আমি বললাম, আরে বাদ দেন এসব। ব্যাংকের নিয়ম অনুসরণ করেন। অন্যথায় আপনারাও জেলে যাবেন, আমিও যাবে। এটা করবেন না। এভাবে আমি ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষা করেছি। আর সেই ব্যাংকের গাড়ি পোড়ানোর মামলা আমার বিরুদ্ধে।

ডেইলি স্টার: এই যে প্রেসিডেন্ট বলার পরেও ঋণ দিলেন না। পরে প্রেসিডেন্ট কিছু মনে করলেন না যে, তার কথা শুনলেন না?

হাফিজ উদ্দিন: এরপর তো আর তিনি এগুলোর খোঁজ নেননি। আর ওই লোকও কয়বার প্রেসিডেন্টকে ধরবে। আসলে নিজে চুরি না করলে এসব করা যায়। নিজের দুর্বলতা থাকলে করা যায় না।

ডেইলি স্টার: তার মানে ওই সময় পর্যন্ত এরকম ব্যাপার ছিল যে নিজে সৎ থাকলে কাজ করার সুযোগ ছিল?

হাফিজ উদ্দিন: হ্যাঁ। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ওষুধ নীতি করেছিলেন। আমি ভারতে গিয়ে তিন মাস ছিলাম। তাদের ওষুধের চেয়ে অনেক বেটার আমাদের ওষুধ। বাঙালি সস্তায় ওষুধ খাচ্ছে, এর পেছনে অবদান তো ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর। অথচ চিকিৎসকদের সংগঠন মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সদস্যপদ বাতিল করে দিয়েছিল।

ডেইলি স্টার: বিএনপির ভবিষ্যৎ কী?

হাফিজ উদ্দিন: বিএনপির ভবিষ্যৎ খুব ভালো। এই যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা, এটা হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে না। হয়ত সময় লাগবে। তবে বিএনপি জনগণের রায় পাবে একদিন। 

ডেইলি স্টার: মাঝখানে আপনাকে কিছুটা চুপচাপ মনে হয়েছিল। আবার গত কয়েকদিন আপনাকে বেশ সক্রিয় দেখা যাচ্ছে…

হাফিজ উদ্দিন: দায়িত্ব দিয়েছে, তাই কাজ করছি কথা বলছি।। বলেছে আপনি স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক। এটা তো বিরাট দায়িত্ব না। তবে দায়িত্ব দেওয়ার ফলে এখন মিটিংয়ে যাচ্ছি, কথা বলছি। আবার কাল-পরশু থেকে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে। আমারও এখন সেই স্ট্যামিনা নেই এগুলো করার। অনেকদিন চুপচাপ ছিলাম, তাই এখন কথা বলছি।

Comments