সব গণপরিবহনে এক কার্ড: প্রাইভেট কোম্পানিকেও আইনে আনার উদ্যোগ
মেট্রোরেল, বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ সব গণপরিবহন পরিষেবায় সমন্বিত টিকিটিং ব্যবস্থা চালু করতে আইন করতে যাচ্ছে সরকার।
'সব গণপরিবহনে এক কার্ড' পদ্ধতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেটর অথরিটি (ডিটিসিএ) ইতোমধ্যে আইনের একটি প্রাথমিক খসড়া তৈরি করেছে।
র্যাপিড পাস কার্ড নামের এই পদ্ধতি ঝামেলামুক্ত হবে এবং মানুষের সময় ও অর্থ সাশ্রয় করবে বলে জানিয়েছেন এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত দুই কর্মকর্তা। সারা দেশেই এটি চালু করা হবে।
তারা জানান, আইন প্রণয়নে গত মাসে একটি কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। আইনের খসড়া যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আগামী ১৩ মার্চ বৈঠক করবে কমিটি।
কমিটির আহ্বায়ক ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক শাবিহা পারভিন সভায় সভাপতিত্ব করবেন বলে জানান তারা।
বর্তমানে ঢাকাবাসী মেট্রোরেলের সেবা পেতে দুই ধরনের কার্ড—এমআরটি (ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট) পাস ও র্যাপিড পাস ব্যবহার করছেন।
২০১৮ সালে ডিটিসিএর তত্ত্বাবধানে যাত্রা শুরু করা র্যাপিড পাস সব ধরনের পরিবহন সেবা পেতে ব্যবহারের কথা থাকলেও বর্তমানে এটি শুধুমাত্র মেট্রোরেল ও কিছু নির্দিষ্ট বাসের ভাড়া পরিশোধের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
অন্যদিকে, মেট্রোরেল পরিচালনাকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) শুধুমাত্র মেট্রোরেলের জন্য এমআরটি পাস চালু করেছে।
কমিটির এক সদস্য জানান, এই পরিস্থিতিতে সরকার একটি সমন্বিত টিকিটিং ব্যবস্থা চালু করার জন্য আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে স্মার্ট র্যাপিড পাস ব্যবহার করে সব পরিবহন পরিষেবা পেতে পারে মানুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই সদস্য বলেন, অভিন্ন টিকিটিং সিস্টেম আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলে এমআরটি পাস বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং র্যাপিড পাসটি সব পরিবহন পরিষেবার জন্য অভিন্ন কার্ড হয়ে উঠবে।
সমন্বিত টিকিটিং বা ইউনিফর্ম সিস্টেম অনেক উন্নত দেশেই ব্যবহার হয়। উদাহরণস্বরূপ, অয়েস্টার কার্ড লন্ডনে ও অক্টোপাস কার্ড হংকংয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে পেমেন্টের জন্য ব্যবহৃত হয়।
খসড়ায় কী আছে
গত বৃহস্পতিবার ডিটিসিএ তাদের ওয়েবসাইটে 'গণপরিবহনে সমন্বিত টিকিটিং ব্যবস্থা কোম্পানি ও ক্লিয়ারিং হাউস ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৪' শীর্ষক আইনের খসড়া আপলোড করেছে।
খসড়া অনুযায়ী, সরকার র্যাপিড পাস কার্ড সিস্টেম পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রচারের জন্য একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে সংস্থা গঠন করবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, কোম্পানিটির সরকারি ও বেসরকারি উভয় অংশীদার থাকতে পারে। ডিটিসিএ হবে কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রক।
ডিএমটিসিএল, বিআরটিসি, বাংলাদেশ রেলওয়ে বা প্রাইভেট বাস বা লঞ্চ কোম্পানির মতো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অপারেটর (পিটিও) র্যাপিড পাস সিস্টেম চালু করতে অপারেটিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করবে।
পিটিও তাদের পরিষেবার জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় ভাড়া সংগ্রহের ব্যবস্থা করবে এবং র্যাপিড পাস কার্ডের মাধ্যমে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, ডিটিসিএ সব ধরনের টিকিট বিক্রি ও তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত ডেটা পরিচালনার জন্য একটি ক্লিয়ারিং হাউস স্থাপন ও পরিচালনা করবে এবং ক্লিয়ারিং হাউস থেকে পরিষেবা পাওয়ার জন্য পিটিওকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে হবে।
পিটিও র্যাপিড পাস কার্ড ব্যবহারকারীদের তাদের সেবা প্রচার ও সম্প্রসারণের জন্য ডিসকাউন্ট বা ছাড় দিতে পারবে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকার যেকোনো নির্দিষ্ট বা সব গণপরিবহন পরিষেবার জন্য কার্ডটি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে পারবে।
ডেইলি স্টার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী ও ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক শাবিহা পারভিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।
তবে বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, কমিটি খসড়া তৈরি করার পরে তারা খসড়া চূড়ান্ত করার আগে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে একটি বৈঠক করবেন এবং জনগণের মতামত নেবেন।
Comments