অল্পের জন্য রক্ষা, তদন্ত হয়নি ইউএস বাংলার বিরুদ্ধে

প্রতীকী ছবি

এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ চট্টগ্রামের রানওয়েতে উঠে পড়ে, যেখানে আরও একটি উড়োজাহাজ এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে সেখানে অবতরণ করতে যাচ্ছিল।

মুখোমুখি সংঘর্ষ থেকে দুটি উড়োজাহাজ অল্পের জন্য রক্ষা পেলেও এই ঘটনার কোনো তদন্ত হয়নি।

বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) ও পাইলটদের মধ্যে কথোপকথনের অডিও রেকর্ডিং অনুসারে, গত ১৮ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার একটু আগে ঢাকা থেকে আসা আরিরাং এভিয়েশন লিমিটেডের একটি চার্টার্ড ফ্লাইটকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। রেকর্ডিংয়ের একটি কপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

এর ছয় সেকেন্ড পর ঢাকাগামী ইউএস বাংলার একটি উড়োজাহাজ একই রানওয়েতে ওঠার অনুমতি চায়।

এটিসি ইউএস বাংলার উড়োজাহাজটিকে রানওয়েতে ওঠার কথা বললেও হোল্ডিং পয়েন্টে থামতে বলে। রানওয়ের ঠিক আগে একটি লাইন টেনে হোল্ডিং পয়েন্ট চিহ্নিত করা থাকে। সুস্পষ্ট অনুমতি ছাড়া উড়োজাহাজগুলো সাধারণত রানওয়েতে উঠতে পারে না।

ইউএস বাংলার উড়োজাহাজটিকে হোল্ডিং পয়েন্টে এসে অপেক্ষা করার অনুমতি দেওয়ার ১৭ সেকেন্ড পর এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারকে 'বাংলা স্টার হোল্ড পজিশন' বলে চিৎকার করতে শোনা যায়।

বাংলা স্টার ইউএস বাংলার কলসাইন বা রেডিও যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত সংক্ষিপ্ত নাম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঠিক যে সময় আরিরাং এর চার্টার্ড ফ্লাইটটি অবতরণ করতে যাচ্ছিল, ঠিক সে সময় তারা দেখতে পান ইউএস বাংলার উড়োজাহাজটি হোল্ডিং পয়েন্ট অতিক্রম করে রানওয়েতে উঠতে শুরু করেছে।

এয়ার-ট্রাফিক কন্ট্রোলারকে আরও ১৯ সেকেন্ড ধরে বেশ কয়েকবার 'হোল্ড পজিশন' বলে চিৎকার করতে শোনা যায়। অবশেষে নিরুপায় হয়ে এটিসি আরিরাংয়ের ফ্লাইটের অবতরণ অনুমতি বাতিল করে এবং ঘুরে এসে কিছুক্ষণ পর আবার অবতরণের চেষ্টা করতে বলে।

আর এসবই ঘটে মাত্র ৪৮ সেকেন্ডের মধ্যে।

রেকর্ডিং অনুসারে, ইউএস বাংলা উড়োজাহাজের পাইলট তাকে রানওয়েতে ওঠার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল বলে বোঝাতে চান।

এসময় এয়ার ট্রাফিক অফিসার, কন্ট্রোলারের কাছ থেকে রেডিওটি নেন এবং বলেন, যখন থামার স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তখন তিনি কন্ট্রোলারের পাশেই ছিলেন।

তখন ইউএস বাংলা উড়োজাহাজের পাইলট বলেন, 'ঠিক আছে স্যার। আমি ক্ষমা চাইছি। এটি আমাদের ভুল ছিল। আমরা এখন হোল্ডিং পজিশনে আছি।'

এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের কণ্ঠ শুনেই বোঝা যাচ্ছিল তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি চিৎকার করে বলেন, 'এটা খুবই বিপজ্জনক ছিল। (অপর) উড়োজাহাজটি প্রায় অবতরণের মুহূর্তে (এই ঘটনা) ঘটেছে। এটা লাইট ট্রাফিক ছিল, তাই তারা ঘুরে আসতে পেরেছে।'

রেকর্ডিং শুনে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলেন, 'লাইট ট্রাফিক' বলতে বোঝানো হয়েছে, আরিরাংয়ের চার্টার্ড উড়োজাহাজটি আকারে ছোট ছিল।

অপরদিকে, ইউএস বাংলার বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটি ১৮৯ জন যাত্রী বহন করতে সক্ষম।

১৮ জানুয়ারি যা ঘটেছিল তাকে রানওয়েতে অনুপ্রবেশ এবং পাইলট বিচ্যুতি বলা হয়। এটিসি ইউএস বাংলার উড়োজাহাজটি দেখতে পাওয়ায় বড় বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

অডিও রেকর্ডে এটিসি জানিয়েছে যে এই ঘটনাটি অত্যন্ত বিপজ্জনক ছিল, ইউএসবাংলার পাইলটও স্বীকার করেছেন যে তিনি ভুল করেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখনও কোনো নিরাপত্তা প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি।

দ্য ডেইলি স্টার আরিরাং ফ্লাইটের ককপিট ক্রুদের সঙ্গেও কথা বলেছে। তারা নিশ্চিত করেছেন যে তাদের ঘুরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের ফ্লাইট প্যাটার্ন ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটগুলোতেও আছে, যা যে কেউ দেখতে পারেন।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটির প্রধান ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ নিশ্চিত করেছেন যে এ বিষয়ে কোনো তদন্ত চলছে না।

'যদি কোনো নিরাপত্তা প্রতিবেদন থাকত তাহলে আমরা তদন্ত করতাম,' তিনি বলেন।

এ বিষয়ে ইউএস বাংলার চেয়ারপারসন কামরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'এ ঘটনা আমার জানা নেই।'

বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের 'ম্যানুয়াল অন দ্য রানওয়ে ইনকারশন অ্যান্ড কলিশন অ্যাভয়েডেন্স'-এ বলা হয়েছে, 'রানওয়েতে সব ধরনের অনুপ্রবেশের কারণ চিহ্নিত করার জন্য বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ ও তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।'

বেবিচকের ম্যানুয়ালে বলা হয়েছে, রানওয়েতে অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো তদন্ত করা দরকার তার মধ্যে একটি হলো 'যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ফলে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের নির্দেশনা অনুসরণে ব্যর্থতা'।

এর আগে গত জুলাইয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি উড়োজাহাজ অবতরণের সময় বিমানের একটি উড়োজাহাজ রানওয়েতে উঠে গেলে দুর্ঘটনার উপক্রম হয়।

বিমানের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন এবং দুই পাইলটকে গ্রাউন্ডেড করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka cannot engage with non-state actors: foreign adviser

Md Touhid Hossain also emphasised that peace and stability in the region would remain elusive without a resolution to the Rohingya crisis

31m ago