২০২৩ সালে ইউরোপে ৪০ হাজার ৩৩২ বাংলাদেশির আশ্রয় আবেদন

প্রতীকী ছবি | স্টার ফাইল ফটো

অভিবাসীদের অবৈধ প্রবেশ ঠেকাতে দিন দিন কঠোর হচ্ছে ইউরোপ, অনেকেই যাত্রা পথে হারাচ্ছেন প্রাণ। তবুও থামছে না অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রা। 

ভাগ্য ফেরানোর আশায় বাংলাদেশি ছাড়াও পাকিস্তানি, আফগানিস্তানি ও সিরিয়ান নাগরিকদের ইউরোপে পছন্দের গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, সাইপ্রাস ও রোমানিয়া। 

স্বপ্নবাজরা বিভিন্ন পথ পাড়ি দিয়ে প্রতি বছরই ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন করেন। তবে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২৩ সালে ইউরোপে এবার আবেদনে নতুন রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশিরা। 

গত বছর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে আবেদন করেন ১১ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ, যার মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা ৪০ হাজারেরও বেশি। বেশিরভাগই যেতে চেয়েছেন ইতালি ও ফ্রান্সে। শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এজেন্সি ফর এসাইলাম (ইইউএএ) প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে নতুন এই তথ্য উঠে এসেছে।

উন্নত জীবনের আশায় প্রতিনিয়তই অবৈধ পথে ইউরোপ-আমেরিকায় পাড়ি জমাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। অনেকেই পথিমধ্যে হারাচ্ছেন প্রাণ। গত বছর ৪০ হাজার ৩৩২ জন বাংলাদেশি ইউরোপে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন।
 
ইইউএএ'র পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩ সালে ইউরোপে আশ্রয় চেয়ে করা আবেদনের সংখ্যা এর আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বেড়েছে। যা ২০১৫-১৬ সালে বিশ্বজুড়ে তৈরি হওয়া শরণার্থী সংকটের পর সর্বোচ্চ। সে বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৩ লাখ মানুষ ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন করেছিল।

ইইউএএ বলেছে, গত বছর বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদনের প্রধান গন্তব্য ছিল ইতালি। ইইউ প্লাসে আশ্রয় চেয়ে করা বাংলাদেশিদের আবেদনের ৫৮ শতাংশই ইতালিতে করেছেন। অর্থাৎ ২০২৩ সালে ২৩ হাজার ৪৪৮ জন বাংলাদেশি ইতালিতে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। এরপরই বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বেশি আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে ফ্রান্স ও রোমানিয়ায়। ইইউতে বাংলাদেশিদের মোট আশ্রয় আবেদনের ২৫ শতাংশই ফ্রান্সে জমা দিয়েছেন। গত বছর ১০ হাজার ২১৫ জন বাংলাদেশি ফ্রান্সে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন। একই সময়ে রোমানিয়ায় আশ্রয় চেয়েছেন ২ হাজার ৮২২ জন বাংলাদেশি। এরপর অস্ট্রিয়ায় ১ হাজার ৪০৯ জন, গ্রিসে ৬৪০ জন, আয়ারল্যান্ডে ৪৪৫ জন, স্পেনে ৩৮০ জন, সাইপ্রাসে ৩১৪ জন, জার্মানিতে ১৬৪ জন, মাল্টায় ১১৮ জন ও অন্যান্য দেশে ৩৭৭ জন বাংলাদেশি আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন।

ইইউএএ'র তথ্য বলছে, গত বছর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে আশ্রয় প্রার্থীদের পছন্দের শীর্ষে ছিল জার্মানি। আর আশ্রয়ের আবেদনে সবার শীর্ষে আছে সিরিয়ান নাগরিকরা। এরপরই এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আরেক দেশ আফগানিস্তান।

মূলত উন্নত জীবন, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আর নিরাপত্তার আশায় প্রতি বছরই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইউরোপে যান অসংখ্য মানুষ। অবৈধ পথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেন অনেকে। কেউ আবার নানা কারণ দেখিয়ে আশ্রয়ের আবেদন করেন। সিংগভাগই করেন দেশের বিরুদ্ধে নালিশ।

এদিকে, বাংলাদেশি অভিবাসীদের দারুণ সুযোগ দিয়েছে গ্রিস। ২০২৩ সালে প্রাচীন সভ্যতার এই দেশে রেসিডেন্স কার্ড পেয়েছেন ৩ হাজার ৪০৫ জন বাংলাদেশি অভিবাসী। আরও বিবেচনাধীন আছে ৫ হাজার ৯১০ জনের আবেদন। এদের অনেকেই বৈধতার জন্য আবেদন করে সব প্রক্রিয়া শেষে বর্তমানে রেসিডেন্স পারমিট বা স্মার্ট কার্ডের অপেক্ষায় আছেন। বিভিন্ন ত্রুটির কারণে বাতিল হয়েছে ১ হাজার ১৯টি আবেদন। সম্প্রতি দেশটির আশ্রয় ও অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

গ্রিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফর করেন গ্রিক অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি। এসময় তার মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, ইউরোপের দেশ গ্রিসে প্রতি বছর ৪ হাজার বাংলাদেশি কর্মীকে মৌসুমি কাজের ভিসা দেওয়া হবে এবং গ্রিসে বসবাসরত ১৫ হাজার অনিয়মিত বাংলাদেশিকে ৫ বছরের জন্য অস্থায়ী বৈধতার আওতায় আনা হবে। দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই বৈধতা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে গ্রিক সরকার।

২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে চালু করা হয় আবেদন করার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। ধাপে ধাপে রেসিডেন্স পারমিট দেওয়া শুরু করে দেশটি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিয়মিতকরণের জন্য গ্রিক সরকারের কাছে আবেদন করেছেন মোট ১০ হাজার ৩৩৭ জন অনিয়মিত বাংলাদেশি। 

আবেদনকারীদের মধ্যে সব যাচাই-বাচাই সম্পন্ন ও সব ধাপ পেড়িয়ে রেসিডেন্স কার্ড হাতে পেয়েছেন ৩ হাজার ৪০৫ জন বাংলাদেশি। বাকি সবাইও পর্যায়ক্রমে বৈধতার আওতায় চলে আসবেন বলে জানা গেছে।

এ ছাড়াও, বিভিন্ন ক্রুটির কারণে বাতিল হয়েছে ১ হাজার ১৯ জনের আবেদন। তবে বাতিলকৃত আবেদনগুলোর মধ্যে শর্তপূরণ করে আবারও আপিলের সুযোগ রয়েছে। গত বছর প্রাক-নিবন্ধনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৈধতার জন্য আবেদন করেছেন ১১৩ জন অনিয়মিত বাংলাদেশি।

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh trade deficit July-August FY25

Trade deficit narrows 2.6% in July-April

The country’s trade deficit narrowed by 2.60 percent in the first ten months of the current fiscal year compared to the same period a year ago, thanks to a rise in export earnings coupled with subdued imports..During the July-April period of fiscal year (FY) 2024-25, the trade gap was $18.

4h ago