নির্বাচনের আগে ২ বিএনএম নেতা সাকিবকে আমার কাছে নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ

নির্বাচনের আগে ২ বিএনএম নেতা সাকিবকে আমার কাছে নিয়ে আসেন: মেজর (অব.) হাফিজ
বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দল বিএনএমে যোগাযোগ জন্য বারবার অনুরোধ পেয়েছে জানিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে তাঁর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তিনি সাকিবকে উৎসাহ দেননি।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীতে নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

'কিংস পার্টি' খ্যাত বিএনএমে যোগদান ও সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ছবি নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তিনি।

মেজর হাফিজ বলেন, 'বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে আপনারা অবহিত আছেন, অত্যন্ত নোংরা রাজনীতি। দেশে গণতন্ত্র নেই। নির্বাচনের সময় নানা ধরনের কলা-কৌশল করা হয়। যে দলই ক্ষমতাসীন থাকে, তারা চেষ্টা করে প্রতিপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য কিছু লোক ভাগিয়ে এনে নিজেদের বা অন্য কোনো দলে সন্নিবেশ করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়। বিগত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের আগেও, বেশ আগে থেকেও নানা ধরনের তৎপরতা শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। আড়মোড়া ভেঙে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে থাকে।'

তিনি বলেন, 'এখন রাজনীতি এমনই হয়েছে, জনগণের সঙ্গে মিশে, গ্রামে গিয়ে, নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে কষ্ট করে এমপি হতে, পরিশ্রম করতে এখন আর অনেকেই রাজি না। নির্বাচনের আগে কিংস পার্টিগুলো গড়ে ওঠে। তাদের প্রতিনিধি হয়ে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তাদের অর্থানুকূল্যে সংসদ সদস্য হয়ে আরাম-আয়েশে দিন কাটানোর জন্য অনেকের কাছেই অনেক লোভনীয় বিষয়।

'আমার কাছে যারা আসে সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত তিন-চারজন অফিসার। তারা জানে যে, আমার নির্বাচনী এলাকায় আমার অবস্থান আছে। তারা পরামর্শ দেয় একটি নতুন রাজনৈতিক দল করার জন্য। আমি তাদের বলার চেষ্টা করেছি, রাজনীতিতে কোনো শর্টকাট নেই। সাধারণ মানুষের সংযোগ ছাড়া রাজনীতিতে টিকে থাকা যায় না,' বলেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, 'নির্বাচনের মাস ছয়েক আগে থেকেই যারা সরকারি দল করে, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা দেখেছে, বিএনপির পলিসি ম্যাটারে আমার মাঝে মাঝে দ্বিমত থাকে, যা পত্রপত্রিকায় মাঝে মাঝে প্রকাশিত হয়। তারা ধরে নিয়েছে যে বিএনপি ত্যাগ করার জন্য আমি উন্মুখ হয়ে আছি। সরকারের পক্ষ থেকে যারা যোগাযোগ করেছিল, তাদের বলেছি, ৩২ বছর পরে আমার পক্ষে দল ত্যাগ করা সম্ভব না। আর আমি অসুস্থ, শিগগির দল থেকে অবসর গ্রহণ করব।

'ইতোমধ্যে সামরিক বাহিনীর তিন-চারজন অবসরপ্রাপ্ত সদস্যের উদ্যোগে বিএনএম নামে একটি দল গঠিত হয়। যেটিকে নির্বাচন কমিশনও অনুমোদন দেয়। আমার পরিচিত এই ব্যক্তিরা, আওয়ামী লীগের নেত্রী, শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি, যারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তারা বিএনএমে যোগ দেওয়ার জন্য আমাকে অনেকবার অনুরোধ করেছে,' বলেন তিনি।

হাফিজ বলেন, 'প্রচারণা শুরু হয়, আমি হয়তো দল ত্যাগ করব। এ ধরনের একটা সময় এই অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারাই সাকিব আল হাসানকে আমার কাছে নিয়ে আসে। তিনি দেশসেরা ক্রিকেটার, পৃথিবীর সেরা অলরাউন্ডার। সাকিব আমার কাছে এসে রাজনীতিতে যোগদানের ইচ্ছা ব্যক্ত করে। তাকে বিএনএমের দুজন কর্মকর্তা আমার কাছে নিয়ে আসে। আমি বলেছি, রাজনীতি করা তোমার বিষয়, তুমি এখনো খেলাধুলা করছো। রাজনীতি করবে কি না চিন্তা-ভাবনা করে দেখো। আমার কাছ থেকে উৎসাহ না পেয়ে সে চলে যায়। এই ঘটনা নির্বাচনের চার-পাঁচ মাস আগে হবে।'

তিনি বলেন, 'যখন ক্ষমতাসীনদের চাপ বাড়তে লাগল, এমনকি তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ঘোষণাই দিয়ে দিলেন যে হাফিজ সাহেব শিগগির একটি নতুন দল গঠন করবেন, করে নির্বাচনে যাবেন।'

হাফিজ বলেন, 'আমি বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছি। নির্বাচনের দুই মাস আগে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছি, আমি ৩২ বছর বিএনপিতে আছি, এই দলেই থাকব। বিএনএম বা অন্য কোনো যোগদান করার সম্ভাবনা নেই। শেষ পর্যন্ত এই দলেই থাকব এবং বর্তমানে আমি অবসর গ্রহণের কথাই চিন্তা করছি। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। সেটি সারা দেশে প্রচারিত হয়েছে। তারও এক মাস পর অসুস্থতার কারণে আমি বিদেশে যাওয়ার উদ্যোগ নেই। ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আমি আদালতে রিট করি, পরবর্তীতে আমাকে যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। ভারতে যাই, তিন মাস সেখানে অবস্থান করি। আমার হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করে নি রিপ্লেস করা হয়।

'আমি হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় জানতে পারলাম যে, ১২ বছর আগের একটি মামলায় আমাকে এবং আলতাফ চৌধুরী সাহেবকে ও আরও কয়েকজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে,' বলেন তিনি।

হাফিজ আরও বলেন, 'এটি আমি কখনো কল্পনাও করি নাই। একাত্তর সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে যখন সেনাবাহিনীর বাঙালি সদস্যরা বিদ্রোহ করে, যশোর ক্যান্টনমেন্টে আমি একাই বিদ্রোহ করেছি। সেখানে আর কেউ ছিল না। আট ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধের সময় সেকেন্ড লে. আনোয়ার হোসেন, আমার একজন তরুণ সঙ্গী সেই যুদ্ধে শহীদ হন। আট ঘণ্টা যুদ্ধের পর বেরিয়ে এসে আমি কুষ্টিয়া অঞ্চলে মুক্তি বাহিনীকে সংগঠিত করি। এভাবে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নয় মাস অংশগ্রহণ করি।

'মুক্তিযুদ্ধে অবদানের পর মার্চ মাসে আমার মতো একজন ৮০ বছর বয়স্ক মুক্তিযোদ্ধাকে কারাগারে পাঠানো হবে মিথ্যা মামলায় এটি আমাকে অত্যন্ত ব্যথিত করেছে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

1h ago